Chia Seed – চিয়া সিড যা সালভিয়া হিসপানিকা নামক মিন্ট প্রজাতির উদ্ভিদের বীজ, মূলত মধ্য আমেরিকা ও মেক্সিকোর মরুভূমি অঞ্চলে জন্মায়। এটি প্রাচীন অ্যাজটেক জাতির খাদ্য তালিকায় অন্যতম স্থান দখল করেছিল। দেখতে কালো রঙের এবং ছোট আকারের চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তিলের মতো। তবে এর পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা অসাধারণ। চিয়া সিড প্রোটিন, ফাইবার, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সাহায্য করে।
চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ:
প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সিডে রয়েছে:
- ক্যালরি: ৪৮৬
- প্রোটিন: ১৬ গ্রাম
- ফাইবার: ৩৪ গ্রাম
- ফ্যাট: ৩০.৭ গ্রাম (এর মধ্যে ওমেগা-৩: ১৭.৮ গ্রাম)
Chia Seed – চিয়া সিডএর উপকারিতা
১. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস:
চিয়া সিড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রাকৃতিক উৎস, যা হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। এটি খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে। ওমেগা-৩ স্নায়ুতন্ত্রকে সুরক্ষা দেয় এবং মস্তিষ্কের বিকাশে ভূমিকা রাখে।
২. ফাইবার সমৃদ্ধ:
চিয়া সিডে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার থাকে, যা হজমশক্তি উন্নত করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং অন্ত্রের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফাইবার ওজন কমাতে সাহায্য করে, কারণ এটি ক্ষুধা কমায় এবং খাবার পরিপাক প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়, ফলে পেট বেশি সময় ভরতি থাকে।
৩. প্রোটিনের প্রাকৃতিক উৎস:
চিয়া সিডে উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন থাকে, যা পেশি গঠনে সহায়ক। এটি শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীরের কোষ পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
৪. ওজন কমাতে সাহায্য করে:
চিয়া সিড শরীরের মেটাবলিজম উন্নত করে এবং পেট দীর্ঘ সময় ভরতি রাখে। এর ফলে অতিরিক্ত খাবারের চাহিদা কমে, যা ওজন কমাতে সহায়ক। এছাড়া এটি ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। কেননা মাত্র ২ চামচ চিয়া সিডে যে পরিমাণ ফাইবার থাকে, তা দিনের প্রয়োজনের প্রায় অর্ধেক। সকালের নাশতায় ২ চা–চামচ চিয়া সিড খেলে তা পরবর্তী ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা আপনার পেট ভরা থাকার অনুভূতি দেবে। তা ছাড়া ১ চা–চামচ চিয়া সিড এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তা ১ গ্লাস পানিতে ১ চা–চামচ লেবুর রস ও ১ চা–চামচ মধুর সঙ্গে সকালে খালি পেটে খেলে মেদ পোড়াতেও সাহায্য করবে।
৫. রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে:
চিয়া সিড রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে একটি প্রাকৃতিক এবং কার্যকরী খাদ্য উপাদান হিসেবে পরিচিত। এর উচ্চ ফাইবার কন্টেন্ট শরীরে গ্লুকোজের শোষণকে ধীর করে, ফলে রক্তের গ্লুকোজ স্তর হঠাৎ বাড়ে না। এছাড়াও, চিয়া সিড ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। নিয়মিত চিয়া সিড গ্রহণের ফলে শরীরের রক্তে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে থাকে, এবং এটি হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
৬. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ:
চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি র্যাডিক্যাল কমিয়ে বয়সজনিত ছাপ কমায় এবং শরীরকে বিষাক্ত পদার্থ থেকে রক্ষা করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের সজীবতা বজায় রাখতে সহায়ক।
৭. হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে:
চিয়া সিডে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস রয়েছে, যা হাড়ের গঠন শক্তিশালী করতে সহায়ক।মাত্র ১ আউন্স চিয়া সিডে ১৮০ মাইক্রোগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। চিয়া সিডের ম্যাগনেশিয়াম আর ফসফরাসও হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই কার্যকরী। হাড় ছাড়াও অপটিমাল মাসল ও স্নায়ু ভালো রাখে চিয়া সিড। নিয়মিত চিয়া সিড গ্রহণ করলে হাড়ের ক্ষয়রোধ করা যায় এবং এটি অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
৮. শক্তির উৎস:
চিয়া সিড শক্তির একটি আদর্শ উৎস হিসেবে পরিচিত, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। এতে উপস্থিত উচ্চমানের প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, এবং ফাইবার শরীরের শক্তির মাত্রা বাড়াতে সহায়ক। বিশেষ করে, চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানগুলি শরীরের সেলের কার্যক্রমে সহায়তা করে এবং দীর্ঘমেয়াদী শক্তি প্রদান করে। এটি শরীরের স্থায়িত্ব বাড়ায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি অনুভব করতে সহায়তা করে।
৯. ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে:
চিয়া সিডের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বকের নমনীয়তা বাড়ায় এবং বার্ধক্যের ছাপ কমায়। এটি ত্বককে গভীর থেকে পুষ্টি যোগায় এবং চুলকানি ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
১০. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে:
চিয়া সিডের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে যে চিয়া সিডে উপস্থিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদানগুলি রক্তনালীতে খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং রক্তপ্রবাহকে স্বাভাবিক রাখে।
Chia Seed – চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম:
চিয়া সিডের স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে সঠিকভাবে খাওয়া ও নিয়ম মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কিছু সহজ নিয়ম উল্লেখ করা হলো:
১. প্রতিদিন সকালে, সন্ধ্যায় বা দুবার খাওয়ার মাঝখানে চিয়া সিড খেতে পারেন। এটি আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় সহজেই অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
২. বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন ১০০ গ্রাম পর্যন্ত চিয়া সিড খাওয়া যেতে পারে। তবে, আপনি দিনে অন্তত ২ চামচ (১০ গ্রাম) খেলে মিলবে এর আশ্চর্য উপকার। এর ফলে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সহজেই পাওয়া যাবে।
৩.সকালে খালি পেটে পানির সাথে গুলিয়ে খেতে পারেন।সারা রাত ভিজিয়ে রেখে অথবা এক ঘণ্টা আগে পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে খাওয়া যেতে পারে।স্মুদি, ফলের রস, ওটস বা সালাদের সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে খাওয়ার জন্য একটি চমৎকার উপায়। এটি খাদ্যের স্বাদ বাড়ায় এবং পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করে।
৪. চিয়া সিডের স্বাদ খুবই হালকা, তাই এটি আপনার পছন্দের খাবার বা পানীয়ের সাথে সহজেই মিশিয়ে খেতে পারবেন।
☎️ বিস্তারিত জানতে আমাদের পেজে মেসেজ করুন অথবা ফোন করুনঃ m.me/fitforlifebd
☎️Hotline:09639-426742
Whatsapp ?
+8801717426742
+8801620858385