Blog
রাতকানা রোগ: কারণ, লক্ষণ, এবং প্রতিরোধে করণীয়
রাতকানা রোগ কি?
রাতকানা (Night Blindness) হলো একটি চোখের সমস্যা, যেখানে একজন ব্যক্তি রাতে বা কম আলোতে ভালোভাবে দেখতে পারে না। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় একে Nyctalopia বলা হয়। এটি মূলত রেটিনা নামক চোখের পিছনের অংশে থাকা রড কোষগুলির কার্যকারিতা কমে যাওয়ার কারণে ঘটে। এই কোষগুলো কম আলোতে দেখতে সাহায্য করে। রাতকানা রোগে আক্রান্ত হলে সন্ধ্যা বা রাতের বেলা বা কম আলোতে দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিকভাবে কাজ করে না।

রাতকানা রোগের কারণ
রাতকানা রোগের বেশ কিছু কারণ রয়েছে। সাধারণত ভিটামিন এ-এর ঘাটতি প্রধান কারণ হিসেবে পরিচিত, তবে আরও কিছু শারীরিক অবস্থা এবং জেনেটিক কারণেও এটি হতে পারে। নিচে রাতকানা রোগের কিছু সাধারণ কারণ তুলে ধরা হলো:
- ভিটামিন এ-এর অভাব: ভিটামিন এ চোখের রেটিনার সঠিক কার্যকারিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি রড কোষগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করে, যা কম আলোতে দৃষ্টিশক্তি তৈরি করে। ভিটামিন এ-এর অভাব হলে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যায় এবং রাতকানা রোগ দেখা দিতে পারে।
- রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা: এটি একটি জেনেটিক রোগ যা চোখের রেটিনার রড এবং কন কোষগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। এর ফলে রাতের দৃষ্টিশক্তি প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং পরে দিনের আলোতেও দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
- গ্লুকোমা: গ্লুকোমা একটি চোখের সমস্যা, যেখানে চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বেড়ে যায় এবং রেটিনার কোষগুলোর ক্ষতি করে। এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধ, বিশেষত গ্লুকোমা আই ড্রপস, চোখের রড কোষের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে, যার ফলে রাতকানা রোগ হতে পারে
- ক্যাটারাক্ট: ক্যাটারাক্ট হলো চোখের লেন্সে ঝাপসা ভাবের সৃষ্টি হওয়া, যা আলো চোখের মধ্যে প্রবেশে বাধা দেয়। এটি কম আলোতে দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে রাতের বেলা দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়।
- ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি: ডায়াবেটিসের কারণে রেটিনার ক্ষুদ্র রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই রোগ দেখা দিতে পারে। এর ফলে কম আলোতে চোখের রড কোষগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না।
- মাইপিয়া বা কাছের দৃষ্টি সমস্যা: যাদের মাইপিয়া বা কাছের দৃষ্টি সমস্যা রয়েছে, তাদের রাতকানা রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। এই অবস্থায়, চোখের রেটিনা আলোক সংবেদী কোষগুলোর কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে, যার ফলে রাতের বেলা দেখতে সমস্যা হয়।
- জেনেটিক কারণ: কিছু ক্ষেত্রে, রাতকানা রোগ বংশগত কারণে হতে পারে। যেমন রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা, যা একটি জেনেটিক সমস্যা এবং ধীরে ধীরে রাতের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে।
রাতকানা রোগের লক্ষণ
রাতকানা রোগের প্রধান লক্ষণ হলো রাতের বা কম আলোতে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হওয়া। তবে আরো কিছু লক্ষণ রয়েছে যা এই রোগের নির্দেশ দিতে পারে:
- রাতের বেলা বা সন্ধ্যার সময় চলাচল করতে অসুবিধা।
- টানেলের মতো দৃষ্টি (tunnel vision) যেখানে চারপাশের বস্তু অস্পষ্ট হয়ে যায়।
- উজ্জ্বল আলো থেকে কম আলোতে যাওয়ার পর চোখের দৃষ্টি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে বেশি সময় নেওয়া।
- গাড়ি চালানোর সময় রাস্তায় ভালোভাবে দেখতে না পারা, বিশেষত রাতের সময়।
- দিনে ভালো দেখা গেলেও রাতের বেলা চলাফেরায় সমস্যার সম্মুখীন হওয়া।
রাতকানা রোগ থেকে প্রতিরোধের উপায়
রাতকানা রোগ প্রতিরোধের জন্য কিছু পদক্ষেপ মেনে চলা জরুরি। নিচে রাতকানা রোগ প্রতিরোধের জন্য কিছু কার্যকর পদ্ধতি তুলে ধরা হলো:
১. ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া:
ভিটামিন এ-এর ঘাটতি পূরণে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে রয়েছে:
- গাজর
- মিষ্টি আলু
- সবুজ শাকসবজি (পালং শাক, কুমড়া শাক)
- দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য
- ডিমের কুসুম
- মাংসের যকৃৎ এই খাবারগুলো নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে রাতকানা রোগের ঝুঁকি কমানো যায়।
২. সঠিক দৃষ্টিশক্তির যত্ন নেওয়া:
দৃষ্টিশক্তি সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করা উচিত। যেকোনো চোখের সমস্যা সময়মত শনাক্ত করে চিকিৎসা নিলে রাতকানা রোগের ঝুঁকি কমানো যায়। বিশেষত যারা গ্লুকোমা বা ক্যাটারাক্টে আক্রান্ত, তাদের দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।
৩. আলো পর্যাপ্ত রাখা:
কম আলোতে দীর্ঘ সময় থাকা রাতকানা রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কাজের সময় বা রাতে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত আলো নিশ্চিত করা উচিত।
৪. গ্লুকোমা বা ক্যাটারাক্টের চিকিৎসা:
যদি গ্লুকোমা বা ক্যাটারাক্টের কারণে রাতকানা রোগের লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চোখের ওষুধ বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা যায়।
৫. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম:
পর্যাপ্ত ঘুম চোখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে সহায়ক। দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে, যাতে চোখ বিশ্রাম পায় এবং দৃষ্টিশক্তি স্বাভাবিক থাকে।
৬. ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করা:
ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল চোখের রক্তনালী ও রেটিনার ক্ষতি করতে পারে, যা রাতকানা রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এসব অভ্যাস ত্যাগ করা প্রয়োজন।
৭. ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া:
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। তেলযুক্ত মাছ (স্যামন, ম্যাকেরেল), চিয়া বীজ, ও আখরোটের মতো খাবার খেলে রেটিনার কার্যকারিতা উন্নত হয়।
৮. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা:
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির ঝুঁকি কমানো যায়, যা রাতকানা রোগের অন্যতম কারণ হতে পারে। রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করা জরুরি।
রাতকানা রোগে আক্রান্ত হলে করণীয়
রাতকানা রোগ হলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা জরুরি। নিচে কিছু করণীয় দেওয়া হলো:
- একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া এবং সমস্যার ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা।
- প্রয়োজনীয় ওষুধ সঠিকভাবে গ্রহণ করা।
- রাতের বেলা চলাচলে সতর্ক থাকা এবং পর্যাপ্ত আলো ব্যবহার করা।
- গাড়ি চালানোর সময় সতর্ক থাকা এবং প্রয়োজনে রাতের বেলা গাড়ি না চালানো।
রাতকানা রোগ একটি দৃষ্টিশক্তি সমস্যা হলেও এটি প্রতিরোধযোগ্য এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য। ভিটামিন এ-এর অভাব পূরণ, নিয়মিত চোখের পরীক্ষা, এবং সঠিক জীবনযাপন মেনে চললে এই রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যারা ইতিমধ্যেই এই রোগে আক্রান্ত, তাদের দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত এবং দৈনন্দিন জীবনে কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত, যাতে তাদের দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
Subscribe Our Newsletter
Related Products






Beetroot Powder-বিটরুট পাউডার


Diabetic Tea-ডায়াবেটিক চা

Related Posts
Latest Product
-
Pure Delight Combo Pack - পিওর ডিলাইট কম্বো প্যাক
2,850.00৳Original price was: 2,850.00৳.2,420.00৳Current price is: 2,420.00৳. -
Digestive Health Combo - ডাইজেস্টিভ হেলথ কম্বো
1,950.00৳Original price was: 1,950.00৳.1,649.00৳Current price is: 1,649.00৳. -
Eid Anando Combo Pack - ঈদ আনন্দ কম্বো প্যাক
3,320.00৳Original price was: 3,320.00৳.2,820.00৳Current price is: 2,820.00৳. -
Sohoj Ranna Combo Pack - সহজ রান্না কম্বো প্যাক
2,940.00৳Original price was: 2,940.00৳.2,499.00৳Current price is: 2,499.00৳. -
Brown Sugar - আখের লাল চিনি 180.00৳ – 850.00৳


Talbina-তালবিনা রাসুল (সঃ) এর সুন্নতি খাবার





Talbina-তালবিনা (Half Combo )


