দ্রুত বীর্যপাত (Premature Ejaculation) হলো একটি যৌন সমস্যা, যেখানে পুরুষ যৌনমিলনের সময় তার ইচ্ছার পূর্বেই দ্রুত বীর্যপাত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে প্রায় ২০-৩০% এই সমস্যার সম্মুখীন হন। তবে প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশনের সঠিক সংজ্ঞা নিয়ে একটি সাধারণ বিভ্রান্তি রয়েছে। কখন এটি সমস্যা হিসাবে ধরা হবে তার নির্দিষ্ট কোন সময়সীমা নেই।
এখানে কিছু জিনিস আমাদের মনে রাখতে হবে, কখন আমরা প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন সমস্যা বলব। এটা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। কান্ট্রি টু কান্ট্রি, রিজিওন টু রিজিওন,জিওগ্রাফি ভ্যারি করে। যেমন আমরা জেনেটিক্যাল পরীক্ষা করে দেখি সৌদি আরবের একটা মানুষ বা আফ্রিকার একটি মানুষের কিন্তু ন্যাচারালি ইজাকুলেশন টাইমটা বেশি। এশিয়া মহাদেশে সেটা কম। এখন পর্যন্ত কোনও বইখাতায় কোনও তথ্য পাওয়া যায় না যে এই সময়টুকু না হলে আমরা প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন সমস্যা বা দ্রুত বীর্যপাত বলব বা এই সময়টুকু হলে আমরা প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন সমস্যা বলব না।
যদি একজন পুরুষের ইজাকুলেশন যৌনমিলনের এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে ঘটে এবং তিনি তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তবে সাধারণত এটি প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন হিসেবে গণ্য করা হয়।তবে এটি একটি গড় ধারণা এবং ব্যক্তিভেদে সময়সীমার তারতম্য হতে পারে। সঠিক সময় নির্ধারণের জন্য ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক অবস্থা এবং যৌনজীবনের অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নেওয়া উচিত।
Table of Contents
Toggleদ্রুত বীর্যপাতের সাধারণ কারণসমূহ:
- মানসিক চাপ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।
- শারীরিক সমস্যা: হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে এই সমস্যা তৈরি হয়।
- স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের অভাব: অনিয়মিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাবার বা পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার কারণে দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা হতে পারে।
- সম্পর্কের জটিলতা: সম্পর্কের সমস্যার কারণে মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয় যা থেকে অনেকের মাঝেই এই সমস্যা দেখা দেয়।
- অতিরিক্ত উত্তেজনা: অতিরিক্ত উত্তেজনার কারণে ও দ্রুত বীর্যপাত হয়ে থাকে।
দ্রুত বীর্যপাতের প্রাকৃতিক সমাধান
১. পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ
ভালো একটি খাদ্যাভ্যাস যৌন স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এমন কিছু খাবার রয়েছে যা যৌনশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে। কিছু নির্দিষ্ট খাবার যৌনশক্তি বাড়াতে এবং দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। আসুন জেনে নিই এমন কিছু খাবার সম্পর্কেঃ
রসুন ও মধু
রসুন ও মধু এমন একটি খাবার এবং পরীক্ষিত সমাধান যা প্রাচীনকাল থেকে যে কোন যৌন সমস্যার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রসুনে থাকা অ্যালিসিন যৌন সঞ্চালন এবং যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অন্যদিকে মধু শরীরে প্রাকৃতিকভাবে শক্তি যোগায় এবং যৌন হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। তবে অনেকেই কাঁচা রসুন মধুর সাথে খেতে পারেন না। যদি কাঁচা রসুন খেতে অসুবিধা হয় সেই ক্ষেত্রে তারা গাঁজানো রসুন মধু খেতে পারেন।
এই গাঁজানো রসুন মধু এমন একটি খাবার যা মধুর মধ্যে রসুন প্রায় ৩ মাস রেখে গাঁজন প্রক্রিয়ায় তৈরি করতে হয়। যা আপনি ঘরে থাকা মধু ও রসুন দিয়ে তৈরি করতে পারবেন। গাঁজন প্রক্রিয়ার ফলে এটি সহজে খাওয়ার মতো হয় এবং এর উপকারিতা ২০ গুণ বেড়ে যায়।
যাদের সময়ের অভাব বা গাঁজানোর ঝামেলায় যেতে চান না, তারা সহজেই Fit for Life-এর গাঁজানো রসুন মধু ব্যবহার করতে পারেন। এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি এবং সরাসরি খেতে পারবেন। নিয়মিত খেলে আপনার দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা দূর হবে এবং যৌনশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
গাঁজানো রসুন মধুর উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিখাটি দেখতে পারেন।
কালোজিরা :
কালোজিরা দীর্ঘদিন ধরে আয়ুর্বেদ এবং প্রাচীন চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান যৌনশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি মানসিক চাপ কমায়, যা দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যার একটি প্রধান কারণ। কালোজিরা যৌন হরমোনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং শরীরে ভারসাম্য বজায় রাখে। এতে থাকা থাইমোকুইনোন যৌনশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ১ চা-চামচ কালোজিরার দানা এবং ১ চা-চামচ মধু মিশিয়ে সকালে ও রাতে খেতে পারেন। অবশ্যই সাথে কালোজিরা ফুলের মধু হলে সেটা আরও বেশি উপকারী। তাছাড়া খাঁটি যে কোন মধুই ভালো। যে কোন খাঁটি মধু নিশ্চিন্তে পেয়ে যাবেন ফিট ফর লাইফে। কালোজিরার দানা যারা খেতে পারেন না তারা প্রতিদিন সকালে ১ চা-চামচ কালোজিরা তেল খেতে পারেন।
কালোজিরার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লিখাটি দেখতে পারেন।
বাদাম ও বীজ
বাদাম এবং বীজ যৌনশক্তি বৃদ্ধির প্রাকৃতিক উৎস। দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা কমাতে নিয়মিত বাদাম বা যে কোন প্রকার বীজ খাওয়ার অভ্যাস করুন।যেমন- কাঠবাদাম,পেস্তা, আখরোট, চিয়া সিড। এতে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক যৌন হরমোন বৃদ্ধি করে। চিয়া সীড ওমেগা-৩ এর সেরা উৎস।
ফলমূল
ফলমূল যৌনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কলা,ডালিম,অ্যাভোকাডো এ সকল ফল খেতে পারেন। কলাতে থাকা পটাসিয়াম ও ভিটামিন বি যৌনশক্তি বাড়ায়। ডালিম প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, যা রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে । এছাড়াও ডালিম ভিটামিন ই এবং ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ, যা যৌন সমস্যা দূর করে।
ডার্ক চকলেট
ডার্ক চকলেটে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং যৌন উত্তেজনা বাড়ায়। এটি মানসিক চাপ কমিয়ে যৌন আকাঙ্ক্ষা বাড়ায়। যা আপনার দ্রুত বীর্যপাতের কারণে সৃষ্টি হতাশা দূর করবে।
ডিম
দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যায় ভুগলে আপনি নিয়মিত ডিম খেতে পারেন। ডিমে থাকা প্রোটিন এবং ভিটামিন বি৬ যৌন হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে। এটি আপনার মানসিক চাপ কমিয়ে যৌনশক্তি বাড়াবে।
২. শারীরিক ব্যায়াম বা যোগব্যায়াম
নিয়মিত ব্যায়াম শরীরকে সুস্থ রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়। দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা দূর করতে তাই শারীরিক ব্যায়ামের দিকে মনযোগী হন।
শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ
যৌনমিলনের সময় অধিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। তাই মিলনের সময় ধীরে শ্বাস নিন এবং মনোযোগ রাখুন। এটি উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
পর্যাপ্ত ঘুম
শরীরের সামগ্রিক সুস্থ্যতা বজায় রাখতে প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম অপরিহার্য। পর্যাপ্ত বিশ্রাম যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং মানসিক চাপ কমায়। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করুন। যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে কিংবা পরিপূর্ন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে তারা নিয়মিত তালবিনা খেতে পারেন। আপনি চাইলে FIT FOR LIFE এর তালবিনা খেতে পারেন, নিয়মিত তালবিনা সেবনে আপনার ঘুমের সমস্যা থাকলে তার সমাধান হবে এবং এটার পাশাপাশি আপনার যৌন সমস্যাও দূর হবে।
ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন
ধূমপান ও অ্যালকোহল যৌনশক্তি এবং বীর্যের গুণগত মান কমায়। এগুলো পরিহার করলে আপনার যৌন সমস্যা কমে যাবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
যদি প্রাকৃতিক উপায় যথেষ্ট না হয়, তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সঠিক পরামর্শ আপনার সমস্যার সমাধান দিতে পারে।
সতর্কতা বা ভুল ধারণা এড়িয়ে চলুন
বাজারে অনেক প্রকার কৃত্রিম পদ্ধতি এবং ঔষধ পাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। প্রাকৃতিক সমাধানে ধৈর্য এবং নিয়মানুবর্তিতা প্রয়োজন ।
দ্রুত বীর্যপাতের সমাধানে প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলো সবচেয়ে সেরা কারণ এর কোন ক্ষতিকর দিক নেই। নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ এবং মানসিক শান্তি বজায় রেখে আপনি সহজেই এই সমস্যার সমাধান পাবেন। যদি সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে দেরি করবেন না।
এই তথ্য আপনার বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন, যাতে তারাও এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তাহলে নিচে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। আমরা সেগুলো নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী।