পিংক সল্ট বা গোলাপি রংয়ের লবণ পাকিস্তানের পাঞ্জাব অঞ্চলের খনি থেকে খনন করা হয়। এই লবণের মধ্যে খনিজ পদার্থের কারণে গোলাপী রংয়ের আভা থাকে। এটি প্রাথমিকভাবে বিশুদ্ধ খাবার লবণ হিসেবে বিবেচিত যা খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে এটি রান্না করা এবং খাবার আইটেম তৈরি করা ছাড়াও বিভিন্ন চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
পিংক সল্ট কি?
পিংক সল্ট একটি প্রাকৃতিক খনিজ লবণ, যা মূলত হিমালয়ের পাহাড়ি অঞ্চল থেকে আহরণ করা হয়। এটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর রঙ গোলাপী। যা মূলত এতে থাকা বিভিন্ন খনিজ উপাদানের কারণে দেখায়। পিংক সল্টে প্রায় ৮০-৯০ প্রকারের খনিজ উপাদান থাকে। যেমন- ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, তামা এবং আয়রন। আয়রনের উপস্থিতির জন্য এটি গোলাপী রঙ ধারণ করে। এটি প্রাকৃতিক অবস্থায় পাওয়া যায় এবং এতে কোনো রাসায়নিক সংযোজন থাকে না।
পিংক সল্ট কেন আলাদা?
সাধারণ লবণ থেকে পিংক সল্ট আলাদা। এদের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য দৃশ্যমান।
সাধারণ লবণ মূলত সমুদ্রের লবণকে প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা হয় এবং এতে প্রায় ৯৯ শতাংশ সোডিয়াম ক্লোরাইড থাকে। সাধারণ লবণ তৈরি করার সময় প্রায়শই এর থেকে অন্যান্য খনিজ পদার্থ সরিয়ে ফেলা হয় এবং এটি সাদা রং ধারণ করে। অনেক সময় এই লবণে বিভিন্ন সংরক্ষণকারী পদার্থ এবং আয়োডিন যোগ করা হয়। যা আমাদের শরীরের জন্য কিছুটা উপকারী হলেও লবণের স্বাভাবিক গুণাবলী কমিয়ে দেয়।
অন্যদিকে, পিংক সল্টের উৎপত্তিস্থল থেকে শুরু করে প্রক্রিয়াকরণ পর্যন্ত এটি প্রাকৃতিক অবস্থায় থাকে এবং এতে কোনো রাসায়নিক সংযোজন করা হয় না। এতে খনিজ পদার্থের উপস্থিতি থাকায় এর পুষ্টিগুণ বেশি থাকে। পিংক সল্টে সোডিয়াম ক্লোরাইডের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে।
পিংক সল্টের স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স রক্ষা :
পিংক সল্ট শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স রক্ষায় সহায়তা করে। এর মধ্যে থাকা খনিজ পদার্থ যেমন- পটাসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম শরীরের কোষে পানিধারণ করতে সহায়তা করে। যা আমাদের শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে।
২. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ :
পিংক সল্টে সাধারণ লবণের তুলনায় সোডিয়ামের পরিমাণ কম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া এর মধ্যে থাকা পটাসিয়াম হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
৩. হজম প্রক্রিয়া উন্নত করা :
পিংক সল্টের হালকা ক্ষারীয় প্রকৃতি হজমে সহায়তা করে। এটি পাকস্থলীর অম্লতা কমায় এবং গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা প্রতিরোধ করে। এছাড়াও এটি অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার কার্যক্রমকে উন্নত করতে পারে।
৪. ত্বকের স্বাস্থ্য :
পিংক সল্ট স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট হিসেবেও জনপ্রিয়। এটি এক্সফোলিয়েটর হিসেবে কাজ করে। ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে।
৫. ডিটক্সিফিকেশন :
পিংক সল্ট একটি প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে। গরম পানির সাথে মিশিয়ে পিংক সল্ট দিয়ে স্নান করলে এটি ত্বকের ছিদ্র থেকে টক্সিন বের করে দেয়। এটি শরীরকে প্রশান্ত রাখে এবং মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে।
৬. বাত ও আর্থ্রাইটিসের উপশম :
পিংক সল্টের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ রয়েছে, যা বাতের সমস্যা, আর্থ্রাইটিস এবং গিঁটের ব্যথা উপশমে সহায়ক।
৭. শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা দূরীকরণ :
পিংক সল্ট শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা নিরাময়ে সাহায্য করে। অনেকসময় এটি “হ্যালোথেরাপি”তে ব্যবহার করা হয়। যেখানে এর সূক্ষ্ম কণা শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এবং শ্বাসনালীর অম্লতা কমিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাসকে উন্নত করে।
সতর্কতা
যদিও পিংক সল্ট স্বাস্থ্যসম্মত এবং পুষ্টিকর, তবে এটি অতিরিক্ত পরিমাণে ব্যবহার করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত সোডিয়াম খাওয়া উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনির সমস্যার কারণ হতে পারে।
পরিশেষে বলা যায় যে, সাধারণ লবনের তুলনায় যেহেতু পিংক সল্টে অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে, তাই আমাদের এই পিংক সল্ট নিয়মিত খাওয়া প্রয়োজন। আজকের এই ব্লগটি যদি আপনার কাছে ভালো লাগে বা আপনি উপকৃত হন তাহলে বলবো FIT FOR LIFE কে ফলো করুন এবং আপনার আপনজনের কাছে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।