Blog
কোস্টকাঠিন্য কি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়?
বেঁচে থাকার জন্য যেমন আমাদের খাদ্য গ্রহণ প্রয়োজন, তেমনি খাদ্য পরিপাক পরবর্তী পাকস্থলীর অভ্যান্তরে উৎপাদিত মল সঠিকভাবে নিষ্কাশন অনেক বেশি জরুরী। আমরা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ধরনের খাবার গ্রহণ করি। ফাইবার এবং পুষ্টি গুণাগুণ বিবেচনায় এসব খাবার হজম হওয়ার প্রক্রিয়াটাও আলাদা। খাদ্যাভ্যাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের স্বাস্থ্য ও সুস্বাস্থ্যের জন্য। খাদ্য গ্রহণ মানেই শুধু পুষ্টির উৎস্ নয়। বরং যা আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। খাবার নির্বাচন, খাবারের প্রস্তুত প্রক্রিয়া এবং খাবার গ্রহণের সময়, সবকিছুই আমাদের দেহের অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও কার্যক্রমকে অনেক বেশি পরিমানে প্রভাবিত করে। এর মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য একটি অতিপরিচিত সমস্যা, যা বিভিন্ন কারনে হয় থাকে এবং এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা জটিলতার জন্ম দেয়। আমাদের হজমশক্তি এর উপর নির্ভর করে মল বৃহদান্ত্রের একদম শেষভাগে গিয়ে জমা হতে থাকে। মল নিষ্কাশন প্রক্রিয়া টাও এই জায়গা থেকেই শেষের শুরু। এবং কোষ্ঠকাঠিন্যতার সাথেও আমাদের পরিচিতি তারপর থেকেই।

কোষ্ঠকাঠিন্য ( Constipation) কিঃ
সহজ কথায় কোষ্ঠকাঠিন্য হলো মলত্যাগ জনিত জটিলতা। নানা ভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য কে সঙ্গায়ন করা যায়। যেহেতু আমরা নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করি, তাই নিয়মিত মল নিষ্কাশন হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর ব্যত্ব্যয় ঘটলেই যে তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলতে হবে এরকমটা নয়। দৈনিক ১ বার মলত্যাগ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞদের মতে সাধারণত টানা ৩ দিন বা তার বেশি সময় ধরে মলত্যাগ না হলে সেটাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে।
এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য এর সঙ্গায়ন নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতামত দিয়েছেন। সবার বক্তব্যে কিছু সংযোজন বিয়োজন থাকলেও, মূল বিষয় একই। কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ে সর্বজন স্বীকৃত যে ধারণা তা হলো কোনো ব্যক্তির সপ্তাহে যদি তিনবারের কম মলত্যাগ হয়, তখন সে অবস্থা কে কোষ্ঠকাঠিন্য বলে।
ইতালির রাজধানী রোম এ আয়োজিত এক সেমিনার থেকে কোষ্ঠকাঠিন্যর সবচেয়ে সহজ ও গ্রহনযোগ্য ধারণা পাওয়া যায়। সেমিনারে কোষ্ঠকাঠিন্যর পাঁচ টি বৈশিষ্ট্যর কথা বলা হয় এবং এই পাঁচ টি বৈশিষ্ট্যর দুই বা ততোধিক বৈশিষ্ট্য কারো মধ্যে পরিলক্ষিত হলে এবং সেটা বিগত ৩ মাসের মধ্যে, তাহলে সে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করা যাবে। এই পাঁচ টি বৈশিষ্ট্যগুলো হলোঃ
- সপ্তাহে ৩ বারের কম মলত্যাগ হওয়া।
- মল তুলনামূলক অনেক বেশি শক্ত হওয়া।
- মলত্যাগের সময় যে প্রেশার দেওয়া হয় সেই সময় যদি পুরো মলত্যাগে ব্যায়িত সময়ের ২৫% বা তার বেশি হয়। অর্থাৎ কেউ যদি মলত্যাগে ৪ মিনিট ব্যায় করে এবং এরমধ্যে ১ মিনিট বা তার বেশি সময় ধরে মলত্যাগের জন্য প্রেশার দেয়।
- মলত্যাগ শেষ হওয়ার পরেও যদি মনে হয় মল ক্লিয়ার হয়নি।
- মলদ্বারে যদি বাধার সৃষ্টি অনুভূত হয়।
উল্লেখিত ৫ টি বৈশিষ্ট্যর মাঝে কারো মধ্যে যদি ৩ মাস যাবৎ দুই বা ততোধিক বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়, তাহলে ধরে নেওয়া যায় সে কোষ্ঠকাঠিন্যতায় ভুগছেন।
মাঝে মাঝে কোষ্ঠকাঠিন্য কে একটি সাধারণ সমস্যা মনে করা হলেও এটি অনেক দীর্ঘমেয়াদি একটি জটিলতায় রুপ নিতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য অন্ত্রের নড়াচড়া কিংবা সংকোচন প্রসারণে অতিরিক্ত পরিমাণে চাপ সৃষ্টি করে। যা একজন ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনের কাজ করার সক্ষমতা হ্রাস করে ফেলতে পারে… সর্বোপরি স্বাভাবিক জীবনযাপন মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে।
কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়?
কারণ ভেদে কোষ্ঠকাঠিন্য সাধারণত দুইধরনের হয়ে থাকে। প্রথমটি হলো জন্মগতভাবে, যা প্রাথমিক কারন। যেমন শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের জন্মগ্রহণ কালে থাইরয়েড হরমোন জনিত সমস্যা কিংবা পারিবারিক ইতিহাস থেকেও কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। এবং দ্বিতীয় কারনটি হলো আমাদের খাদ্যভ্যাস কিংবা লাইফস্টাইলের কারনে যে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
যদি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত পরিমানে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার না থাকে তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। সাধারণত আমাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এর কারনেই কোষ্ঠকাঠিন্যর শুরুটা হয়। প্রতিদিন নিয়ম করে না খাওয়া, নিয়ম করে মলত্যাগ করতে না যাওয়া, বেশি পরিমানে ফ্যাটি খাদ্য গ্রহণ করার মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।
এছাড়াও যখন মল বা পাকস্থলী তে উৎপাদিত বর্জ্য পরিপাকতন্ত্রের মধ্যে দিয়ে খুব ধীরে চলে যায় কিংবা মলদ্বার (বৃহদান্ত্রের শেষ অংশ) থেকে ঠিকমতো মল বের হতে পারে না যার ফলে মল শক্ত হয়ে যায় এবং ফলশ্রুতিতে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।
আমাদের দেহের অভ্যান্তরে নানাবিধ জটিলতায় কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ হতে পারে। যেমনঃ
১) মলদ্বার ব্লকেজঃ এর ফলে মল চলাচলের গতি হ্রাস পায় কিংবা কখনও কখনও একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। কোলন ক্যান্সার এর কারণে এমন হয়ে থাকে।
২) মলদ্বারে ফাটলঃ মলদ্বারের ত্বকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গর্ত যা সাধারণত নিম্নলিখিত কারণে হয়ে থাকেঃ
- মলদ্বারে ক্যান্সার
- কোলন এর চাপ সৃষ্টিকারী ক্যান্সার।
- অন্ত্রে বাধা।
- রেক্টোসিল ( যোনীর পেছনের প্রাচীর দিয়ে মলদ্বার ফুলে যাওয়া)
- কোলন সংকীর্ণ হয়ে অন্ত্র শক্ত হয়ে যাওয়া।
৩) মলত্যাগে জড়িত পেশির সমস্যাঃ মলত্যাগের সাথে যেসব পেশি জড়িত, যেমন পেলভিক পেশিগুলি দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যর কারন হতে পারে। যেমন: - অ্যানিসমাস (অন্ত্র চলাচলের অনুমতি দেওয়া পেলভিক পেশির শিথিল করার অক্ষমতা)
- দুর্বল পেলভিক পেশি।
- ডিসিনার্জিয়া (পেলভিক পেশির যথাযথ উপায়ে সংকোচন – প্রসারণের সমন্বয়হীনতা)
বেশকিছু ওষুধ আছে যা সেবনে পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসাবে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। যেমন:
- এ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস
- ক্যালসিয়াম এবং এ্যালুমিনিয়াম ধাবনকারী এ্যান্টাসিড।
- ওপিওডস এবং রক্তচাপের ওষুধ।
আমাদের দেহের অভ্যান্তরে বিভিন্ন ধরনের হরমোন সংশ্লেষ হয়। হরমোন দেহের ভারসাম্য রক্ষা করে। এসব হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে এরকম বেশকিছু রোগ আছে যা কোষ্ঠকাঠিন্যর কারণ হতে পারে। যেমন: - হাইপোথাইরয়েডিজম (একটি নিষ্ক্রিয় থাইরয়েড)
- হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজম ( অত্যধিক সক্রিয় একটি প্যারাথাইরয়েড গ্লান্ড)
- গর্ভাবস্থা
- ডায়াবেটিস
এছাড়াও বিশেষ কিছু রোগ কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার প্রবণতা কে ত্বরান্বিত করে। যেমন: - পারকিনসন রোগ ( স্নায়ুতন্ত্রের রোগ যা নড়াচড়া ও কম্পনকে প্রভাবিত করে)
- অটোনমিক নিউরোপ্যাথী ( শরীরের কাজ নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ু ক্ষতি)
- মাল্টিপল স্লেকরোসিস ( স্নায়ুর প্রতিরক্ষা মূলক আবরণ নষ্ট হয়ে যাওয়া)
- স্ট্রোক (মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ)
- মেরুদণ্ডে (পিঠের হাড়) আঘাত।
কিছু বিশেষ কারণ কোষ্ঠকাঠিন্যর ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। যেমন: - খাবারে অরুচি
- বিষন্নতা
- বার্ধক্যা
- পানিশূন্যতা
- ব্যথর ওষুধ সেবন
- মল চেপে রাখা ইত্যাদি
আমাদের জীবনযাপনের ধরনই মূলত কোষ্ঠকাঠিন্যর জন্য দায়ী। আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং এর সাথে জড়িত কার্যক্রম কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের বীজ বপন করে।
উপসংহারঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম ডায়াগনস্টিক কোম্পানি নেভিপয়েন্ট হেলথ ইনক-এর প্রধান পুষ্টিবিদ সিন্ধু এইসএস বলেছেন “আসলে কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের কারণ কী হতে পারে, তা বোঝার জন্য কে কী খাচ্ছে, তার উপরে নজর দেওয়া উচিত”। তার ভাষ্যমতে কারো কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ২৪-৪৮ ঘন্টা পূর্বে গ্রহন করা খাদ্যগুলি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ্যালকোহল, রেডমিট, গ্লুটেনযুক্ত খাবার, ফ্যাটি খাবার তালিকায় শীর্ষে আছে। এবং এই খাবার গুলি কোষ্ঠকাঠিন্যর ঝুঁকি মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি করে। তবে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টা ফুটে ওঠে তা হলো জীবনযাপনের ধরন। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন যেকাউকে যেকোনো রোগের দিকে ঠেলে দেয়। আর এসব রোগের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হিসাবে জন্ম দেয় সাধারণ থেকে দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের।
Subscribe Our Newsletter
Related Products
Alu Bokhara & Garlic Acar Combo-আলু বোখরা ও রসুন আচার কম্বো


Talbina-তালবিনা (Half Combo )


Sohoj Ranna Combo Pack – সহজ রান্না কম্বো প্যাক




Eid Anando Combo Pack – ঈদ আনন্দ কম্বো প্যাক
Related Posts
Latest Product
-
Pure Delight Combo Pack - পিওর ডিলাইট কম্বো প্যাক
2,850.00৳Original price was: 2,850.00৳.2,420.00৳Current price is: 2,420.00৳. -
Digestive Health Combo - ডাইজেস্টিভ হেলথ কম্বো
1,950.00৳Original price was: 1,950.00৳.1,649.00৳Current price is: 1,649.00৳. -
Eid Anando Combo Pack - ঈদ আনন্দ কম্বো প্যাক
3,320.00৳Original price was: 3,320.00৳.2,820.00৳Current price is: 2,820.00৳. -
Sohoj Ranna Combo Pack - সহজ রান্না কম্বো প্যাক
2,940.00৳Original price was: 2,940.00৳.2,499.00৳Current price is: 2,499.00৳. -
Brown Sugar - আখের লাল চিনি 180.00৳ – 850.00৳


Talbina-তালবিনা রাসুল (সঃ) এর সুন্নতি খাবার





Talbina-তালবিনা (Half Combo )


