কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে যে সব খাবার খেতে হবে

খাদ্যাভ্যাসের সাথে আমাদের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। খাদ্য গ্রহণের তারতম্যের কারণে আমরা নানাবিধ শারীরিক জটিলতার সম্মুখীন হই। আর যা প্রভাব ফেলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর। তাই খাদ্য গ্রহনের সাথে খাবারের পুষ্টিগুণ, খাবারের পরিমান, খাবার প্রস্তুত প্রক্রিয়া, সময় আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে সৃষ্ট এক রোগের নাম ‘কোষ্ঠকাঠিন্য’। খুবই সাধারণ এবং অতিপরিচিত রোগ হলেও এই রোগের দীর্ঘকাল স্থায়িত্ব আমাদের শরীরে নানা জটিলতার জন্ম দেয়, সেই সাথে স্বাভাবিক জীবনযাপন হয়ে ওঠে দূর্বিষহ। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য কে মোটেই অবহেলা করা উচিৎ না। এই রোগ থেকে মুক্তির জন্য প্রতিকার যেমন জরুরি, তেমনি প্রতিরোধ ব্যবস্থাও জানা থাকা উচিৎ। এ লক্ষ্যে আমাদের খাদ্যতালিকায় কিছু সংযোজন – বিয়োজন আবশ্যিক।

তাই আজকে আমরা এই ব্লগে আলোচনা করবো কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে আপনি মূলত কি খাবেন ? কিন্তু তার আগে জেনে নেই ছোট করে কোষ্ঠকাঠিন্য কি ?


কোষ্ঠকাঠিন্য কি এবং কেন হয়?

কোষ্ঠকাঠিন্য হলো এক ধরনের হজমজনিত সমস্যা, যার ফলে মল শক্ত এবং শুষ্ক হয়ে যায়। সাধারণত সপ্তাহে তিনবারের কম মলত্যাগ করা এবং মলত্যাগে কষ্ট হওয়া কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ। এটি হজম প্রক্রিয়ার বিঘ্নের ফলে ঘটে থাকে, যার অন্যতম কারণ হলো খাদ্যতালিকায় আঁশ বা ফাইবারযুক্ত খাবারের ঘাটতি। এছাড়া, পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনও কোষ্ঠকাঠিন্যের মূল কারণ হতে পারে।

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে যেসব খাবার খেতে হবে:


ঐতিহ্যগত চিকিৎসা পদ্ধতির বাইরে খাদ্যতালিকায় নিম্নলিখিত খাদ্যগুলো সংযোজন এর মাধ্যমে আমরা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে পারি।

কলা: কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার অন্যতম কারণ হলো আমাদের খাদ্যতালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের ঘাটতি। সেই জায়গা থেকে কোষ্ঠকাঠিন্যের মহৌষধ বলা যায় কলা কে। কেননা, কলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার। এছাড়াও কলায় আরো রয়েছে পটাশিয়াম। যা মানবদেহের বৃহদান্ত্র ও ক্ষুদ্রান্ত্রের কার্যক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় ফলে আমাদের হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। তাই তিনবেলা খাবার শেষে একটি করে কলা খাওয়ার অভ্যাস আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দিতে পারে।

শাকসবজি: আমরা ইতিমধ্যেই জেনেছি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবারের বিকল্প নেই। আর আঁশের সবচেয়ে ভালো উৎস হচ্ছে শাকসবজি। বিশেষ করে কলমিশাক। এছাড়াও লাউ, পেঁপে, চালকুমড়া, ঢেড়শ, মিষ্টিকুমড়া প্রভৃতি। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফ্রেশ মৌসুমি শাকসবজি রাখা আবশ্যক।

আপেল: খোসাসমেত আপেল কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে দারুণ কার্যকরি। আপেল এর খোসায় পর্যাপ্ত আঁশ থাকায় তা মল নরম করতে সহায়ক। অবশ্যই আপেল খাওয়ার আগে কিছু সময় পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।

নাশপতি: শরীরে ফাইবার এর চাহিদা পূরণে নাশপতি খুবই কার্যকরি। আমাদের দৈনিক ফাইবার বা আঁশ এর চাহিদা প্রায় ২২ শতাংশ পর্যন্ত পূরণ করতে পারে শুধুমাত্র একটি নাশপতি। যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।

পেয়ারা: পেয়ারা শুধু কোষ্ঠকাঠিন্যই দূর করে না বরং শরীরের ওজন কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই পেটের সমস্যা সমাধানে পেয়ারা সবার প্রথম পছন্দ হওয়া উচিৎ।

কমলা ও ওটস: প্রতিটি কমলায় প্রায় ৪ গ্রাম করে আঁশ পাওয়া যায়। এবং এক কাপ ওটস এ দ্রাব্য ও অদ্রবণীয় মিলিয়ে প্রায় ২ গ্রাম আঁশ মেলে। কমলা তে থাকে ‘ফ্লাভানল’ নামক উপাদান যা ‘ল্যাক্সাটিভ’ বা রেচক হিসাবে কাজ করে।

ড্রাই ফ্রুটস: খাবারে ফাইবার এর অন্যতম উৎস হলো ড্রাই ফ্রুটস। যেমন কিশমিশ, চিয়া সীড প্রভৃতি। এছাড়া ডুমুরেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার থাকে। তাই কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে খাদ্য তালিকায় ড্রাই ফ্রুটস এর সংযোজন দারুণ উপকারী।

টক দই: প্রোবায়োটিক সম্পন্ন খাবারের মধ্যে অন্যতম হলো টক দই। যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ল্যাকটিক অ্যাসিড। এবং ল্যাকটিক অ্যাসিড কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন অন্তত একবেলা খাবার খাওয়া শেষে ২-৩ চামচ টক দই খাওয়ার অভ্যাস কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দিতে পারে।

নারিকেল তেল: নারিকেল তেল আমরা নানাবিধ কাজে ব্যবহার করি। তবে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের প্রতিকার হিসাবেও নারিকেল তেল ভালো কাজ করে। নারিকেল তেল এ থাকা ফ্যাটি এ্যাসিড মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তাই রান্নার কাজে কিংবা সালাদ এর সাথে মিশিয়ে নারিকেল তেল খেতে পারেন।

যষ্টিমধু: আয়ুর্বেদ তথ্যমতে শরীরের হজমশক্তি বৃদ্ধিতে যষ্টিমধু খুবই কার্যকরি। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সবচেয়ে বেশি সহায়ক যষ্টিমধু। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা সমাধানে এক কাপ পানিতে আধা চা চামচ যষ্টিমধু গুড়া ও গুড় মিশিয়ে খেতে পারেন।

লাল চাল ও লাল আটা: চাল এবং রুটি আমাদের শরীরে শর্করার প্রধান উৎস। তাই এটি আমাদের গ্রহণ করতেই হবে। কিন্তু লাল চাল ও লাল আটা তে ফাইবার বা আঁশ থাকে পরিমানে অনেক বেশি। তাই আমাদের লাল চাল ও লাল আটা খাওয়ার অভ্যাস করা উচিৎ।

তোকমা: কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে তোকমা হতে পারে খুবই উপকারী একটি খাবার। পানিতে ঘন্টাখানেক ভিজিয়ে তারপর খেলে বেশি পুষ্টিগুণ পাওয়া যায়। বিভিন্ন শরবতের সাথে মিশিয়েও তোকমা খাওয়া যায়।

অ্যালোভেরা: আমাদের দেহের ত্বক ও চুলের যত্নে অ্যালোভেরার ব্যবহার সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত। কিন্তু ‘ল্যাক্সাটিভ’ জাতীয় সবজি হওয়ায় মল পিচ্ছিল করতে অ্যালোভেরা প্রায় বিকল্পহীন। অ্যালোভেরা যে-কোনো কিছুর সাথে শরবত হিসাবে খাওয়া যেতে পারে।

ইসবগুলের ভুসি: ইসবগুলের ভুসি কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের জন্য একটি তাৎক্ষণিক চিকিৎসা। যা শুধু মল নরমই করে না, পাশাপাশি মলের পরিমান বৃদ্ধি ও মলত্যাগ সহজ করতে সাহায্য করে। কুসুম গরম একগ্লাস পানির সাথে ২ চা চামচ ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এবং রাতে ঘুমানোর আগে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। ইসবগুলের ভুসি তে রয়েছে অনেক বেশি পরিমানে অদ্রবণীয় আঁশ যা পানি শোষণ করে। এজন্য ইসবগুলের ভুসি খেলে দৈনিক অন্তত পক্ষে ২ লিটার পানি পান করতেই হবে। অন্যথায় ইসবগুলের ভুসি শরীর থেকে পানি শোষন করে মলত্যাগ আরো বেশি কষ্টসাধ্য করে তুলবে।

পর্যাপ্ত পানি: ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি দৈনিক ৩ লিটার খনিজ পানি খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে আংশিক বিকল্প হিসেবে টমেটো, শসা, গাজর ও কাঁচা পেঁপে সালাদ বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। শসায় প্রায় ৯৪ শতাংশ পানি থাকে। এবং পানি মল নরম করতে সাহায্য করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে এমন প্রায় সব খাবার এবং তার নির্দেশনাই এই আর্টিকেলে দেওয়া আছে। এখানে নির্দেশিত সব খাবারই খেতে হবে বিষয়টি এমন নয়। মৌসুম, আবহাওয়া এবং সহজলভ্যতার উপর ভিত্তি করে আমরা খাবার নির্বাচন করতে পারি। বিশেষ করে আমাদের মাথায় রাখতে হবে খাদ্য তালিকায় ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের ঘাটতিই আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের দিকে ঠেলে দেয়। তাই যেসব খাবারে বেশি বেশি ফাইবার বা আঁশ পাওয়া যায়, আমরা চেষ্টা করবো আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় তা সংযোজন করতে। তাহলেই কেবল আমরা নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে পারি।

Related Posts

Shopping cart
Sign in

No account yet?

Start typing to see products you are looking for.
Shop
0 Wishlist
0 items Cart
My account