ব্রন সমস্যার কারন, লক্ষণ ও প্রতিকারের সহজ উপায়

SHARE

Table of Contents

ব্রণ কী?

ব্রণ (Acne) হল ত্বকের একটি সাধারণ অবস্থা, যা ত্বকের সিবেশিয়াস গ্রন্থির প্রদাহের কারণে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি মুখে হলেও পিঠ, বুক এবং কাঁধে ও ব্রণ দেখা যায়, কারণ এই অংশগুলোতে সিবেশিয়াস গ্রন্থি বেশি থাকে।

ব্রন সমস্যার কারন, লক্ষণ ও প্রতিকারের সহজ উপায়
ব্রন সমস্যার কারন, লক্ষণ ও প্রতিকারের সহজ উপায়

ব্রণ হওয়ার কারণসমূহ :

১. হরমোনের পরিবর্তন:

টিনেজ বা বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। এ সময় এন্ড্রোজেন হরমোন বেড়ে যায়, যা ত্বকের তৈল গ্রন্থিকে সক্রিয় করে তোলে।

 

২. পরিবারগত বা জিনগত প্রভাব:

পরিবারের কেউ যদি ব্রণ সমস্যায় ভোগে, তবে পরবর্তী প্রজন্মেও এই সমস্যা হতে পারে।

 

৩. ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ:

ত্বকে প্রোপিওনিব্যাকটেরিয়াম (Propionibacterium acnes) নামে একটি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে ব্রণ সৃষ্টি হয়।

 

৪. অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বক:

যারা স্বাভাবিকভাবে তৈলাক্ত ত্বক নিয়ে জন্মেছে, তাদের ব্রণের ঝুঁকি বেশি থাকে।

 

৫. খাবারের প্রভাব:

অতিরিক্ত চিনি, দুগ্ধজাত খাবার এবং জাঙ্ক ফুড ব্রণ বাড়িয়ে দিতে পারে।

 

৬. চাপ ও মানসিক চাপ:

মানসিক চাপ ব্রণের অন্যতম কারণ। চাপের কারণে হরমোনের পরিবর্তন হয়, যা ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে।

 

ব্রণের লক্ষণসমূহ

১. ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডস:

ব্ল্যাকহেডস হল খোলা কমেডোন এবং হোয়াইটহেডস হল বন্ধ কমেডোন, যা ত্বকের মধ্যে তৈল ও মৃত কোষ জমে সৃষ্টি হয়।

 

২. পুঁজযুক্ত ফুসকুড়ি:

এগুলো ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে সৃষ্ট হয়, ত্বকে ছোট ছোট ফুসকুড়ির আকারে দেখা দেয়।

 

৩. নোডুলস ও সিস্ট:

নোডুলস ও সিস্ট হলো কঠিন, বেদনাদায়ক এবং বড় আকারের ব্রণ, যা ত্বকের গভীরে জমে।

 

৪. লালচে বা ফুলে যাওয়া ত্বক:

ব্রণের অংশটি লাল হয়ে ফুলে যায় এবং স্পর্শ করলে ব্যথা অনুভূত হয়।

 

ব্রণের সমস্যা প্রতিকারের সহজ উপায় :

ব্রণ সমস্যার প্রতিকার হিসেবে সহজ ও প্রাকৃতিক উপায়গুলো অনেকেই পছন্দ করেন। কারণ এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম এবং বাড়িতে সহজেই ব্যবহার করা যায়। এখানে ব্রণের সহজ প্রতিকারগুলোর বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো:

 

১. টি ট্রি অয়েল (Tea Tree Oil)

টি ট্রি অয়েলে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী। যা ব্রণের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে কার্যকর।

ব্যবহারবিধি:

কটন বলে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল নিয়ে ব্রণের স্থানে লাগান।

দিনে একবার বা দুইবার এটি ব্যবহার করুন।

সতর্কতা: সরাসরি ত্বকে লাগানোর আগে টি ট্রি অয়েলটি কিছুটা পানি বা নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে নিন।

 

২. অ্যালোভেরা জেল (Aloe Vera Gel)

অ্যালোভেরা জেল ত্বকের জন্য একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার এবং এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

ব্যবহারবিধি:

অ্যালোভেরা পাতা থেকে তাজা জেল বের করে ব্রণের জায়গায় লাগান।

দিনে দুইবার ব্যবহার করুন।

 

৩. মধু ও দারুচিনি প্যাক

মধুতে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং দারুচিনিতে রয়েছে প্রদাহরোধী উপাদান, যা একত্রে ব্রণ নিরাময়ে সহায়ক।

ব্যবহারবিধি:

১ চা চামচ মধুর সাথে আধা চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন।

ব্রণের স্থানে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন।

 

৪. লেবুর রস ও গোলাপ জল

লেবুতে রয়েছে সাইট্রিক অ্যাসিড, যা ত্বকের অতিরিক্ত তৈল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। গোলাপ জল ত্বককে ঠান্ডা রাখে।

ব্যবহারবিধি:

সমপরিমাণ লেবুর রস ও গোলাপ জল মিশিয়ে নিন।

কটন বলে নিয়ে ত্বকে লাগান এবং ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।

এটি সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।

 

৫. বেসন ও হলুদের প্যাক

বেসন ত্বকের তেল শোষণ করে এবং হলুদে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ, যা ব্রণ কমাতে কার্যকর।

ব্যবহারবিধি:

২ চামচ বেসন, আধা চামচ হলুদ এবং সামান্য পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।

ত্বকে ১৫-২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

সপ্তাহে ১-২ বার ব্যবহার করুন।

 

৬. বরফ থেরাপি

বরফের ঠান্ডা ত্বকের রক্তপ্রবাহ কমিয়ে প্রদাহ এবং ব্রণের ফোলাভাব কমাতে সহায়তা করে।

ব্যবহারবিধি:

একটি পরিষ্কার কাপড়ের মধ্যে বরফ রেখে ব্রণের জায়গায় ২-৩ মিনিট ধরে রাখুন।

দিনে ২-৩ বার করতে পারেন।

 

৭. গ্রিন টি টোনার

গ্রিন টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানে সমৃদ্ধ, যা ব্রণ প্রতিরোধে সহায়ক।

ব্যবহারবিধি:

গ্রিন টি বানিয়ে ঠান্ডা করে নিন।

কটন বলে গ্রিন টি নিয়ে ব্রণের স্থানে আলতো করে লাগান।

এটি দিনে একবার ব্যবহার করতে পারেন।

 

৮. ওটমিল এবং মধুর মাস্ক

ওটমিলে রয়েছে প্রাকৃতিক ক্লিঞ্জিং উপাদান, যা ত্বকের ময়লা এবং তৈল দূর করে। মধু অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং ময়েশ্চারাইজিং গুণে সমৃদ্ধ।

ব্যবহারবিধি:

ওটমিল এবং মধু মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।

ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।

সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।

 

৯. শসার রস

শসা ত্বককে আর্দ্র করে এবং ঠান্ডা রাখে, যা ব্রণ কমাতে সাহায্য করে।

ব্যবহারবিধি:

শসার রস বের করে ত্বকে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন।

প্রতিদিন এটি ব্যবহার করতে পারেন।

 

১০. পর্যাপ্ত পানি পান

পানি শরীরের টক্সিন দূর করে এবং ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে, যা ব্রণ প্রতিরোধে সহায়ক।

পরামর্শ:

প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।

এগুলো ছাড়াও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা, সঠিকভাবে ত্বক পরিষ্কার রাখা এবং নিয়মিত ঘুমানো ব্রণ প্রতিরোধে সহায়ক।

 

ব্রণের চিকিৎসা

১. অ্যান্টিবায়োটিক থেরাপি:

অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কমানো যায়।

 

২. রেটিনয়েড:

রেটিনয়েড ওষুধ যেমন অ্যাডাপালিন, ত্বকের কোষকে পুনরুজ্জীবিত করে এবং ত্বকের নতুন কোষ তৈরি করতে সাহায্য করে।

 

৩. অ্যাসিডিক প্রোডাক্টস:

সালিসিলিক অ্যাসিড এবং গ্লাইকোলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ প্রোডাক্টস ব্রণ দূর করতে সহায়তা করে।

 

৪. হরমোনাল থেরাপি:

মহিলাদের ক্ষেত্রে হরমোন নিয়ন্ত্রণের জন্য কিছু বিশেষ ওষুধ ব্যবহৃত হয়।

 

জীবনযাত্রায় পরিবর্তন

ব্রণের সমস্যা দূর করার জন্য আমাদের জীবনযাত্রায় বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন আনতে হয়। যেমনঃ

১. পরিষ্কার ত্বক রুটিন: ত্বক নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। যাতে ময়লা, তৈল ও মৃত কোষ জমে না থাকে।

২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: বেশি করে শাক-সবজি, ফলমূল খাওয়া এবং চিনি, দুধ ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা।

৩. পর্যাপ্ত পানি পান: পানি শরীরের টক্সিন দূর করে এবং ত্বককে আর্দ্র রাখে।

৪. ব্যায়াম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত ব্যায়াম ও মেডিটেশন স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।

 

শরীরের ব্রণ সমস্যা সহজে সমাধানযোগ্য হলেও এর জন্য ধৈর্য এবং নিয়মিত যত্ন প্রয়োজন। আজকের এই ব্লগটি পড়ে যদি আপনার কাছে ভালো লাগে বা আপনি উপকৃত হন তাহলে বলবো FIT FOR LIFE কে ফলো করুন এবং আপনার আপনজনের কাছে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

Subscribe Our Newsletter

Related Products

Related Posts

SHARE

Latest Product

Latest Post