গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কেন হয় ? কীভাবে সহজ কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে এটি এড়ানো সম্ভব?

SHARE

আপনার বাসায় আজ অনেক মুখরোচক খাবারের আয়োজন হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই যার মধ্যে তৈলাক্ত খাবার, তেলে ভাজা খাবার থাকবে। ঠিক করলেন আজকে একদম পেটপুরে খাবার খাবেন। কিন্তু খাবার খাওয়ার ঠিক খানিকটা আগ মুহুর্তে আপনার মনে পড়লো এসব খাবার আপনার পেটের সমস্যা করবে। কেননা আপনার খাবার ডাইজেস্ট এ সমস্যা রয়েছে। তো আর কি খাবারের সাথে কম্প্রোমাইজ করতে হবে আপনার। এমন মুহূর্তে খুবই খারাপ লাগবে তাইনা? লাগাটাই স্বাভাবিক। আপনার রয়েছে গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা। আপাতদৃষ্টিতে এটি কোনো রোগ নয়, তবে স্বাভাবিক জীবনযাপন খুবই দূর্বিসহ বানিয়ে ফেলে এই গ্যাস্ট্রিক সমস্যা। মাঝে মাঝে এই সমস্যা অন্য রোগের চেয়েও খারাপ অবস্থায় ফেলে দিতে পারে।  নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাত্রাই কেবল এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। 

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কেন হয় ? কীভাবে সহজ কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে এটি এড়ানো সম্ভব?
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কেন হয় ? কীভাবে সহজ কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে এটি এড়ানো সম্ভব?

তাই আসুন জেনে নেই গ্যাস্ট্রিক সমস্যা আসলে কি, কেন হয় এবং খুবই সহজেই কিভাবে গ্যাস্ট্রিক মুক্ত জীবনযাপন সম্ভব। সবকিছুই আলোচনা হবে আজকের এই ব্লগে।

 

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা কি?

ডাক্তারি পরিভাষায় পেপটিক আলসার ডিজিজ বা পিইউডি কে বলা হয় গ্যাস্ট্রিক। এসিডের কারণে পাকস্থলী, ডিওডেনাম কিংবা ইসোফেগাস যদি কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন সে অবস্থা কে বলা হয় পেপটিক আলসার ডিজিজ। যখনই বুঝবেন আপনার গ্যাস্ট্রিক সমস্যা রয়েছে, তার মানে হলো পেপটিক আলসার রয়েছে।

 

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা আসলে কেন হয়?

 এর কারণ কিছু খাবার গ্যাস্ট্রিক এর লক্ষণগুলোকে বাড়িয়ে দেয়। মূলত অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসই গ্যাস্ট্রিক সমস্যার প্রধান কারণ। এছাড়াও আরো কিছু কারণ রয়েছে: 

 

মানসিক অশান্তি

স্ট্রেস, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, কষ্ট, আঘাত প্রভৃতি কারণে গ্যাস্ট্রিক হতে পারে। 

 

খাবারের পরিমান 

আমরা বেশিরভাগ মানুষই অতিরিক্ত খাওয়ার মধ্যে তৃপ্তি  খুঁজে পাই। অতিরিক্ত খাওয়ানোকে যথাযথ আতিথিয়েতার নিদর্শন বলে মনে করি। কিন্তু আমরা জানিনা অতিরিক্ত খাবারই গ্যাস্ট্রিকের অন্যতম কারণ। ইসলামি নিয়মানুযায়ী, প্রতিবেলায় খাবারের তিন ভাগের এক ভাগ খাবার, এক ভাগ পানি এবং এক ভাগ খালি রেখে খাবার সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে। 

 

অমনোযোগী খাদ্যগ্রহণ 

খাদ্য গ্রহণের সময় মনোযোগ খাদ্যের দিকে না থাকলে মস্তিষ্ক বুঝতে পারে না প্লেটের খাবারের জন্য পাকস্থলীতে কতটুকু এসিড নির্গত করতে হবে। ফলে খাদ্য পাকস্থলীতে প্রবেশের পর নানা ধরনের বিপত্তি বাঁধে এবং খাদ্য হজমে সমস্যা দেখা দেয়। 

 

অখাদ্য গ্রহণ 

অধিকাংশ গাস্ট্রিক সমস্যা হয়ে থাকে অখাদ্য গ্রহণের কারণে। অনেকে মনে করেন দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে এটা ভুল ধারণা। রোজা রাখার সময় দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার পরেও সমস্যা হয় না। বরং গ্যাস্ট্রিক উল্টা ভালো হয়ে যায়। এটার কারণ দীর্ঘ সময় অখাদ্য গ্রহণ করতে হয় না। অখাদ্য যেমন: টেস্টি সল্ট, কন্ডেন্স মিল্ক, সাদা মিহি লবণ,  ডালডা, ভেজাল মশলা, মাংশ, তেল, সাদা চিনি, ডালডা, কাপড়ের রঙ, হাইড্রোজ বা হাইড্রোজ মিশ্রিত খাবার, সোডা, কড়া চা, কফি, গুড়া দুধ, সাদা চিনি ইত্যাদি।

 

 লিভার ফাংশন 

লিভার ফাংশনে গোলযোগ দেখা দিলে গ্যাস্ট্রিক এর সমস্যা হতে পারে।

 

ডায়াবেটিস রোগী

যেসব ডায়াবেটিস রোগীদের হজমের সমস্যা, তারা ভারী খাবার গ্রহণ করলে গ্যাস্ট্রিক হতে পারে। 

 

ঘুম

অনিয়মিত ঘুম বা নিদ্রাহীনতা গ্যাস্ট্রিকের কারণ।

 

ধূমপান 

ধূমপান কিংবা অন্যান্য রোগের ওষুধ সেবনের ফলে গ্যাস্ট্রিক হতে পারে। 

 

কম পানি পান

পরিমাণের তুলনায় কম পানি খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

 

এছাড়াও মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া, তেল ও চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়া, নিয়মমতো খাবার না খাওয়া, ব্যথানাশক ওষুধ সেবন এসব কারণেও গ্যাস্ট্রিক হয়ে থাকে।

 

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা এড়াতে সহজ কিছু পদক্ষেপ 

 

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় কোন ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই। কেননা গ্যাস্ট্রিক কোনো রোগ নয়। পরিপাকতন্ত্রের কার্যক্রম ব্যাঘাত জনিত উপসর্গ মাত্র। স্বাস্থ্যকর এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাত্রাই পারে গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি দিতে। 

 

যা খাবেন:

 

আদা

আদার রয়েছে বহুমাত্রিক উপকারিতা। পেট জালাপোড়া করা, হজম সমস্যা, বুকে ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে আদা। চায়ের সাথে কুঁচি কুঁচি করে, মধুর সাথে আদার রস মিশিয়ে,  অথবা আদা চিবিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যায়। 

 

আলু

আলু বেটে রস বের করে নিন। গরম পানির সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন দুপুর ও রাতে খাওয়ার দুই ঘন্টা আগে খেয়ে নিন। গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় উপকার পাবেন।

 

দই

দই প্রোবায়োটিক। ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে। গ্যাস্ট্রিকের অন্যতম কারণ ব্যাকটেরিয়া। মধু, কলা, দই একসাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। 

 

পানি

পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার বিকল্প নেই। সকালে খালি পেটে পুরো পেট ভর্তি করে পানি খাওয়ার অভ্যাস ৩ সপ্তাহে সুফল এনে দিবে।

 

শসা

শশা পেট ঠান্ডা রাখার ক্ষেত্রে দারুণ কার্যকরি। শসা তে বিদ্যমান ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটেরি উপাদান পেটে গ্যাসের চাপ কমাতে সাহায্য করে। 

 

 লবঙ্গ

লবঙ্গ তাৎক্ষণিকভাবে গ্যাসের সমস্যা কমিয়ে দেয়।  এসিডিটির জ্বালা এবং মুখের দূর্গন্ধ দূর করে।

 

যা খাবেন না

 

গ্যাস্ট্রিক সমস্যায় এই খাবারগুলো একদম এড়িয়ে চলবেন।

 

  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ক্ষতিকর হলো লিচু। গ্যাস্ট্রিক বুঝতে পারলে লিচু অবশ্যই পরেরবার এড়িয়ে চলতে হবে
  • ডুবো তেলে ভাজা যেকোন তৈলাক্ত খাবার।
  • যে সবজি সহজে হজম হয়না যেমন ব্রকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, পালংশাক।
  • যেকোনো ধরনের ডাল। বিশেষ করে মসুরের ডাল, ছোলা বুট, সয়াবিন, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার।
  • চিপস, চুইংগাম, আপেল, পেঁয়াজ, পেয়ারা ইত্যাদি।

 

আমাদের দেশে ৭০-৮০ শতাংশ মানুষ গ্যাস্ট্রিকের জন্য ঔষধ খায় অথচ অপ্রয়োজনীয় ঔষধ ঘরোয়া খাবারের কার্যকারিতা একেবারে কমিয়ে দেয়। দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস্ট্রিকের ঔষধ খেলে শরীরে আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ভিটামিন এর অভাব হতে পারে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিয়ে হাড় ক্ষয় করে ফেলে। এর দ্বারা কিডনি রোগ পর্যন্ত হতে পারে।  তাই নিজের রোগ সম্পর্কে আগে জানুন ভালো করে।  তারপর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করুন।

Subscribe Our Newsletter

Related Products

Related Posts

SHARE

Latest Product

Latest Post