শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য কি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

শিশুদের জন্য সবসময়ই  একটু বাড়তি যত্নের প্রয়োজন পড়ে। যত্নের হেরফের হলে তারা নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে। শিশুদের একটি কমন সমন্যা কোষ্ঠকাঠিন্য। শিশুরা যদি কোষ্ঠকাঠিন্যে আক্রান্ত হয় তাহলে তারা খুব দ্রুত দুর্বল হয়ে পরে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যে আমরা শিশুদের প্রতি বেশি সচেতন হব। কারণ এই সমস্যায় পড়লে একটা শিশুর স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়।

Table of Contents

তাই আজকের ব্লগে আমরা শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার ঘরোয়া উপায়

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য বেশ অস্বস্তিকর একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য তাদের স্বাভাবিক জীবনে বাধা সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘস্থায়ী হলে অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।

তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, কোষ্ঠকাঠিন্য বলতে আসলে কী বোঝায়, এটি কেন হয় এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি :

 

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য কি?

কোষ্ঠকাঠিন্য হলো এমন এক অবস্থা, যেখানে শিশুর মলত্যাগ কঠিন ও শক্ত হয়ে যায়। ফলে মলত্যাগ করতে গেলে শিশুর কষ্ট হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে শিশুর মলত্যাগের ফ্রিকোয়েন্সি কমে যায়, মলত্যাগ করতে গেলে ব্যথা বা চাপ অনুভব হয়। শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যাটি কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে কোনো শিশু যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা নিয়ে বড় হতে থাকে, তা তার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।

 

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কিভাবে বুঝবো ?

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হলে সাধারণত  বেশ কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন :

 

  • মল ত্যাগে কষ্ট

শিশু মল ত্যাগের সময় খুব জোরে চাপ দেয় বা কষ্ট পায়।

  • মল শক্ত ও শুকনা

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে মল শক্ত ও শুকনা হয়, যা ত্যাগ করতে সমস্যা হয়।

  • মল ত্যাগের ফ্রিকোয়েন্সি কমে যাওয়া 

সাধারণত ৩-৪ দিন বা তার বেশি সময় পর মল ত্যাগ করে।

  • পেট ব্যথা বা পেট ফুলে যাওয়া

কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পেটে ব্যথা বা ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

  • ক্ষুধা কমে যাওয়া

কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে ক্ষুধা কমে যায়। যার ফলে শিশুর খাবারে অনীহা দেখা দিতে  পারে।

উপরোক্ত এই লক্ষণগুলো যদি কোন শিশুর থাকে, তবে শিশুর জন্য দ্রুত  চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার  কারণসমূহ :

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু খাদ্যাভ্যাসগত এবং কিছু শারীরিক। নিম্নে শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যর প্রধান কারণগুলো উল্লেখ করা হলো :

  • খাদ্যাভ্যাসের সমস্যা

শিশুদের খাদ্য তালিকায় যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার না থাকে, তাহলে তাদের মল কঠিন বা শক্ত হয়ে যেতে পারে। এছাড়া যেসব শিশু অধিক পরিমাণে দুধ পান করে কিন্তু পানি ও অন্যান্য তরল কম পান করে, তাদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

  • পানি কম পান করা

শিশুরা পানি কম পান করলে শরীরের অভ্যন্তরে পানির সংকট দেখা দেয়। ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি পুনরায় শোষণ শুরু হয় এবং তা মলকে কঠিন বা শক্ত করে তোলে।

  • সাইকোলজিকাল কারণ

শিশুরা অনেক সময় মলত্যাগের জায়গায় যাওয়া নিয়ে ভয় পেয়ে যায়, যেমন স্কুল বা পাবলিক টয়লেট। ফলে তারা মলত্যাগ না করার চেষ্টা করে এবং এ অবস্থায় মল কোলন বা অন্ত্রের মধ্যে দীর্ঘসময় ধরে থাকলে তা শক্ত হয়ে যায়।

  • ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কিছু ঔষধ যেমন আয়রন সাপ্লিমেন্ট, অ্যান্টাসিড ইত্যাদি খাওয়ার পর কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

  • শিশুদের অবহেলা

শিশুরা অনেক সময় খেলায় মগ্ন থাকে এবং টয়লেটে যেতে চায় না। ফলে মলত্যাগের প্রয়োজন হলেও তারা তা দমিয়ে রাখে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ।

  • জেনেটিক বা শারীরিক কারণ

কিছু শিশুর জেনেটিক কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের শিকার হতে পারে। এছাড়া ও থাইরয়েড সমস্যার মতো কিছু শারীরিক সমস্যা থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।

 

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের ঘরোয়া সমধান :

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রতিকারে কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন করা, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য সুষম খাদ্য তালিকা তৈরির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে।

১. প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার 

 শিশুর প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত আঁশ জাতীয় খাবার যোগ করা উচিত। ফলমূল, শাকসবজি এবং দানা শস্য আঁশের প্রধান উৎস। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কিছু বিশেষ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। যেমন:

ফলমূল খাওয়ানো : আপেল, কলা, পেয়ারার মতো ফল শিশুর জন্য ভালো। তবে বেশি কাঁচা কলা কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়াতে পারে।

শাকসবজি খাওয়ানো : গাজর, মিষ্টি আলু, এবং বীজযুক্ত সবজি।

মটরশুটি এবং দানা শস্য: চিড়া, ডাল, ওটমিল, এবং ব্রাউন রাইস ইত্যাদি।

২. পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার গ্রহণ নিশ্চিত করা 

কোষ্ঠকাঠিন্যে শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও তরল জাতীয় খাবার গ্রহণে উৎসাহিত করতে হবে। সাধারণত দৈনিক পর্যাপ্ত পানি পান করলে অন্ত্রের মধ্যে মল নরম থাকে। এছাড়া ফলের রস, স্যুপ ভালো উপকার করে।

৩. অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার বন্ধ রাখা 

প্রক্রিয়াজাত খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে  চিপস, ফাস্ট ফুড এবং কোল্ড ড্রিঙ্কস যা কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করতে পারে। এ ধরনের খাবারে চিনি ও ফ্যাটের পরিমাণ বেশি থাকে এবং আঁশের পরিমাণ কম থাকে। তাই অবশ্যই প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে শিশুকে বিরত রাখতে হবে।

৪. নিয়মিত টয়লেট করার অভ্যাস গড়ে তোলা

শিশুকে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে টয়লেটে বসার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, বিশেষ করে সকালের দিকে।

৫. টয়লেট ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করা

শিশুদের জন্য টয়লেট ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ব্যবস্থা করতে হবে। এতে তারা টয়লেটে নিয়মিত মলত্যাগ করতে আগ্রহী হবে।

৬.  শারীরিক কার্যক্রম বাড়ান

শিশুকে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি এবং খেলাধুলায় উৎসাহিত করতে হবে। শারীরিক কার্যক্রম অন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বেঁচে থাকা যায়।

 

শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা

শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য চিকিৎসার জন্য কিছু ঔষধ আছে। তবে চিকিৎসা শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

১. ল্যাক্সেটিভ

মল নরম করার করার জন্য সাধারণত ডাক্তার ল্যাক্সেটিভ ঔষধ দিয়ে থাকেন।এটি অন্ত্রে পানি ধরে রাখে, যা মলকে নরম ও মোলায়েম করতে সাহায্য করে।

২. প্রোবায়োটিকস

প্রোবায়োটিকস অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে তোলে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রোবায়োটিকস দেওয়া যেতে পারে।

৩. পেটে ম্যাসাজ করানো

শিশুর পেটে নরম ম্যাসাজ করানো যেতে পারে, যা অন্ত্রের নড়াচড়া বাড়িয়ে মলত্যাগ সহজ করে।

 

পরিশেষে বলা যায় যে, ঘরোয়া প্রতিকারগুলো শিশুর কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে কার্যকর হতে পারে। তবে আপনার সন্তানের কোষ্ঠকাঠিন্যের চলমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় । যদি দেখেন যে কোষ্ঠকাঠিন্য অব্যাহত রয়েছে বা পেটে ব্যথা হচ্ছে , মলে রক্ত বা ওজন হ্রাসের মতো গুরুতর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে , তাহলে দেরী না করে দ্রুত একজন শিশু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন এবং চিকিৎসা নিন।

Related Posts

যবের ছাতুর উপকারিতা

যবের ছাতু বহু প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের খাদ্যতালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত হলেও সময়ের

Read More »
Shopping cart
Sign in

No account yet?

Start typing to see products you are looking for.

Table of Contents

Index
Shop
0 Wishlist
0 items Cart
My account