✅আমাদের দেশে অনেকেই সামান্য পেটের সমস্যায় গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনে দ্বিধা করেন না। যারা প্রয়োজন ছাড়া দিনের পর দিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন তাদের ভবিষ্যতে আয়রন, ভিটামিন, ম্যাগনেসিয়ামের অভাব দেখা দেবে। এমনকি হাড় ক্ষয়, অল্প আঘাতেই হাড় ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা সেই সঙ্গে শরীরে রোগজীবাণু প্রবেশের সক্ষমতা বেড়ে যাবে। এই অভ্যাস ভবিষ্যতে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
?মানবদেহে পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থেকে অতিরিক্ত অ্যাসিড নিঃসরণের ফলে অ্যাসিডিটি বা গ্যাসের সমস্যা হয়ে থাকে। পাকস্থলীতে যখন অ্যাসিড নিঃসরণের পরিমাণ বেশি হয় তখন তাকে হাইপার অ্যাসিডিটি বলে। পাকস্থলীতে ঘা বা ক্ষত হলে পেপটিক বা গ্যাস্ট্রিক আলসার বলে। খাদ্যাভাস, জীবনাচরণ ও হজম প্রক্রিয়ার অসুবিধার কারণে এই সমস্যা হতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাকে মূলত ডিসপেপসিয়া বলে। সাধারণত পেটে ব্যথা হওয়া, পেটে জ্বালা, পেট ফাঁপা, বুকে জ্বালাপোড়া, খাবারে অরুচি, ঢেঁকুর ওঠা, বদহজম, মলত্যাগে অনিয়ম, অস্থিরতা এসব উপসর্গকে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা মনে করা হয়।
✅পাকস্থলী থেকে প্রতিনিয়ত হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড নিঃসৃত হয়। এই অ্যাসিড খাদ্য হজমে এবং বিভিন্ন ভিটামিন, মিনারেল শোষণে সহায়তা করে। এছাড়া কিছু ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া আছে সেগুলোও ধ্বংস করে।গ্যাস বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় যেসব ওষুধ খাওয়া হয় যেমন- ওমিপ্রাজল, প্যান্টোপ্রাজল, ইসোমিপ্রাজল, রেবিপ্রাজল ইত্যাদি ওষুধ পাকস্থলী থেকে যে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড নিঃসৃত হয় সেটি বন্ধ করে দেয়। এর ফলে আর সেই অ্যাসিড নিঃসৃত হয় না এবং পাকস্থলীতে ক্ষারীয় পরিবেশ তৈরি হয়। এতে করে স্বাভাবিক যে হজম প্রক্রিয়া সেটি ব্যাহত হয়।দিনের পর দিন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিয়মিত গ্যাসের ওষুধ সেবনের ফলে শারীরিক বিভিন্ন জটিলতা ও রোগ হতে পারে।
?দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ গুলো খেলে কি কি সমস্যা হয়ে থাকে আসুন জেনে নেই:
হাইপারগ্যাস্ট্রিনেমিয়া: দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ গ্রহণে হাইপারগ্যাস্ট্রিনেমিয়া হয়ে থাকে। কমপক্ষে ১৫ বছর ধরে যারা এই শ্রেণীর ওষুধ গ্রহণ করে থাকে তাদের এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। হাইপারগ্যাস্ট্রিনেমিয়াতে রোগী ওষুধ বন্ধ করার পর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা আরো ভয়ানক আকার ধারণ করে। এই সমস্যা এড়াতে ডাক্তারের দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের পরে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
হাড় ক্ষয়:স্টাডিতে অ্যাসিড দমন ওষুধ এবং খাদ্য থেকে প্রাপ্ত খনিজ ক্যালসিয়ামের শোষণ হ্রাসের মধ্যে সম্পর্ক লক্ষ্য করা গেছে; ওমেপ্রাজল ওষুধ থেরাপির 14 দিন পরেই ক্যালসিয়াম শোষণ 41% পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। ফলে ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে, তাই প্রয়োজনীয় সময় পর্যন্ত এই ধরনের ওষুধ গ্রহণের সময় অবশ্যই পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে হবে ও ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।
ভিটামিন বি 12 এর অভাব:দীর্ঘমেয়াদী পিপিআই ব্যবহার এবং ভিটামিন বি 12 এর অভাবের মাঝে সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় এবং তা বিশেষ করে বয়স্কদের মধ্যে দেখা যায় কারণ এই শ্রেণীর মানুষের ভিটামিন বি ১২ এর ডেফিসিয়েন্সি বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু একটি সঠিক ও সুষম ডায়েটের মাধ্যমে এই অবস্থা দূর করা সম্ভব। অপুষ্ঠ ওবং বয়স্ক রোগীদের তাই নির্দিষ্ট সময় পর পর ভিটামিন বি ১২ চেক করতে হবে। পাকস্থলীতে আয়রন, ভিটামিন বি১২, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম শোষণ হয়। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খাওয়ার কারণে যেহেতু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায় সেহেতু আয়রন, ভিটামিন বি১২, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামের শোষণ ব্যাহত হয়। আয়রন, ভিটামিন বি১২ এর অভাবে রক্তশূন্যতা হতে পারে । ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড় ক্ষয়, হাড়ে ব্যথা হতে পারে।
কিডনির সমস্যাঃ দীর্ঘদিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের ফলে কিডনির মারাত্মক সমস্যা যেমন- অ্যাকুইট ইন্টারেস্টেসিয়াল নেফ্রাইটিস, অ্যাকুইট কিডনি ইনজুরি, ক্রনিক ইন্টারেস্টেসিয়াল নেফ্রাইটিস, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হতে পারে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়ঃ পাকস্থলী থেকে নিঃসৃত হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। কিন্তু দীর্ঘদিন গ্যাসের ওষুধ খাওয়ার কারণে অপকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস না হয়ে বরং পরিপাকতন্ত্রের ভেতরে চলে যায়। এর ফলে বিভিন্ন ধরণের ইনফেকশন হতে পারে এবং সংক্রামক রোগ তৈরি করে।
গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধঃ ডাক্তারগণ বলেন জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। অতিরিক্ত ঝাল, তেল, মসলাযুক্ত এবং চর্বি জাতীয় খাবার, দুধ, দুধের তৈরি খাবার, শাক পাতা, রেড মিট পরিহার করতে হবে। ফাস্ট ফুড, চা, কফি, ধূমপান, অ্যালাকোহল ও কোমল পানীয় পান থেকে বিরত থাকতে হবে। একবারে বেশি না খেয়ে অল্প পরিমাণে বার বার খেতে হবে, নিয়মিত হাঁটা ও ব্যায়ামের অভ্যাস করতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে।