হার্নিয়া হলে কি কি সমস্যা হয়

SHARE

হার্নিয়া হলো এমন একটি শারীরিক সমস্যা যেখানে শরীরের কোন অঙ্গ বা টিস্যু তার নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে বা স্থানচ্যুত হয়। এটি সাধারণত মাংসপেশির দুর্বল স্থানে হয়। হার্নিয়ার বিভিন্ন ধরন রয়েছে যেমন- ইনগুইনাল হার্নিয়া, উম্বিলিকাল হার্নিয়া, ফিমোরাল হার্নিয়া, হাইয়াটাল হার্নিয়া ইত্যাদি। নিচে হার্নিয়া হলে সম্ভাব্য সমস্যা এবং এর প্রভাবগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

হার্নিয়া হলে কি কি সমস্যা হয়
হার্নিয়া হলে কি কি সমস্যা হয়

হার্নিয়ার প্রাথমিক উপসর্গ

  • ফোলাভাব: হার্নিয়ার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো কোনো নির্দিষ্ট স্থানে ফোলাভাব। এটি সাধারণত পেট, কুঁচকি বা উম্বিলিকালে হতে পারে।
  • ব্যথা বা অস্বস্তি: হার্নিয়া আক্রান্ত স্থানে মৃদু থেকে তীব্র ব্যথা হয়। বিশেষ করে যখন কোন ভারী জিনিস তোলা হয়, কাশি দেওয়া হয় বা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা হয়।
  • চাপ অনুভব করা: ফোলাভাবের কারণে পেট বা কুঁচকিতে অস্বাভাবিক চাপ অনুভূত হয়।

 

জটিলতার সম্ভাবনা

ক. স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড হার্নিয়া

  • রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হওয়া: হার্নিয়া হওয়া স্থানে যদি অঙ্গ বা টিস্যুর রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, তবে এটি স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড হার্নিয়ায় রূপ নেয়। এর জন্য জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন।
  • অঙ্গের নেক্রোসিস: রক্ত চলাচল বন্ধ থাকলে টিস্যু মৃত হতে শুরু করে, যা সংক্রমণ এবং অন্যান্য গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে।
  • অত্যন্ত ব্যথা: স্ট্রাঙ্গুলেটেড হার্নিয়ায় তীব্র ব্যথা এবং ফোলাভাব দেখা দেয়, যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

খ. অবস্ট্রাক্টেড হার্নিয়া

  • অন্ত্র আটকে যাওয়া: অবস্ট্রাক্টেড হার্নিয়ার কারণে অন্ত্রের কোনো অংশ আটকে গেলে খাদ্য, গ্যাস বা মল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
  • বমি এবং বমির ভাব: অবস্ট্রাক্টেড হার্নিয়ার কারণে রোগীর বমি এবং খাবার হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য: অবস্ট্রাক্টেড হার্নিয়ার ফলে অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হলে দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

 

দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

  • প্রদাহ: যদি দীর্ঘদিন ধরে হার্নিয়ার সমস্যা থাকে, তবে আক্রান্ত স্থানে প্রদাহ বা সংক্রমণ হতে পারে।
  • পেশির দুর্বলতা: হার্নিয়ার কারণে পেশি ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ে, যা দৈনন্দিন কাজকর্মে বাধার সৃষ্টি  করে।
  • শারীরিক কার্যক্রমে বাধা: হার্নিয়ার ফলে ভারী কাজ বা ব্যায়াম করার সময় ব্যথা এবং অস্বস্তি হওয়ার কারণে দৈনন্দিন জীবনযাপন ব্যাহত হয়।

 

হার্নিয়ার ধরণভেদে সমস্যা

ক. ইনগুইনাল হার্নিয়া (কুঁচকি অঞ্চলে)

  • পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
  • বীর্যবাহী নালীর ওপর চাপ পড়ে ব্যথা ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
  • চলাফেরায় অসুবিধা হয়।

খ. উম্বিলিকাল হার্নিয়া (নাভি অঞ্চলে)

  • শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও হতে পারে।
  • মলাশয়ে চাপ সৃষ্টি করে হজমের সমস্যা করে।

গ. হাইয়াটাল হার্নিয়া (পেট এবং বুকের মাঝখানে)

  • পাকস্থলীর একটি অংশ উপরের দিকে চলে আসে।
  • বুকজ্বালা, অম্লতা ও খাদ্য হজমে সমস্যা দেখা দেয়।

 

মানসিক প্রভাব

  • দুশ্চিন্তা: দীর্ঘমেয়াদী ব্যথা এবং অস্বস্তি রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে।
  • পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার ভয়: অনেক সময় রোগীরা হার্নিয়ার জটিলতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে, যা মানসিক চাপ বাড়ায়।

 

চিকিৎসা না করালে সম্ভাব্য ঝুঁকি

  • স্ট্র্যাঙ্গুলেশন এবং অবস্ট্রাকশন হার্নিয়া মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।
  • সংক্রমণ এবং সেপসিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • দীর্ঘমেয়াদে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।

 

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

  • অস্ত্রোপচার: হার্নিয়া সারানোর প্রধান চিকিৎসা হলো অস্ত্রোপচার, যা সমস্যা পুরোপুরি সমাধান করতে পারে।
  • জীবনযাত্রার পরিবর্তন: অতিরিক্ত ওজন কমানো, ভারী বস্তু তোলা এড়ানো এবং পেশি শক্তিশালী করার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
  • পেটের চাপ কমানো: সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং হজমশক্তি বাড়ানোর মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে হার্নিয়ার ঝুঁকি কমানো যায়।

 

পরিশেষ বলা যায় যে, হার্নিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা যা অবহেলা করলে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। তাই প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

আমাদের আজকের ব্লগটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে এটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে শেয়ার করুন। আপনার বন্ধুদেরও জানার সুযোগ করে দিন। এছাড়াও আপনারা পরবর্তীতে কোন বিষয়ে ব্লগ পড়তে চান, তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আপনাদের মতামত আমাদের পরবর্তী কনটেন্ট তৈরি করতে ও লিখতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।

Subscribe Our Newsletter

Related Products

Related Posts

SHARE

Latest Product

Latest Post