চিয়া সিড কী, চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতা

চিয়া সিড বর্তমানে সারাবিশ্বে খুবই জনপ্রিয় এবং পরিচিত একটি সুপারফুড। এর রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য উপকারিতা। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় চিয়াসিড রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের ব্লগে আমরা চিয়াসিডের বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান এবং এর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

চিয়া সিড কী, চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতা

চিয়া সিড কী, চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতা

চিয়া সিড কি?

প্রাকৃতিক সুপারফুড হিসেবে চিয়া সিড সারাবিশ্বে খুব পরিচিত। চিয়া সিড এক ধরনের ক্ষুদ্র আকারের বীজ যা সালভিয়া হিসপানিকা নামক উদ্ভিদ থেকে উৎপাদিত হয়। সালভিয়া হিসপানিকা একটি ল্যামিয়াসি পরিবারের উদ্ভিদ যা মূলত মেক্সিকো এবং গৌটেমালায় উৎপন্ন হয়। এটি খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ সালের আশেপাশে অ্যাজটেক এবং মায়া সভ্যতায় জনপ্রিয় ছিল। তারা এই বীজকে শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করত। তাই এর নামকরণ হয় “চিয়া” যা মায়া ভাষায় “শক্তি” শব্দের অর্থ বহন করে। চিয়া সিড দেখতে ছোট ও ওভাল আকৃতির হয়। এটি কালো, সাদা এবং ধূসর রঙের হতে পারে। বর্তমানে এটি একটি জনপ্রিয় সুপারফুড হিসেবে সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

 

চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ:

চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, বিভিন্ন ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ থাকে। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শক্তি উৎপাদনের জন্য বিশেষ ভাবে উপকারী।

১. ফাইবার:

চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে। যা পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক। তাই ফাইবার এর চাহিদা পূরন করতে চিয়া সিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২. প্রোটিন:

চিয়া সিডে অধিক পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা বিশেষ করে নিরামিষভোজীদের জন্য প্রোটিনের উৎস হিসেবে উপযোগী। তাই যারা প্রাকৃতিক উপায়ে প্রোটিন সংগ্রহ করতে চান তারা চিয়া সিড ব্যবহার করতে পারবেন।

৩. ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড:

চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। আর ওমেগা-৩ শরীরের জন্য  খুবই প্রয়োজনীয়।

৪. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট:

চিয়া সিড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি র‍্যাডিকেল থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। তাই আমরা সকলে চিয়া সিড ব্যবহার করতে পারি।

৫. ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ:

এতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম ও জিঙ্ক রয়েছে। যা হাড় ও দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। চিয়া সিড দিয়ে আমরা শরীরের ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের ঘাটতি পূরণ করতে পারবো।

 

চিয়া সিডের স্বাস্থ্য উপকারিতা:

চিয়া সিডে থাকা পুষ্টি উপাদানগুলো আমাদের শরীরকে বিভিন্নভাবে উপকৃত করে। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা নিম্নরূপ :

১. ওজন নিয়ন্ত্রণ:

চিয়া সিডে প্রচুর ফাইবার থাকার কারণে এটি খেলে পেট ভরাট হয় এবং দীর্ঘ সময় ক্ষুধা লাগে না। ফলে শরীরে সহজে দুর্বলতা আসেনা। আর দীর্ঘ ক্ষণ না খেয়ে থাকা ওজন নিয়ন্ত্রণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  ফলে এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

২. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। যাদের হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের জন্য চিয়া সিড খুবই প্রয়োজনীয়।

৩. রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণ:

চিয়া সিডের ফাইবার এবং প্রোটিন রক্তে গ্লুকোজের স্তর নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। তাই ডায়াবেটিস রোগের জন্য চিয়া সিড একটি আদর্শ উপাদান হিসেবে বিবেচিত।

৪. হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা:

চিয়া সিডে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস থাকার কারণে এটি হাড় ও দাঁতের গঠন এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক। ফলে হাড় ক্ষয় রোধ হয় এবং হাড়ের ব্যথা নিরাময় করতে ও সহায়ক ভূমিকা রাখে।

৫. পাচনতন্ত্রের সুরক্ষা:

চিয়া সিডের ফাইবার পাচনতন্ত্রকে সুস্থ রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। হজমপ্রক্রিয়াকে ভালো রাখে। পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

৬. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপস্থিতি:

চিয়া সিডে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপস্থিতি থাকায় এটি ত্বককে ফ্রি র‍্যাডিকেল দ্বারা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং তারুন্য ধরে রাখে। ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃন থাকে।

 

চিয়া সিড ব্যবহারের বিভিন্ন উপায়:

চিয়া সিড পানি, দুধ বা জুসে ভিজিয়ে খাবারের সঙ্গে খাওয়া যায়। এটি স্যালাড, স্মুদি, ওটমিল বা দইয়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

 

পরিশেষে বলা যায় যে, চিয়া সিড একটি ছোট ওভাল আকৃতির বীজ যা অত্যন্ত পুষ্টিকর। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এই উপাদানগুলো স্বাস্থ্যকর ওজন নিয়ন্ত্রণ, হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো, রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণ, হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা, পাচনতন্ত্রের সুরক্ষা এবং ত্বকের সুরক্ষায় সহায়তা করে।

চিয়া সিড স্যালাড, স্মুদি, ওটমিল, দই বা পানির সাথে ভিজিয়ে খাওয়া যায়, যা খাবারে পুষ্টির মান বাড়ায় এবং শক্তি যোগায়। সুতরাং আমরা প্রতিদিনের খাবারে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় চিয়া সিড ব্যবহার করতে পারি। আজকের ব্লগ যদি আপনার কাছে ভালো লাগে বা আপনি এর থেকে উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই বলবো FIT FOR LIFE কে ফলো করুন এবং আপনার আপনজনের কাছে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।

Related Posts

ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ ও রিভার্স করার বিজ্ঞানসম্মত উপায়

Fatty Liver রিভার্স করার সায়েন্টিফিক ব্যাখ্যা:ফ্যাটি লিভার হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে, যা দীর্ঘমেয়াদে সিরোসিস বা

Read More »

অগ্ন্যাশয়ের সমস্যার ৭টি লক্ষণ

আমাদের শরীরে অগ্ন্যাশয় (প্যানক্রিয়াস) একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।মূলত আমাদের শরীরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। হজম প্রক্রিয়ার জন্য এনজাইম নিঃস্বরণ এবং

Read More »
Shopping cart
Sign in

No account yet?

Start typing to see products you are looking for.
Index
Shop
0 Wishlist
0 items Cart
My account