Blog
সয়াবিন তেল এর ক্ষতিকর দিক
আজকাল অনেকেই স্বাস্থ্য সচেতন। অনেকে বুঝে গেছেন — সয়াবিন তেল শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর, তাই অনেকেই এটি ব্যবহার বন্ধ করেছেন।
কিন্তু যারা এখনও “সস্তা” বা “হালকা” ভেবে সয়াবিন তেল ব্যবহার করছেন, তাদের জন্য এই লেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চলুন দেখি, সয়াবিন তেল আসলে কীভাবে তৈরি হয় এবং কেন এটি আপনার লিভার, পাকস্থলী ও হৃদযন্ত্রের নীরব শত্রু।
❖ সয়াবিন তেল তৈরির শিল্পপ্রক্রিয়া: বিজ্ঞান না বিষ-বাণিজ্য?
সয়াবিন তেল তৈরি হয় এক উচ্চ-তাপ ও রাসায়নিক নির্ভর প্রক্রিয়ায় (High-Heat Chemical Refining)।
এতে ব্যবহৃত হয়:
- n-Hexane solvent — পেট্রোলিয়াম থেকে তৈরি এক ধরনের বিষাক্ত দ্রাবক
- Bleaching Earth — ধাতব ও রঙ শোষণকারী রাসায়নিক কাদা
- Deodorization process — ২৪০–২৬০°C তাপমাত্রায় বাষ্প স্ট্রিপিং
এই প্রক্রিয়ায় তেলের প্রাকৃতিক গঠন (fatty acid structure) সম্পূর্ণ বিকৃত হয়ে যায়।
অর্থাৎ, আপনি যা “ভোজ্য তেল” ভাবছেন, তা আসলে এক মৃত তেল — devoid of life, devoid of nutrition.
❖ প্রক্রিয়ার সংক্ষিপ্ত ধাপ (Reality Check)
1. Seed Handling
বীজ পরিষ্কার, শুকানো, খোসা ছাড়ানো ও ফ্লেক বানানো হয়।
2. Oil Extraction (Hexane Process)
ফ্লেকগুলোকে ভিজানো হয় n-Hexane solvent দিয়ে, যাতে সর্বাধিক তেল বের হয়।
তেলের সাথে হেক্সেন মিশে তৈরি হয় “Miscella” নামের এক মিশ্রণ, যেখান থেকে বাষ্পায়নের মাধ্যমে তেল আলাদা করা হয়।
3. Refining & Neutralization
Crude oil-এ থাকা Free Fatty Acid (FFA) ও ফসফোলিপিড NaOH (Caustic Soda) দিয়ে সরানো হয় — উৎপন্ন হয় Soap-stock।
4. Bleaching
Activated Clay দিয়ে heavy metal ও oxidation compound দূর করা হয় — কিন্তু এখানেই ঘটে বৃহৎ nutrient loss।
5. Deodorization — সবচেয়ে ক্ষতিকর ধাপ
এই ধাপে ২৩৫–২৬০°C তাপমাত্রায় ভ্যাকুয়ামে গরম করা হয় যাতে গন্ধ দূর হয়।
কিন্তু এতে Trans Fat ও Oxidized Compound তৈরি হয়, যা শরীরে Inflammation সৃষ্টি করে, হরমোন ও কোষের ক্ষতি ঘটায়।
❖ বাংলাদেশে নতুন আতঙ্ক — সয়াবিন তেলে Mercury দূষণ!
সম্প্রতি Journal of Health & Pollution (Shaheen et al., 2024)–এর এক গবেষণায় দেখা গেছে —
বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া সয়াবিন তেলে পারদের মাত্রা ৭–২০ গুণ বেশি!
| তেলের ধরন | পারদের পরিমাণ (mg/kg) | BSTI মান (সীমা) |
| Soybean Oil | 1.73 | ≤ 0.25 |
| Palm Oil | 5.11 | ≤ 0.25 |
বিশ্লেষণে দেখা যায়, এই দূষণের মূল উৎস আমদানি করা Crude Oil Feedstock, যা ট্যাঙ্কার ও বন্দর সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় পারদ দ্বারা দূষিত হয়।
❖ Mercury বা পারদের স্বাস্থ্যঝুঁকি
Mercury এক প্রকার Neurotoxin, যা শরীরে জমে থেকে কখনও বের হয় না।
দীর্ঘমেয়াদে এটি করতে পারে —
- মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি
- গর্ভের শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে বাধা
- হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর ক্ষয়
- কিডনি ও হরমোনের ক্ষতি
❖ কেন সয়াবিন তেল শরীরের “নীরব আগুন”?
সয়াবিন তেল প্রাকৃতিকভাবে Omega-6 fatty acid সমৃদ্ধ।
কিন্তু Omega-6 ও Omega-3 এর ভারসাম্য না থাকলে শরীরে Chronic Inflammation তৈরি হয়।
এই প্রদাহ থেকেই শুরু হয় —
- ফ্যাটি লিভার
- উচ্চ রক্তচাপ
- ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স
- হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক
- হরমোনাল ডিসঅর্ডার
অর্থাৎ, সয়াবিন তেল মানেই শরীরে ধীরে ধীরে আগুন জ্বালানো।
❖ জানেন কি?
- ফ্যাক্টরিতে ব্যবহৃত Hexane সম্পূর্ণভাবে দূর করা সম্ভব নয়।
- আন্তর্জাতিক মান (Codex CXS-210) অনুসারে Hexane ≤ 1 mg/kg থাকতে হবে —
কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে এই মান নিয়ন্ত্রণ হয় না বললেই চলে।
তাই আপনি যে তেল বাজার থেকে কিনছেন, তাতে হেক্সেন, পারদ ও অক্সিডাইজড ফ্যাট — তিনটিই উপস্থিত!
❖ তাহলে বিকল্প কী?
বাংলার ঐতিহ্যেই আছে সেরা সমাধান:
- Virgin Coconut Oil (Cold Pressed) — ইনফ্লামেশন কমায়, গাট হেলথ ঠিক রাখে
- Mustard Oil (Cold Pressed) — হৃদযন্ত্র ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে
- A2 Ghee — হরমোন ও ব্রেইন হেলথের জন্য অনন্য
- Extra Virgin Olive Oil — সালাদ ও হালকা রান্নার জন্য সেরা
❖ শেষ কথা
সয়াবিন তেল কোনো খাবার নয় — এটি এক রাসায়নিকভাবে মৃত তেল, যা কেবল শিল্পের জন্য উপযুক্ত।
একবার এই তেল শরীরে প্রবেশ করলে, তা কোষ, লিভার, হরমোন ও মস্তিষ্ককে নীরবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।তাই এখনই সিদ্ধান্ত নিন —
➤ আপনার পরিবার ও সন্তানের জন্য “বিষ নয়”,
বরং বেছে নিন প্রকৃতির তেল — সরিষা, নারকেল, ঘি ও অলিভ অয়েল।
লেখক:
Mizanur Rahman
American Fitness Professional And Associate (AFPA)
Certified Holistic Health Coach | Nutritionist