Blog
কুরবানির তাৎপর্য, বিধান ও করণীয়
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, যেখানে মানুষের প্রতিটি কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়। কুরবানি বা ‘ঈদুল আযহা’ সেই মহান ইবাদতের অংশ, যেখানে আত্মত্যাগ, আনুগত্য ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পায়। কুরবানি পালন করা যা শুধুই একটি উৎসব নয়, বরং আল্লাহর হুকুম পালন এবং আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জনের সুযোগ।

Table of Contents
Toggleচলুন জেনে নিই কুরবানির তাৎপর্য, বিধান ও করণীয় সমূহ
কুরবানির ইতিহাস ও হযরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর ঘটনা
কুরবানির সূচনা হয় হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ)-এর মাধ্যমে। ইব্রাহিম (আঃ) স্বপ্নে আল্লাহর পক্ষ থেকে আদেশ পান যে, তাঁকে তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আঃ) কে কুরবানি করতে হবে। তিনি তাঁর পুত্র ইসমাইল (আঃ)-কে বিষয়টি জানালে, পুত্র বলেছিলেন:
“হে আমার পিতা আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তা করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন।”
[সূরা আস-সাফফাত, 37:102]
যখন ইব্রাহিম (আঃ) জবাই করতে উদ্যত হন, তখন আল্লাহ তা’আলা বলে হে ইবরাহীম! তুমি তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছো! এবং ইসমাইল (আঃ)-এর বদলে একটি পশু দিয়ে দেন।
“হে ইব্রাহিম! তুমি স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করলে… আমি সৎকর্মশীলদের এমনই প্রতিদান দিয়ে থাকি।”
[সূরা আস-সাফফাত, 37:104-105]
এই ঘটনা ছিল আনুগত্য ও ত্যাগের অনন্য দৃষ্টান্ত। সেই স্মৃতিকে স্মরণ করেই মুসলিমরা আল্লাহর আদেশে কুরবানি করে থাকেন।
ইসলামে কুরবানির বিধান ও করনীয়
কুরবানির বিধান:
১. ‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং (পশু) কুরবানি কর।’ [সূরা কাউছার, আয়াত: ২]
২. ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে।’[আহমদ, ইবনু মাজাহ: ৩৫১৬]
কুরবানির তাৎপর্য:
- আত্মত্যাগ: নিজের প্রিয় সম্পদ আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করা
- আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন: কুরআনে আল্লাহ বলেন:
“আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না পশুর গোশত বা রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।”
[সূরা আল-হাজ্জ, 22:37]
- গরিবদের পাশে দাঁড়ানো: সমাজে সাম্য ও সহানুভূতির চর্চা
- সুন্নাহ পালন: রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজ হাতে কুরবানি করেছেন, সাহাবিদের উৎসাহ দিয়েছেন
কোন পশু কুরবানির জন্য গ্রহণযোগ্য এবং কোনটা নয়
গ্রহণযোগ্য পশুর ধরন:
- উট: ৫ বছর পূর্ণ
- গরু/মহিষ: ২ বছর পূর্ণ
- ছাগল/ভেড়া: ১ বছর পূর্ণ (কিন্তু যদি ৬ মাসের ভেড়া বড় সাইজের হয়, সেটিও বৈধ)
অগ্রহণযোগ্য পশু:
ফিকহ ও হাদিস অনুযায়ী, নিচের ত্রুটিযুক্ত পশু কুরবানি বৈধ নয়:
- চোখ অন্ধ (স্পষ্ট দুর্বল)
- মারাত্মক দুর্বল বা রুগ্ন
- ল্যাংড়া (যার পায়ে ভর করে হাঁটতে পারে না)
- কানে, লেজে বা শরীরের বড় অংশে কাটা দাগ
- কানের অধিকাংশ কাটা বা ছেঁড়া
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“চারটি দোষযুক্ত পশু কুরবানি করা যাবে না: (১) স্পষ্ট কানা, (২) অসুস্থ, (৩) পঙ্গু, (৪) হাড়ভাঙা ও মুটিয়ে না ওঠা।”
[তিরমিযি, হাদিস: ১৪৯৭]
কুরবানির সঠিক নিয়ম ও করণীয়
১. নিয়ত করা
- মনে মনে কুরবানির নিয়ত করা ফরজ
২. জবাই করার সময় করণীয়
- পশুকে পানিপান করানো, ভালোভাবে শুইয়ে দেওয়া
- ধারালো ছুরি ব্যবহার করা
- পশুর কষ্ট কমানো (যেমন: চোখ বাঁধা, দ্রুত জবাই)
- জবাই করার সময় বলা:
“বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার”
৩. কুরবানির সময়কাল
- ঈদুল আযহার নামাজের পর থেকে শুরু
- মোট ৩ দিন (১০-১২ জিলহজ)
মাংস বণ্টনের নিয়ম (নিজে, আত্মীয়, গরিব)
- কুরআন বা হাদিসে কুরবানির গোশত তিন ভাগে ভাগ করার সুনির্দিষ্ট নির্দেশ নেই; তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে খেতেন, খাওয়াতেন এবং সংরক্ষণ করতেন—এই আমলের ভিত্তিতে ফুকাহাগণ বলেছেন, তিন ভাগে ভাগ করা উত্তম।
- তবে যারা নিয়মিত মাংস কিনে খেতে পারেন তারা গরিব এবং কুরবানি দিতে না পারা আত্মীয়দের বেশি দিবেন এবং নিজেরা কম রাখবেন, আর যারা নিয়মতি মাংস কিনে খেতে পারেন না তারা নিজেরা, নিজেদের আহাল পরিবারের জন্য বেশি রাখতে পারেন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম:
- গরিবদের দেওয়া অংশ বিক্রি করা যাবে না
- কসাইকে মজুরি হিসেবে মাংস দেওয়া যাবে না (অতিরিক্ত কিছু উপহার দেওয়া যাবে)
- গোশত সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজে রাখা বৈধ, তবে গরিবদের দেওয়া দেরি করা অনুচিত
ইসলামী সৌন্দর্য ও সমাজবদ্ধতা
কুরবানির মাধ্যমে শুধু আল্লাহর হুকুম মানা হয় না, বরং সমাজের সাবাইকে একই আনন্দে সামিল করার সুযোগ তৈরি হয়। ইসলামী আদর্শ অনুযায়ী কুরবানি যেন অহংকার, অপচয় বা লোক দেখানোর মাধ্যমে না হয়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“যে ব্যক্তি খাওয়ায়, সালাম দেয় এবং রাতে যখন মানুষ ঘুমায় তখন নামায পড়ে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।”
[সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (১৩৩৪, ৩২৫১)]
পরিবেশ ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা
কুরবানির পশু জবাইয়ের পর রক্ত, চামড়া, অভ্যন্তরীণ অংশ যেখানে-সেখানে ফেলে না দিয়ে পরিবেশবান্ধব উপায়ে মাটি চাপা দেওয়া বা নির্ধারিত স্থানে ফেলা ইসলামী দায়িত্বের অংশ।
উপসংহার
কুরবানি হলো ত্যাগ, ভালোবাসা ও আল্লাহর হুকুম মানার প্রতীক। আমাদের উচিত এই ঈদে শুধু আনন্দ নয়, বরং ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী কুরবানির যাবতীয় নিয়ম-কানুন মেনে চলা। আল্লাহ আমাদের সকলের কুরবানি কবুল করুন, এবং ত্যাগের এই শিক্ষা আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দিন। আমিন।
কুরবানির ছুটি আরো আনন্দময় করতে বেছে নিন ফিট ফর লাইফের প্রিমিয়াম প্রোডাক্ট
Subscribe Our Newsletter
Related Products

Sohoj Ranna Combo Pack – সহজ রান্না কম্বো প্যাক

Beetroot Powder-বিটরুট পাউডার



Complete Sorbot Combo Package- পরিপূর্ণ শরবত প্যাকেজ


Herbs For Cold – সিজনাল ঠাণ্ডা-কাশির – জ্বরের প্রাকৃতিক সমাধান

Egyptian Medjool Dates-মেডজুল খেজুর
Related Posts
Latest Product
-
Pure Delight Combo Pack - পিওর ডিলাইট কম্বো প্যাক
2,850.00৳Original price was: 2,850.00৳.2,420.00৳Current price is: 2,420.00৳. -
Digestive Health Combo - ডাইজেস্টিভ হেলথ কম্বো
1,950.00৳Original price was: 1,950.00৳.1,649.00৳Current price is: 1,649.00৳. -
Eid Anando Combo Pack - ঈদ আনন্দ কম্বো প্যাক
3,320.00৳Original price was: 3,320.00৳.2,820.00৳Current price is: 2,820.00৳. -
Sohoj Ranna Combo Pack - সহজ রান্না কম্বো প্যাক
2,940.00৳Original price was: 2,940.00৳.2,499.00৳Current price is: 2,499.00৳. -
Brown Sugar - আখের লাল চিনি 180.00৳ – 850.00৳


Talbina-তালবিনা রাসুল (সঃ) এর সুন্নতি খাবার





Talbina-তালবিনা (Half Combo )


