ওজন কমানোর জন্য ডায়েট আমরা অনেককেই করতে দেখি। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ ওজন বাড়ানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যান। ওজন অতিরিক্ত কম হওয়ায় অনেকেই বন্ধুমহলে একটু আধটু ট্রোলের শিকার হন। এতো এতো খাবার এর ভীড়ে ঠিক কোন কোন খাবার আপনার ওজন বাড়ানোর পাশাপাশি সুস্বাস্থ্য বজায় রাখবে এটা নিয়ে আপনি দ্বিধান্বিত? তাহলে আজকের ব্লগটি আপনার জন্য। আজকের এই ব্লগে ওজন বাড়ানোর জন্য সেরা খাবারগুলো নিয়েই আলোচনা হবে যা পুষ্টিগুণ ও ক্যালোরি তে ভরপুর।
ওজন বাড়ানোর জন্য সেরা খাবারগুলো
ওজন বাড়ানোর প্রক্রিয়াটা বেশ সহজ। আপনার শরীরের মেটাবলিজম বেশি হলে এবং আপনি যদি প্রতিদিন উল্লেখ করার মতো ব্যায়াম করেন, তাহলে আপনার শরীরে ক্যালোরির চাহিদা বাড়বে। শুধুমাত্র বেশি বেশি খাওয়ার মাধ্যমে ওজন বাড়ানো সম্ভব না। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক সেরা খাবারগুলোর নাম এবং পুষ্টিগুণ সম্পর্কে।
১) বাদাম
বাদামের মধ্যে যেমন আমন্ড, কাজুবাদাম এ রয়েছে উচ্চ ক্যালোরি এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট। ফলে ওজন বৃদ্ধি অনেক দ্রুত ও স্বাস্থ্যসম্মত হয়। এছাড়াও বাদাম দিয়ে মাখন তৈরী করে খেলে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন, ভিটামিন ই এবং ফাইবার পাওয়া যায়। এছাড়াও বাদামে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাট। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একমুঠো বাদাম কিংবা বাদামের তৈরি মাখন খেতে পারলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
২) মাছ ( স্যামন টুনা)
স্যামন ও টুনা মাছে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এ্যাসিড, এবং প্রোটিন। যা পেশি গঠনে সহায়তা করে ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়। স্যামনে রয়েছে পটাসিয়াম, সেলেনিয়াম, ভিটামিন এবং উচ্চ মাত্রায় প্রোটিন। তাই সপ্তাহে ২-৩ দিন খাদ্যতালিকায় স্যামন ও টুনা মাছ থাকলে ওজন বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
৩) দুগ্ধজাতীয় খাবার
দুগ্ধজাতীয় খাবারে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান। দুধের মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম হাড় শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। দুধের তৈরি দই, পনির হলো প্রোটিনের চমৎকার উৎস। যা পেশি বৃদ্ধি এবং পেশি মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত অ্যামিনো এ্যাসিড সরবারহ করে। এছাড়াও দুগ্ধজাত খাবারে রয়েছে ভিটামিন-ডি যা ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়ক। এর বাইরে ও দুগ্ধজাতীয় খাবার ফসফরাস এবং পটাশিয়াম এর মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সরবারাহের কাজ করে থাকে। যারা ওজন বাড়াতে চান তাদের জন্য উচ্চ চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাতীয় খাবার খাদ্যতালিকায় যুক্ত করা উচিৎ।
৪) চিজ ও পনির
চিজে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ফ্যাট। যা ওজন বাড়ানোর জন্য একদম আদর্শ। চিজ ও পনির এর বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। তবে ফেটা ও চেডার চিজ ক্যালোরি পুষ্টিগুণে সবচাইতে বেশি সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম চিজে রয়েছে ৩৪৬ কিলোক্যালোরি শক্তি, ২৫.১ গ্রাম ফ্যাট এবং ২৪.৬ গ্রাম প্রোটিন। বোঝাই যাচ্ছে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ চিজ ও পনির কতটা উপকারী। চিজ ও পনির হজমশক্তি বৃদ্ধি করে ফলে খাদ্যগ্রহনের চাহিদাও বাড়ে, যা ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৫) অ্যাভোক্যাডো
স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের অন্যতম উৎস হলো অ্যাভোক্যাডো। অসংখ্য রোগব্যাধি থেকে মুক্তি দিতে পারে বলে অ্যাভোক্যাডো সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। বিশেষজ্ঞদের মতো অ্যাভোক্যাডো তে রয়েছে ভিটামিন সি, ই, কে, বি৬, ফোলেট, নিয়াসিন, রাইবোফ্ল্যাভিন, বিটা ক্যারোটিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, লিউটিন, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো একগুচ্ছ পুষ্টি উপাদান। একটি অ্যাভোক্যাডে তে রয়েছে ৩২২ ক্যালোরি শক্তি। সুস্থসবল জীবনের জন্য পেশী গঠন ও ওজন বৃদ্ধিতে খাদ্যতালিকায় অ্যাভোক্যাডো যুক্ত করা অবশ্যই বুদ্ধিমানের কাজ।
৬) রেড মিট ( গরু, খাসি)
রেড মিট এ রয়েছে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন ও ক্রিয়েটিন। ওজন বাড়াতে যার কার্যকারিতা সূদুরপ্রসারী। এছাড়াও ভিটামিন বি-১২, আয়রন, নিয়াসিন, জিংক, ফসফরাস, থায়ামিন ও রিবোফ্লাভিন এর অন্যতম উৎস হলো রেড মিট। এটা পেশি গঠন ও শক্তি যোগাতে ভীষণ কার্যকরী। তবে রেড মিট পরিমিত পরিমাণে এবং চর্বিহীন অংশ খাওয়ার অভ্যাস করা উচিৎ।
৬) ডিম
পুষ্টিগুনে ভরপুর এবং প্রোটিন এর সবচেয়ে সহজলভ্য উৎস হচ্ছে ডিম। অনেকেই ভাবেন ডিমের কুসুম এ কোলেস্টেরল আছে, যা ক্ষতিকর। হ্যাঁ ডিমের কুসুমে কোলেস্টেরল আছে তবে সরাসরি রক্তের কোলেস্টেরলের সাথে এর প্রভাব নেই। আধুনিক গবেষণা বলছে ডিম ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে সহায়ক। তার মানে ডিম যে তেল বা স্যাচুরেটেড ফ্যাট দিয়ে রান্না করা হচ্ছে সেটা ক্ষতিকর। এজন্য কুসুম সহ সেদ্ধ ডিম স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ওজন বাড়াতে কার্যকরী। স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ ডিম প্রতিদিন ২-৩ টা খেলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পাবে।
৮) আলু ও অন্যান্য স্টার্চ জাতীয় সবজি
আলু, কুমড়া, শিম, এবং মিষ্টি আলুর মতো সবজিতে স্টার্চ থাকে যা শরীরের শক্তি বাড়ায় এবং ওজন বাড়াতে সহায়তা করে। এছাড়াও আলুতে প্রচুর পরিমানে ক্যালোরি এবং কার্বোহাইড্রেট রয়েছে যা শরীরর ওজন বৃদ্ধিকে আরো গতিশীল করে। এজন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় স্টার্চ সমৃদ্ধ সবজি যোগ করা ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে।
৯) খেজুর এবং শুকনো ফল
খেজুর, কিশমিশ এবং অন্যান্য শুকনো ফল ওজন বাড়ানোর জন্য খাদ্যতালিকায় আদর্শ সংযোজন। এগুলো ক্যালোরি ও পুষ্টিতে ভরপুর। খাবার শেষে অনেকেই ডেজার্ট খেতে পছন্দ করেন। ডেজার্ট এর জায়গায় প্রতিদিন কিছু শুকনো ফল বা ফলের চাটনি খেলে দ্রুত ক্যালোরি যোগ হয়। এছাড়াও খেজুরে প্রচুর ফাইবার থাকে যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে এবং শরীরে দ্রুত শক্তির যোগান দেয়।
১০) কলা
কলা তে বিদ্যমান ভিটামিন বি-৬ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। কলা পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। মাঝারি সাইজের একটি কলায় ২৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট বিদ্যমান। যা শরীরের শক্তি যোগায় এবং ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও কলায় রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার, যা হজমে সহায়তা করে। ফলে অন্যান্য যেসব খাদ্য গ্রহণ করা হয়, তা সহজেই হজম হয়ে যায় নিয়মিত কলা খেলে। এছাড়াও হার্টের রোগের ঝুঁকি কমাতে কলা ভালো উপকারী। কলা সারাবছরই পাওয়া যায় এবং খুবই সহজলভ্য। তাই প্রতিদিন কলা খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করাও সহজ।
১১) স্বাস্থ্যকর তেল
তেল আমরা রান্নার কাজে ব্যবহার করে থাকি। তেল স্বাস্থ্যকর না হলে অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার খেলেও অস্বাস্থ্যকর তেলে রান্নার কারণে আমরা যথেষ্ট পুষ্টিগুণ থেকে বঞ্চিত হই। তাই স্বাস্থ্যকর তেল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। এক্ষেত্রে নারিকেল তেল, জলপাই তেল এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর তেল ক্যালোরি সমৃদ্ধ।
ওজন বাড়ানোর খাবারগুলি কি পরিমাণে খাবেন?
প্রথমত আপনি নিয়মিত যেসব খাবার খান, চেষ্টা করবেন এই ব্লগে উল্লেখিত খাবারগুলো তার সাথে যোগ করতে। নিয়মিত খাবার বাদ দিয়ে এসব খাবার খেলে ওজন বৃদ্ধি পাবে বিষয়টি মোটেই এমন নয়। সবসময় সব খাবার এভেইলেভল নাও থাকতে পারে। নিজের পছন্দের যেকোনো খাবারই খেতে পারবেন। তবে দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ ক্যালোরি বেশি খাওয়া নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই আপনার ওজন বৃদ্ধি স্বাস্থ্যকর উপায়ে হবে।
ওজন বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাদ্য গ্রহণের গুরুত্ব অপরিসীম। সঠিক খাদ্য নির্বাচন করে এবং পুষ্টিকর উপাদানসমৃদ্ধ খাবার খেলে ওজন বৃদ্ধি সহজ হয়। এতে শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তি ও পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়। ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে পরিমিত খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং পুষ্টিগুণ ও ক্যালোরি ভিত্তিতে সঠিক খাবার বেছে নিয়ে খাদ্যতালিকা তৈরি করলে একটি সুস্থ ও শক্তিশালী শরীর গঠন সম্ভব।