অতিরিক্ত ওজন শুধু আমাদের শারীরিক নানা জটিলতার কারণ ই নয়, সামাজিক ভাবে অনেক বিব্রতকরও বটে। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। স্থূল কিংবা ওজন একটু বেশি হলেই মেয়েদের শুনতে হয় বিভিন্ন ধরনের কথা। ওজন কমানোর জন্য মেয়েরা প্রায়ই খাবার খাওয়া কমিয়ে দেয় কিংবা ফাস্টিং করে। এর বাইরেও অনেকে অনেক উপায় অবলম্বন করে থাকে। কিন্তু কি ধরনের খাবার ওজন কমাতে সহায়তা করে এই ব্যাপারে বেশিরভাগ মেয়েই উদাসীন কিংবা যথেষ্ট জ্ঞান রাখে না। এতো এতো খাবার এর ভীড়ে কোনটা খাবো আর কোনটা খাবো না, কোনটা ওজন বাড়াবে আর কোনটা ওজন কমাবে, তা নিয়েও মনের মধ্যে চলতে থাকে দ্বিধাদ্বন্দ্ব।
আজকের এই ব্লগে এমন কিছু খাবার এবং পানীয় নিয়ে আলোচনা করা হবে যা মেয়েদের খাদ্যের চাহিদা পুরোপুরি পূরণ করে ও ওজন কমাতে সহায়ক।
ওজন কমাতে সহায়ক কিছু খাবার
১) সবুজ শাকসবজি
পালংশাক, ব্রকলি, মেথি সহ বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাকসবজি তে ক্যালোরি এবং ফ্যাটের পরিমাণ অনেক কম। অন্যদিকে এগুলো ফাইবার সমৃদ্ধ। এসব খাবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে, পাশাপাশি হজমশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ফলে ওজন কমতে শুরু করে।
২) ওটস
ওটস প্রচুর ফাইবার ও প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখতে পারে। এছাড়াও ওটস এ রয়েছে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স, যার মাধ্যমে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখে এবং ক্ষুধা কমায়। প্রতিদিন সকালের নাস্তায় ওটস খাওয়া ওজন কমানোর ক্ষেত্রে প্রাথমিক পদক্ষেপ হতে পারে।
৩) চিয়া বীজ
চিয়া বীজে প্রচুর ফাইবার এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা হজমে সহায়ক এবং ক্ষুধা কমায়। পানির সাথে মিশিয়ে চিয়া বীজ খেলে তা ফুলে ওঠে, ফলে লম্বা সময় পেট ভরা থাকে। নতুন করে খাওয়া বা বেশি ক্যালোরি গ্রহনের প্রবনতা কমে যায়। যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৪) গাজর
সবুজ শাকসবজির বাইরে গাজর এমন একটি সবজি যা কম ক্যালোরিযুক্ত এবং ওজন কমাতে কার্যকরী। গাজরে বিটা ক্যারোটিন এবং ফাইবার এর পরিমাণ বেশি। বিভিন্ন উপায়ে গাজর আপনার ডায়েট এ রাখতে পারেন। গাজরের রস কিংবা সালাদ বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি পিত্ত নি:সরণে সাহায্য করে ফলে চর্বি কাটে।
৫) ফুলকপি
শীতকালের সহজপ্রাপ্য একটি সবজি হলো ফুলকপি। ফুলকপি তে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে। এক কাপ ফুলকপি তে মাত্র ২৫ গ্রাম ক্যালোরি বিদ্যমান। তাই ভাত এবং আটার মতো উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবারের বেশ ভালো বিকল্প হতে পারে ফুলকপি। যেসব মেয়েদের বয়স একটু বেশি, তারা এটি খেতে পারেন।
৬) মুরগির মাংস (চর্বিমুক্ত)
মুরগির মাংসের চর্বিমুক্ত অংশে প্রোটিন বেশি এবং ফ্যাট থাকে অনেক কম। মুরগির মাংস কম ক্যালোরিতে বেশি পুষ্টি সরবরাহ করে। এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। ফলে ওজন কমতে শুরু করে।
৭) মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলুতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার এবং পটাসিয়াম, যা ওজন কমাতে সহায়ক। এটি লম্বা সময়ের জন্য ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং মিষ্টি আলুতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এর পরিমাণ অনেক কম থাকে। আর তাই এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৮) তাজা ফল
বেরি, আপেল, পেয়ারা, কমলা ইত্যাদি তাজা ফল ফাইবার এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ। এগুলো প্রাকৃতিক চিনি সরবরাহ করে, সরাসরি চিনির চাহিদা পূরণ করে। যা ক্ষুধা কমাতে সহায়ক। এই ফলগুলোতে ক্যালোরি তুলনামুলক কম থাকায় এগুলো ওজন কমাতে কার্যকর।
৯) লাল চাল
শরীরের কার্বোহাইড্রেড, ফ্যাট এবং শর্করার পরিমান নিয়ন্ত্রণে লাল চাল খুবই কার্যকরী। এছাড়াও লাল চাল এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। এতে থাকা ফাইবার এবং প্রোটিন ওজন কমানোর পাশাপাশি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
১০) মটরশুঁটি ও ডাল
মটরশুটি, মুসুর ডাল, মুগ ডাল এবং ছোলায় প্রোটিন, ফাইবার এবং খনিজ পদার্থ থাকে। এগুলো ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা রাখে, ফলে ক্যালোরি গ্রহণ কম হয়। ডালের প্রোটিন পেশী গঠনে সহায়তা করে, যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১১) শসা
শসার প্রায় ৮৫ শতাংশই পানি দিয়ে গঠিত। পরিমাণে বেশি পানি এবং ফাইবার থাকায় ওজন কমানোর জন্য দারুণ একটি খাবার এটি। খাবারে বিদ্যমান ক্ষতিকারক টক্সিন অপসারণ করতেও শসার ভূমিকা রয়েছে। সালাদ হিসেবে খাবারে যোগ করলে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ কমানো যায়।
কিছু পানীয় যা মেয়েদের ওজন কমাতে কার্যকরী
১) গরম পানি ও লেবুর রস
ওজন কমাতে দারুণ কার্যকরী গরম পানি ও লেবুর রস। সকালে খালি পেটে গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে তা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় এর পাশাপাশি শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায়। এতে শরীরে প্রাকৃতিকভাবে ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া শুরু হয়।
২) গ্রিন টি
গ্রিন টি তে রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ক্যাটেচিন, যা মেটাবলিজম বাড়াতে সহায়তা করে এবং দ্রুত ক্যালোরি পোড়ায়। প্রতিদিন ২-৩ কাপ গ্রিন টি পান করলে ওজন দ্রুত কমানো সম্ভব।
৩) ব্ল্যাক কফি
ব্ল্যাক কফি তে রয়েছে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, যা ওজন কমাতে সহায়ক। এটি শরীরে গ্লুকোজ এবং ফ্ল্যাট কোষ গঠনে বাধা দেয়। এছাড়া কফি তে থাকা ক্যাফেইন কার্যকরীভাবে ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে।
৪) আদা চা
আদায় থার্মোজেনিক উপাদান থাকে, যা শরীরের ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া গতিশীল করে। আদা চা হজমশক্তি বাড়ায় এবং ওজন কমাতে সহায়ক।
৫) অ্যালোভেরা রস
খাওয়ার ২০ মিনিট আগে এক চামচ অ্যালোভেরা রস খেলে হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে দেয়। এটি শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে যা শরীরের জমে থাকা ফ্যাট খুব দ্রুত বার্ণ করে।
৬) দারুচিনি ও মধুর পানি
মধু আমাদের শরীরে ফ্যাট বার্ণিং হরমোন উৎপাদন করে, যা শরীরের অতিরিক্ত মেদ দূর করে। এছাড়াও দারুচিনিতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ। দারুচিনি ও মধু মিশ্রিত গরম পানি প্রতিদিন পান করলে শরীরের মেটাবলিজম বাড়ে এবং ওজন কমে।
৭) পুদিনা ও শশার পানি
পুদিনা এবং শশার মিশ্রণে তৈরি ডিটক্স পানি শরীরকে ডিটক্সিফাই করে, এর ফলে শরীরের ওজন কমতে শুরু করে। এই পানীয় দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখতে পারে।
৮) মেথি পানি
মেথির বীজে রয়েছে উচ্চ ফাইবারে এবং ফাইবার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। এছাড়াও ফ্যাট বার্নিং সহজ করে। পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে তা দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
উপসংহার
ওজন কমানোর জন্য সঠিক খাবার নির্বাচনের পাশাপাশি প্রয়োজন কিছু খাবার পরিহার করা। সেই সাথে প্রয়োজন একটি সুশৃঙ্খল জীবনযাপন। ছেলেদের তুলনায় এই জায়গা তে মেয়েরা অনেকটাই এগিয়ে। তাই সচেতন ভাবে ডায়েট প্রক্রিয়াই মেয়েদের ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে সহজ করে দিতে পারে।s