লিভারের সমস্যা হলে কি খেতে হয়?

SHARE

লিভার আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ  ও বৃহৎ অঙ্গ। পরিপাকতন্ত্রের প্রধান অঙ্গই লিভার বা যকৃত। এটি শরীর থেকে টক্সিন দূর করা, পুষ্টি শোষণ করা এবং শক্তি সরবরাহ করার কাজ করে। ফলে আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার প্রভাব লিভারের উপর সরাসরি পড়ে।

আজকের এই ব্লগে লিভারের সমস্যা হলে কী খেতে হবে এবং কীভাবে এই খাবারগুলো আপনার লিভারের সুস্থতায় ভূমিকা রাখে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আমরা যা খাই বা পান করি, তা হজম হওয়ার পর রক্তের মাধ্যমে লিভারে পৌঁছায়। লিভারের কাজ হলো এই পুষ্টি উপাদানগুলো ভেঙে শরীরের জন্য শক্তি তৈরি করা এবং অতিরিক্ত পুষ্টি গ্লুকোজ হিসেবে জমা রাখা।এছাড়াও লিভার পিত্তরস তৈরি করে, যা খাবারের চর্বি হজম করতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি রক্তের জন্য প্রোটিনসহ অনেক প্রয়োজনীয় উপাদান তৈরি করে।এজন্যই  লিভার ঠিকভাবে কাজ করলে আমাদের শরীরও সুস্থ থাকে।

লিভারের সমস্যা হলে কি খেতে হয়?
লিভারের সমস্যা হলে কি খেতে হয়?

 

লিভারের সমস্যা কেন হয়?

লিভারের সমস্যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন:

  • অতিরিক্ত মদ্যপান।
  • ফ্যাটি লিভার ডিজিজ।
  • হেপাটাইটিস ভাইরাস সংক্রমণ।
  • অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস।
  • ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

লিভারের সমস্যা হলে শরীর ক্লান্ত লাগে, ত্বক হলুদাভ (জন্ডিস) হয় এবং হজমের সমস্যা দেখা দেয়।

 

লিভারের সমস্যা হলে কী খেতে হয়?

লিভারের সুস্থতা বজায় রাখতে এবং সমস্যা দূর করতে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা খুবই জরুরি।

এমন অনেক খাবার আছে যা লিভারকে বিষমুক্ত করতে, প্রদাহ কমাতে এবং কার্যক্ষমতা বাড়াতে  সাহায্য করে । নিচে এসব খাবার ও পানীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

 বিটরুটঃ

বিটরুট, বিটরুট পাউডার বা বিটরুট এর জুস লিভারের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর একটি প্রাকৃতিক উপাদান। বিটরুটে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়, যা লিভারকে সুরক্ষিত রাখে ও নাইট্রেট রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং প্রদাহ কমাতে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও বিটরুটের রস লিভারের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এবং লিভারকে পরিষ্কার রাখে।

গাঁজানো রসুন মধু

গাঁজানো রসুন মধু লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করার জন্য একটি প্রাকৃতিক এবং শক্তিশালী উপাদান। এটি লিভারকে ডিটক্সিফাই করতে এবং এনজাইমগুলোর কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

রসুনে থাকা সালফার যৌগ লিভারের এনজাইম সক্রিয় করে। এই এনজাইম শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এবং লিভার পরিষ্কার রাখে। গাঁজানোর ফলে রসুন ও মধুর গুণাবলী আরও বৃদ্ধি পায়, যা লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায়। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চা চামচ গাঁজানো রসুন মধু খাওয়া খুবই উপকারী

সবুজ শাকসবজি

সবুজ শাকসবজি বিশেষ করে পালং শাক, ব্রকলি এবং লেটুস লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই সবজি গুলো প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে, যা লিভারের বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সহায়তা করে এবং লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন খাবারে অন্তত একটি সবুজ শাকসবজি রাখা উচিত, যা লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে।

হলুদ

হলুদ একটি শক্তিশালী প্রাকৃতিক উপাদান যা লিভারের সুস্থতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে থাকা কারকিউমিন লিভারের ইনফ্ল্যামেশন কমাতে সাহায্য করে এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। হলুদ নিয়মিত রান্নায় ব্যবহার করুনএছাড়াও মধু দিয়ে হলুদ চা পান করতে পারেন, এটি লিভারের কার্যকারিতা  বাড়াবে ও সুস্থ রাখবে ।

ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (Polyunsaturated Fat) শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই ফ্যাটি অ্যাসিড খাবারের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয়। খুব সংখ্যক খাবারের মাঝে ওমেগা-৩ পাওয়া যায়, যেমন- কিছু সামুদ্রিক মাছ (যেমন: স্যালমন, সারডিন, ম্যাকরেল) ও  বীজের মধ্যে অন্যতম চিয়া সিড।  ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবারগুলো আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর নিয়মিত ব্যবহার লিভার, হৃদয়যন্ত্র এবং মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক।

লেবু

লেবু লিভারকে ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে এবং ভিটামিন সি সরবরাহ করে। এটি প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার হিসেবে কাজ করে এবং লিভারের কোষগুলোর পুর্নগঠনে সাহায্য করে। লেবুর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি, সাইট্রাস অ্যাসিড লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের অপ্রয়োজনীয় টক্সিন বের করে দেয়।

গ্রিন টি

গ্রিন টি তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ক্যেটেচিন  লিভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং লিভারের ফ্যাট বার্নে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ১-২ কাপ গ্রিন টি খাবেন। মধু বা লেবু মিশিয়ে আরও স্বাস্থ্যকর এবং মুখরোচক করেও খেতে পারেন।

পানি

পানি লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী। লিভার শরীরের প্রধান ডিটক্সিফিকেশন অঙ্গ। পর্যাপ্ত পানি পান করলে  টক্সিনগুলো বের করার প্রক্রিয়া সহজতর হয়। এজন্য প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। এছাড়াও এক গ্লাস পানিতে ১ চা চমচ চিয়া সিড রাতে ভিজিয়ে রেখে প্রতিদিন সকালে খাবার আগে তাতে অল্প পরিমাণ স্বাস্থকর হিমালয়ান পিংক সল্ট ও একটু লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন।

ফলমূল

ফলমূল বিশেষ করে আপেল, আঙুর এবং বেরি, লিভার সুস্থ রাখে এবং তার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। এই ফলগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা লিভারের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে।

 

লিভারের সমস্যা এড়িয়ে চলতে যে খাবার খাওয়া যাবে না

লিভারের সমস্যা হলে কিছু খাবার যেমন আমাদের নিয়মিত খাওয়া উচিৎ তেমনি কিছু খাবার আমাদের পরিহার করা উচিত । কারণ এসব খাবার লিভারকে  ক্ষতিগ্রস্ত করে।  যেমনঃ

  • অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার।
  • মিষ্টি বা চিনি বেশি থাকে এমন খাবার।
  • অ্যালকোহল।
  • প্যাকেটজাত খাবার।

এই ধরনের খাবার লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমার কারণ, যা ফ্যাটি লিভার ডিজিজ সৃষ্টি করে। এজন্য লিভার সুস্থ রাখতে এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।  

 

লিভার ভালো রাখতে দৈনন্দিন অভ্যাস

লিভার সুস্থ রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি জীবনধারার কিছু পরিবর্তন জরুরি। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা কেবল লিভারের জন্যই নয়, আমাদের সার্বিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

  • নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।
  • পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।
  • মদ্যপান এড়িয়ে চলুন।
  • সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।

এই অভ্যাসগুলো লিভারের সুস্থতা নিশ্চিত করতে এবং সাধারণভাবে আপনার স্বাস্থ্যকে ভাল রাখতে সাহায্য করবে। যদি লিভারের সমস্যা দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং খাদ্যাভ্যাসে উল্লেখিত খাবারগুলো যোগ করুন।

 

আপনার যদি এই ব্লগটি উপকারী মনে হয়, তাহলে এটি শেয়ার করুন এবং আরও স্বাস্থ্য বিষয়ক টিপস পেতে আমাদের  সাইট ঘুরে আসুন।

Subscribe Our Newsletter

Related Products

Related Posts

SHARE

Latest Product

Latest Post