ইদানীং প্রায়শই নাকের পলিপাসের সমস্যা চোখে পড়ে। আমাদের মধ্যে নাকের পলিপাস নিয়ে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। আমাদের দুই নাকের ভেতরে হালকা গোলাপি রঙের দুইটি ফোলা মাংসপিণ্ড দেখা যায় এটা কিন্তু পলিপাস নয় এটাকে টারবিনেট বলে। পলিপাস কি,কেন হয় এবং এর থেকে প্রতিকারের উপায় আজকের ব্লগে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
নাকের পলিপাস কি?
নাকের পলিপাস (Nasal Polyps) নাকের পলিপাস হচ্ছে এক ধরনের রোগ। আমাদের নাকের ভিতর একটা লাইনিং মিউকাস মেমব্রেন আছে যারমধ্যে অনেক সময় ইডেমা হতে দেখা যায় । ইডেমা বলতে এক ধরনের তরল জমে নাকের ভেতরে ফোলাভাব দেখা যাওয়াকে বোঝায়। আর এই ইডেমা হয়ে যখন ঝুলে পড়ে যায় তখন নাকের ভিতর পলিপের মতো তৈরি হতে দেখা যায় । অনেক সময় এটি দেখতে আঙুরের মতো হয় খুব নরম এবং এর ভেতরে তরল জাতীয় কিছু পদার্থ থাকতে দেখা যায়।
এই পলিপাস যেকোনো বয়সেই হতে পারে । সাধারণত অ্যালার্জি থেকে নাকের পলিপাস হয়। আর ঠান্ডা, সর্দি, হাঁচি যাদের বেশি পরিমাণে হয় তাদের অ্যালার্জি বেশি হয়। যেখানে ধুলোবালি বেশি, ঠান্ডা পরিবেশ, যাদের নাকে সর্দি, হাঁচি বেশি হয় তাদের নাকে পলিপাস বেশি হতে দেখা যায়।
মানুষের নাকে পলিপাস সাধারণত দুই ধরনের হয়। যেমন: এন্ট্রোকোয়ানাল পলিপাস শিশুদের মধ্যে বেশি হয়। আর বৃদ্ধ বা যুবকদের ইথময়েডাল পলিপাস বেশি হয়।
দেয়ার
যদিও নাকের পলিপাস হওয়ার সঠিক কারণ এখনও চিকিৎসা গবেষণায় পুরোপুরি ভাবে জানা যায়নি। নাকের পলিপাস সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার সাথে জড়িত । এর প্রধান কারণগুলো হলো:
অ্যালার্জি বা হাঁপানি
অ্যালার্জির কারণে নাকের ভেতরের শ্লেষ্মা ঝিল্লি দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত হতে থাকে , যা পলিপাস হওয়ার একটা কারণ হিসেবে ধরা হয়। নাকের পলিপাসের সাথে সরাসরি অ্যালার্জি এবং হাঁপানির একটি সম্পর্ক রয়েছে। যারা দীর্ঘমেয়াদী অ্যালার্জি সমস্যায় ভুগছেন, যেমন অ্যালার্জিক রাইনাইটিস (Hay Fever) বা হাঁপানি তাদের মধ্যে পলিপাস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সাইনোসাইটিস
দীর্ঘস্থায়ী সাইনাস সংক্রমণ বা সাইনাস আক্রান্ত হওয়ার কারণে নাকে পলিপাস হতে পারে। যখন নাকের সাইনাসগুলো দীর্ঘ সময় ধরে সংক্রমিত থাকে তখন সাইনোসাইটিস হয়ে থাকে। যদি সাইনোসাইটিসের প্রদাহ দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে নাকের শ্লেষ্মা ঝিল্লি ফুলে উঠে এবং পলিপাস তৈরি হয়। অনেক সময় সাইনোসাইটিস এবং পলিপাস একসঙ্গে দেখা যায় এবং এটি সাইনাসের বাতাস চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করে।
বিভিন্নরকম প্রদাহজনিত সমস্যা
বিভিন্নরকম প্রদাহজনিত সমস্যাগুলো হলো। যেমন: সিস্টিক ফাইব্রোসিস, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, এবং ক্রনিক ফাঙ্গাল সাইনোসাইটিস। নাকের ভিতর পলিপাস সাধারণত নাকের ভেতরের শ্লেষ্মা ঝিল্লির দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহের ফলে গঠিত হয়। যখন নাকের ভেতরের শ্লেষ্মা ঝিল্লি দীর্ঘ সময় ধরে হতে থাকে। তখন এই ঝিল্লি স্ফীত হয় এবং নাকের মধ্যে নরম পলিপাসের মতো বৃদ্ধি হতে বেশি দেখা যায় । দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত সমস্যাগুলো যেমন: দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা সাইনোসাইটিস বা অ্যালার্জির কারণেও এই ঝিল্লির প্রদাহ বেশি হয়ে থাকে।
জিনগত প্রবণতা*:
পরিবারে কারও পলিপাস হওয়ার ইতিহাস থাকলে পরবর্তীতে অন্যদের ও পলিপাস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
বায়ু দূষণ
নাকের ভিতর পলিপাস হওয়ার আরেকটি কারণ হলো বায়ু দূষণ। দীর্ঘদিন বায়ু দূষণ, ধূমপান, এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক ক্যামিক্যালের সংস্পর্শে থাকলে নাকের ভেতরে প্রদাহ হতে পারে। যা পরবর্তীতে পলিপাসের সৃষ্টি করে থাকে।
ফাঙ্গাল সংক্রমণ
নাকের ভিতর পলিপাস অনেক সময় ফাঙ্গাল সংক্রমণের সাথেও জড়িত থাকে । ফাঙ্গাল সংক্রমণগুলো বিশেষ করে ক্রনিক ফাঙ্গাল সাইনোসাইটিসের কারণে নাকের ভেতরে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ তৈরি হয়, যা পলিপাসের আকার ধারণ করে ।
ইমিউন সিস্টেমের সমস্যা
নাকের পলিপাসের আরেকটি কারণ হতে পারে শরীরের ইমিউন সিস্টেমের সমস্যা। ইমিউন সিস্টেম ঠিকমতো কাজ না করলে শরীর সহজেই যেকোন রোগের সংক্রমণের শিকার হয় এবং প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে। ইমিউন সিস্টেমের এই সমস্যার কারণে শ্বাসযন্ত্রের ঝিল্লি ফুলে ওঠে এবং পলিপাসের আকার ধারণ করে।
উপরোক্ত লক্ষনগুলো দেখা গেলে আর দেরী না করে অবশ্যই খুব দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুবই প্রয়োজন।
নাকের পলিপাসের ঘরোয়া চিকিৎসা
কয়েকটি ঘরোয়া চিকিৎসা রয়েছে যা পলিপাস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে মনে রাখতে হবে যে পলিপাস যদি গুরুতর হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।
এখানে কিছু ঘরোয়া প্রতিকার এবং পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো।চলুন জেনে নেওয়া যাক:
লবন-পানির সলিউশন (Saline Nasal Spray)
এক কাপ উষ্ণ পানিতে ১/২ চা-চামচ লবন মিশিয়ে নাসারন্ধ্রের মাধ্যমে ধীরে ধীরে প্রবাহিত করুন। এটি প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন।
লবন-পানির মিশ্রণ (সালাইন সলিউশন) দিয়ে নাক ধুয়ে দিলে নাকের পলিপাস থেকে সাময়িক আরাম পাওয়া যায়। এটি নাকের ভিতরের শ্লেষ্মা পরিষ্কার করে এবং নিশ্বাস নেওয়ার পথ পরিস্কার রাখে।
নিশ্বাসের সাথে বাষ্প নেওয়া (Steam Inhalation)
এক বাটি গরম পানিতে মাথা ঢেকে বাষ্প নিন। এতে শ্লেষ্মা সহজে বেরিয়ে আসবে এবং শ্বাস নিতে স্বস্তি পাবেন। দিনে দুইবার এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। বাষ্প নেওয়া এই পদ্ধতি নাকের পলিপাসের কারণে শ্বাসকষ্ট দূর করতে সাহায্য করে। বাষ্প নেওয়ার মাধ্যমে শ্লেষ্মা ঢিলা হয় এবং নাকের ভিতর বাতাস চলাচল সহজ হয়।
আদার চা (Ginger Tea)
২-৩ টুকরো আদা ফুটন্ত পানিতে দিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন। এরপর তাতে মধু মিশিয়ে পান করুন। দিনে দুইবার এই চা পান করলে প্রদাহ কমাতে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
আদা প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক হিসেবে কাজ করে। এটি প্রদাহ কমাতে এবং নাকের পলিপাসের কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলো দূর করতে সাহায্য করে।
হলুদ (Turmeric)
দৈনন্দিন খাদ্যে হলুদ ব্যবহার করতে পারেন।অন্যথা এক গ্লাস কুসুম গরম দুধে এক চিমটি হলুদ মিশিয়ে পান করতে পারেন।
হলুদ প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি নাকের শ্লেষ্মা কমাতে সাহায্য করে এবং প্রদাহ কমায়।
-
Sale Product on saleOrganic Turmeric Powder- হলুদ গুঁড়া180.00৳ – 300.00৳
অ্যাপল সিডার ভিনেগার (Apple Cider Vinegar)
এক কাপ গরম পানিতে এক চা-চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার এবং মধু মিশিয়ে দিনে দুবার পান করতে পারেন।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার নাকের শ্লেষ্মা পরিস্কার করতে সাহায্য করে এবং পলিপাসের কারণে সৃষ্ট নাকের প্রদাহ কমায়।
ভিটামিন সি (Vitamin C)
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন লেবু, কমলা, পেয়ারা, এবং ব্রকলি , বিটরুট, মরিঙ্গা পাউডার আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।
ভিটামিন সি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে এবং এটি প্রদাহ প্রতিরোধে সাহায্য করে। ফলে নাকের পলিপাস কমানোর সম্ভাবনা বাড়ে।
-
Sale Product on saleবিটরুট পাউডার – Beetroot Powder
1,200.00৳Original price was: 1,200.00৳.1,000.00৳Current price is: 1,000.00৳. -
Sale Product on saleMoringa Powder- সজনে পাতা গুড়া500.00৳ – 1,900.00৳
ইউক্যালিপটাস অয়েল (Eucalyptus Oil)
কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপটাস অয়েল দিয়ে নাকের পাশে হালকা মালিশ করতে করুন।
ইউক্যালিপটাস অয়েল প্রাকৃতিক প্রদাহনাশক এবং অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে। এটি শ্বাস নিতে সাহায্য করে এবং পলিপাসের কারণে সৃষ্ট বাতাস চলাচলের বাধা দূর করতে সাহায্য করে।
গাঁজানো রসুন মধু
রসুনে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান পলিপাসের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। রসুনের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী নাকের সাইনাস ও পলিপাস সমস্যায় কার্যকর ভূমিকা রাখে।প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চা চামচ গাঁজানো রসুন মধু খান। নিয়মিত সেবনে নাকের পলিপাস ও অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন ঘরোয়া ভাবে।
-
Sale Product on saleগাঁজানো রসুন মধু – Fermented Garlic Honey900.00৳ – 2,500.00৳
নাকের পলিপাসের ক্ষেত্রে সতর্কতা
পরিশেষে বলা যায় যে, নাকের পলিপাসের জন্য ঘরোয়া উপায় গুলো সাময়িক স্বস্তি দেয়। তবে এগুলো কোনো চূড়ান্ত সমাধান নয়। যদি উপসর্গগুলো দীর্ঘস্থায়ী বা গুরুতর হয়, তবে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।