মেয়েদের জন্য মেথির উপকারিতা

SHARE

মেথি (Fenugreek) যা ফেনুগ্রিক নামেও পরিচিত, একটি খুবই প্রচলিত একটি ভেষজ যা কেবল রান্নার স্বাদ বাড়াতেই নয়, স্বাস্থ্য রক্ষায়ও কাজ করে। বিশেষ করে মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থ্যতায় মেথির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এতে ভিটামিন, খনিজ এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে, যা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ ও নিরাময়ে কাজ করে।

মেয়েদের জন্য মেথির উপকারিতা

আজকের এই ব্লগে আমরা মেয়েদের জন্য মেথির উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

মেয়েদের জন্য মেথির উপকারিতা

১. হরমোনাল ভারসাম্য রক্ষা করে

মেথি মেয়েদের হরমোনাল ভারসাম্য বজায় রাখতে কাজ করে। এতে ডাইওজেনিন নামক প্রাকৃতিক যৌগ উপাদান রয়েছে, যা নারীদের শরীরে ইস্ট্রোজেন উৎপাদনকে বৃদ্ধি করে। এটি পিরিয়ডের অনিয়ম দূর করতে এবং প্রাকৃতিক উপায়ে মেনোপজের লক্ষন কমাতে কাজ করে।

২. পিরিয়ডের ব্যথা ও অস্বস্তি দূর করে

মেথি পিরিয়ডের সময় হওয়া ব্যথা বা ক্র্যাম্প কমাতে কাজ করে। এতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং পেইন রিলিভিং উপাদান মেয়েদের পিরিয়ডের অস্বস্তি এবং পেটের ব্যথা কমাতে কার্যকর।

৩. স্তন্যদানের সময় দুধের উৎপাদন বাড়ায়

মেথি স্তন্যদাত্রী মায়েদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। এতে থাকা গ্যালাক্টাগোগ নামক যৌগ উপাদান বুকের দুধের উৎপাদন বাড়ায়। এটি নবজাতকের পুষ্টি নিশ্চিত করতে কাজ করে।

৪. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি

মেথি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণে সমৃদ্ধ। এটি ত্বকের ব্রণ, কালো দাগ এবং র‍্যাশ কমাতে কাজ করে। মেথির পেস্ট বা মেথি পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি ত্বকের জন্য টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।

৫. মেয়েদের ওজন কমাতে কাজ করে 

মেথি মেয়েদের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে কাজ করে। এতে থাকা ফাইবার হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করে, যা ওজন কমানোর জন্য উপকারী।

৬. পিসিওএস (PCOS) ব্যবস্থাপনায় কাজ করে

মেথি পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS) ব্যবস্থাপনায় কাজ করে। এটি শরীরের ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং ওভারির হরমোনাল ভারসাম্য ঠিক রাখে।

৭. গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে

মেথি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে। এটি ইনসুলিন কার্যকারিতা বাড়ায়, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কাজ করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ডায়াবেটিস চা খেলে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যাবে।

৮. প্রজনন স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে

মেথি প্রাকৃতিকভাবে নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করে। এটি ডাইওজেনিন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদানের মাধ্যমে প্রজনন সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কাজ করে। পাশাপাশি গাঁজানো রসুন মধু খাবেন।

৯. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে

মেথি হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে কাজ করে।  এটি গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূর করতে কাজ করে।

মেথি খাওয়ার নিয়ম 

রান্নাবান্নায় মেথি মশলা হিসেবে সুঘ্রাণ ছড়ায়। তবে মেথি রান্না ছাড়াও খাওয়া যায়। আর এক্ষেত্রেই রয়েছে মেথির যত ঔষধি গুণ। তবে মেথি খাওয়ার কিছু নিয়ম আছে। একেক প্রয়োজনে একেকভাবে মেথি খেতে হয়। 

১) মেথি ভিজিয়ে খাওয়া

* রাতে এক চামচ মেথি এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে সেই মেথি চিবিয়ে খান এবং মেথি মিশ্রিত পানি পান করুন।

* এইভাবে মেথি খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ, হজমশক্তি বৃদ্ধি এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 

২) মেথি চিবিয়ে খাওয়ার নিয়ম 

* প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চা চামচ মেথির বীজ চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে  এছাড়াও মেথির বীজ গুঁড়ো করে দুধের সাথে মিশিয়ে অথবা পানিতে মিশিয়ে খাওয়া যায়। মেথির পাতা শাক হিসেবে রান্না করেও খাওয়া যায়। মেথির গাছ, ফল, পাতা সবকিছুতেই ঔষধি গুণ রয়েছে।

* মেথি চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে, হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। 

৩) ওজন কমাতে মেথি খাওয়ার নিয়ম 

ওজন কমাতে মেথি বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যেতে পারে। 

* মেথি চা : দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে মেথি চা দারুণ উপাদেয়। গরম পানিতে মেথি গুঁড়ো, মশলার মধ্যে দারুচিনি, আদা মিশ্রিত করে ৫-১০ মিনিট ফুটিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন। 

* মেথি ও মধু চা : মেথি চায়ের সাথে শুধু মশলার জায়গায় মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। চাইলে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস যোগ করতে পারেন। নিয়মিত মেথি ও মধুর চা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে দ্রুত ওজন কমবে।

* মেথির গুঁড়ো খাওয়া : সরাসরি মেথির গুঁড়ো খাওয়ার জন্য প্রথমে মেথি কড়াইয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর গুঁড়ো করতে হবে। এই মেথি গুঁড়ো সরাসরি খাওয়া যেতে পারে আবার পানির সাথে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে। আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এটি কাজ করে। 

৪) মেথির পেস্ট বানিয়ে খাওয়া 

* মেথি ভিজিয়ে তা পেস্ট করে মধু বা দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেলে এটি যৌন স্বাস্থ্য ও শক্তি বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।

সতর্কতা

  • মহিলারা অতিরিক্ত মেথি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি অনেক সময় ডায়েরিয়া বা অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
  • গর্ভবতী নারীরা মেথি গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

উপসংহার

মেথি তে রয়েছে অসংখ্য পুষ্টি উপাদান এবং মেথির এতো বেশি উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। আমরা সামান্য সমস্যাতেই ডাক্তারের কাছে দৌড়াই। অথচ যার সমাধান আমাদের আশেপাশেই প্রাকৃতিক ভাবে রয়েছে। মেথি একটি প্রাকৃতিক এবং সহজলভ্য ভেষজ উপাদান  যা মেয়েদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে কার্যকর। এটি নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করা সম্ভব। প্রকৃতির এই অনন্য উপহারটি সুস্থ্য জীবনযাপনের জন্য অবশ্যই ব্যবহার করতে পারবেন।

Subscribe Our Newsletter

Related Products

Related Posts

SHARE

Latest Product

Latest Post