✅ যবের ছাতু (Barley Powder) প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালিদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং স্বাস্থ্যকর খাবার। যব, যা ইংরেজিতে বার্লি (Barley) নামে পরিচিত, হাজার বছর ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি মূলত গমের মতো দেখতে হলেও আকারে কিছুটা ছোট এবং পুষ্টিগুণে অনেক সমৃদ্ধ।। আধুনিক সময়ে যবের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমে গেলেও, এর পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা অমূল্য। বিশেষ করে গ্রামের মানুষদের কাছে যবের ছাতু এখনো একটি পরিচিত খাবার।
যবের ছাতুর পুষ্টিগুণ
যবের ছাতু প্রচুর পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, এবং খনিজ পদার্থের সমন্বয় , যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রতিদিনের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করতে যবের ছাতু অনেক কার্যকরী। প্রধান পুষ্টি উপাদান:
- প্রোটিন
- ফাইবার
- ভিটামিন বি
- ম্যাগনেসিয়াম
- আয়রন
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
যবের ছাতুর উপকারিতা ঃ
যবের ছাতুর পুষ্টিগুণের কারণে এটি নিয়মিত খেলে শরীরের উপর বহুমুখী স্বাস্থ্য উপকারিতা দেখা যায়। এখানে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
1. হজমশক্তি উন্নত করে
যবের ছাতুতে উচ্চমাত্রার ফাইবার রয়েছে, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত যবের ছাতু খেলে পেটের সমস্যা যেমন অ্যাসিডিটি বা বদহজমের সমস্যাও কমে যায়। ফাইবার হজমতন্ত্রের কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।
2.আইবিএস (IBS) বা হজমজনিত সমস্যা
আইবিএস (Irritable Bowel Syndrome) বা পেটের হজম সংক্রান্ত সমস্যায় যবের ছাতু অত্যন্ত কার্যকর। যবের মধ্যে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার অন্ত্রের প্রদাহ কমায় এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। তাই যারা আইবিএস-এর উপসর্গ, যেমন ফোলাভাব, পেটব্যথা, এবং অতিরিক্ত গ্যাস সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য যবের ছাতু একটি প্রাকৃতিক সমাধান।
3.শরীর ঠাণ্ডা রাখে
বার্লি বা যবের ছাতুতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকে। এছাড়া এতে খাদ্যআঁশের পাশাপাশি বিভিন্ন খনিজ ও ভিটামিন উপাদান থাকে যা শরীর এবং পেট দুটোই ঠান্ডা রাখে।
4. শক্তি বৃদ্ধি করে
যবের ছাতুতে থাকা প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক। যারা শারীরিক পরিশ্রম করেন বা কর্মব্যস্ত জীবনযাপন করেন, তাদের জন্য এটি একটি উৎকৃষ্ট খাদ্য। এটি শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে এবং শরীরকে দীর্ঘ সময় ধরে কর্মক্ষম রাখে।
5. রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করে
যবের ছাতুতে আয়রনের উপস্থিতি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে নারীদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী, কারণ তারা প্রায়ই আয়রনের ঘাটতিজনিত সমস্যায় ভোগেন।
6. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
যবের ছাতুতে থাকা ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। নিয়মিত যবের ছাতু খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম হৃদপিণ্ডের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
7. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
যবের ছাতুতে থাকা ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে রক্ষা করে। নিয়মিত যবের ছাতু খেলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয় এবং সর্দি-কাশি বা সাধারণ ফ্লুর মত রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
8. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
যবের ছাতু রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হতে পারে। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম, যার ফলে এটি ধীরে ধীরে রক্তে শর্করা ছাড়ে এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি একটি স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে বিবেচিত হয়।
9. ওজন কমাতে সহায়ক
যবের ছাতু খাওয়া ওজন কমানোর একটি ভালো উপায় হতে পারে। ফাইবার সমৃদ্ধ এই খাবারটি খাওয়ার পর দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে, যার ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। এটি শরীরে কম ক্যালোরি সরবরাহ করে এবং ফ্যাট জমার প্রবণতা কমায়। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
যবের ছাতু খাওয়ার নিয়ম
এটা অত্যান্ত পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার হয়ার কারণে এবং এতে উচ্চমানের ফাইবার থাকার কারণে ১ বছরের বাচ্চা থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকল বয়সের মানুষ খেতে পারবেন এবং এটা খুব সহজেই হজম হয় । যবের ছাতু খাওয়ার প্রচলিত পদ্ধতি হলো এটি পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া। একটি পাত্রে পরিমাণমতো যবের ছাতু ২০ থেকে ৩০ গ্রাম নিয়ে তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি মেশাতে হবে, যা আপনার খাওয়ার পছন্দের উপর নির্ভর করবে, আপনি চাইলে বেশি তরল বা একটু শক্ত রাখতে পারেন। এরপর স্বাদ অনুযায়ী মধু নিয়ে সুন্দর করে কিছুক্ষণ চামচ দিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে নিয়ে আপনি খেতে পারবেন, আপনি চাইলে পানির পরিবর্তে দুধের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন অর্থাৎ যে ভাবে তালবিনা বানিয়ে খাওয়া হয়, কারণ তালবিনা এর প্রধান উপকরণ হচ্ছে যবের ছাতু। সকালের নাস্তা হিসেবে যবের ছাতু অত্যন্ত উপকারী, কারণ এতে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে, যা ক্ষুধার অনুভূতি কমায়। এছাড়াও দিনের যে কোন সময় আপনি যবের ছাতু বানিয়ে খেতে পারবেন।
☎️ বিস্তারিত জানতে আমাদের পেজে মেসেজ করুন অথবা ফোন করুনঃ m.me/fitforlifebd
? 09639-426742
Whatsapp ?
+8801717426742
+8801620858385