Blog

কেন ঘি কে স্বাস্থ্যকর চর্বি বলা হয়? ঘি-এর পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি তে মায়ের ভালোবাসা পরিমাপের অন্যতম মাপকাঠি ছিলো আপনার প্লেটে অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি কতটুকু ঘি দেওয়া হয়েছে সেই পরিমাণ দিয়ে। তবে ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে অনেকেই এই স্যাচুরেটেড ফ্যাট বা সম্পৃক্ত চর্বিকে দায়ী করে থাকেন। তাই অনেকেই আছেন ওজন বৃদ্ধি এবং শরীরের কোলেস্টেরল বাড়ার ভয়ে ঘি খেতে ভয় পান। কিন্তু আসলেই কি ঘি ভয় পাবার মতো চর্বি? আমাদের মধ্যে অনেকের মাঝেই এরকম ভ্রান্ত বিশ্বাস আছে।  আজকের এই ব্লগ পড়ার পর আমাদের মাঝে  ঘি নিয়ে আর কোনো ভীতি থাকবে না। বরং আমরা জানতে পারবো কেন ঘি স্বাস্থ্যকর চর্বি হিসেবে বিবেচিত এবং ঘি এর পুষ্টিগুণ, সেইসাথে ঘি খেলে কি কি উপকারিতা পাওয়া যায় সে সম্পর্কে।

কেন ঘি কে স্বাস্থ্যকর চর্বি বলা হয়? ঘি-এর পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

কেন ঘি কে স্বাস্থ্যকর চর্বি বলা হয়? ঘি-এর পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

Table of Contents

ঘি স্বাস্থ্যকর চর্বি হিসেবে বিবেচিত কেন?

ঘি তে রয়েছে ৪ ধরনের ভিটামিন। এছাড়াও এটি  ল্যাকটোজ এবং কেসিন মুক্ত হওয়ায়  সহজেই হজম করা যায়। ঘি স্বাস্থ্যকর চর্বি হিসেবে বিবেচিত হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে :

 

স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি এসিড

ঘি তে রয়েছে শৃঙ্খলিত ফ্যাটি এসিড (MCT) যা সহজে হজম করতে সাহায্য করে। এই ফ্যাটি এসিড আমাদের দেহের কোষকে উন্নত করে।

 

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর

ঘি তে বিদ্যমান ভিটামিন এ, ই, পটাশিয়াম, ফসফরাস সহ আরো অনেক পুষ্টি উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।এছাড়াও ঘি আমাদের দেহকে বিষাক্ত পদার্থ থেকে মুক্ত রাখে।

 

প্রোটিন শোষণে সহায়ক

ঘি খেলে মানবদেহে অন্যান্য পুষ্টির শোষণ বাড়ে বিশেষ করে যেসব ভিটামিন ফ্যাটের মধ্যে দ্রবণীয়।

হৃদযন্ত্রের সুস্থতায়

ঘি তে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে, যা হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

 

অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ

ঘি প্রাকৃতিক-ভাবে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ সম্পন্ন যা মানবদেহের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

 

হজমশক্তি বৃদ্ধি

ঘি তে থাকা ব্যাটাইরিক এসিড অন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং হজমে সহায়ক।

 

আর এ কারণেই ঘি প্রাকৃতিকভাবে উপকারী ফ্যাটি এসিড এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি স্বাস্থ্যকর চর্বি হিসেবে বিবেচিত হয়।

 

ঘি-এর পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

আমরা অনেকেই দুধের পুষ্টি গুণাগুণ সম্পর্কে জানলেও ঘি সম্পর্কে তেমন জানিনা। দুধের তৈরি এমন বেশকিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের দেহের জন্য প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে অনেক উপকারী। এরকমই একটি উপাদান হলো ঘি। প্রাচীনকালে ঘি সরাসরি খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তবে বর্তমানে অনেকেই বেশকিছু রান্নার কাজে তেলের পরিবর্তে ঘি ব্যবহার করে থাকেন। দৈনন্দিন জীবনের নিত্য ব্যবহার্য এক উপাদানে পরিণত হয়েছে ঘি। নিয়মিত ঘি ব্যবহার করলেও ঘি এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা একটু কম ই জানি। ঘি এর অসংখ্য পুষ্টিগুণ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নিই:

 

ভিটামিন এ

ভিটামিন এ এর অভাবে রাতকানা রোগ হয়। ঘি তে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-এ। এছাড়াও ভিটামিন-এ আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

ভিটামিন-ডি

ঘি তে রয়েছে ভিটামিন – ডি,  যা আমাদের হাড়ের গঠন মজবুত করা ছাড়াও আমাদের দেহের সকল ক্যালসিয়াম এর অভাব পূরণ করে।

 

ভিটামিন-ই

হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বাড়াতে ভিটামিন-ই এর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ঘি খেলে আমারা পেতে পারি পর্যাপ্ত ভিটামিন -ই।

 

ভিটামিন-কে

হাড়ের গঠন সুগঠিত করতে ভিটামিন কে এর রয়েছে উল্লেখযোগ্য অবদান।  ঘি তে রয়েছে ভিটামিন কে এর পুষ্টিগুণ।

 

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর কাজ হলো আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ঘি তে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

 

ব্রেইন টনিক

ঘি এর মধ্যে থাকা এক ধরনের ব্রেইন টনিক উপাদান রয়েছে যা আমাদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

 

ফ্যাটি এসিড

ঘি তে রয়েছে ফ্যাটি এসিড।  যা আমাদের শরীরের ওজন কমাতে সহায়ক।

 

ব্যাটাইরিক এসিড

হজম ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যাটাইরিক এসিড অনন্য। আর   ঘি তেই আমরা পেয়ে যাই ব্যাটাইরিক এসিড।

 

ওমেগা- ৩ ফ্যাট

শরীরের অতিরিক্ত মেদ  বিশেষ করে পেটের নিচের অংশে মেদ কমাতে ঘি এর মধ্যে থাকা ওমেগা ৩ দারুণ কাজ করে।  

 

কনজুগেটেড লিলোনেক এসিড

ঘি এর মধ্যে এইসডিএল বা ভালো কোলেস্টেরল কনজুগেটেড লিলোনেক এসিড রয়েছে। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।

 

ঘি এর যত স্বাস্থ্য উপকারিতা

হৃদরোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমের সমস্যা, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম সমস্যার সমাধান ছাড়াও ঘি এর রয়েছে বহুমুখী উপকারিতা। যেমনঃ

 

আর্থ্রাইটিস দূর করে 

খালি পেটে ঘি খেলে শরীরে বিশেষ কিছু উপাদান বাড়তে থাকে যা হাড়ের জয়েন্ট সচল রাখে পাশাপাশি ক্যালসিয়াম এর অভাব দূর করে। আর তাই আর্থ্রাইটিস সহ হাড়ের যেকোনো সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা একেবারেই কমে যায়।

 

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে

খালি পেটে ঘি খেলে ত্বকের ভিতরে কোলাজেন বাড়তে থাকে যা ত্বকের ভেতর থেকে উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এছাড়াও রাতে ঘুমানোর পূর্বে হাতে সামান্য ঘি নিয়ে কিছুসময় মুখে হালকা ম্যাসাজ করে পানি ধুয়ে ফেললে ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়ে যায়।

 

পেট ভালো রাখে

গবেষণায় দেখা গেছে ঘি এর মধ্যে রয়েছে বেশকিছু গ্যাস্ট্রিক রস যা আমাদের অন্ত্রের মধ্যেও থাকে। এই গ্যাস্ট্রিক রস খাবারের কণাগুলো ভেঙে ছোটো করে ফলে এবং দ্রুত হজমে সহায়তা করে। ফলে পেট ভালো থাকে।

 

সর্দিকাশি কমায়

আয়ুর্বেদ শ্রাস্ত্র অনুযায়ী ঘি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে। ঘি  কাশির ঔষধ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। নাকের ভিতরে এক ফোঁটা কুসুম গরম ঘি ঢাললে সঙ্গে সঙ্গে সর্দি থেকে মুক্তি মেলে।

 

শরীর গরম রাখে

ঘি উচ্চ তাপমাত্রায় বাষ্পীভূত হয় এবং শীতকালে খাবারের সঙ্গে ঘি যুক্ত করলে আমাদের শরীর গরম থাকে।

 

ওজন কমাতে সাহায্য করে

বিশেষজ্ঞদের মতে ঘি-এ থাকা এসেনশিয়াল অ্যামিনো এসিড শরীরে জমে থাকা চর্বি ঝড়িয়ে ফেলতে সাহায্য করে এবং সারাদিন খাওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

 

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি 

ঘি তে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে বলে প্রমানিত। অতি সম্প্রতি বেশ কিছু গবেষণায় উঠে এসেছে ঘি তে থাকা ফ্যাটি এসিড মানসিক রোগ ডিমেনশিয়া এবং অ্যালজাইমার্সের মতো রোগের প্রকোপ কমাতে সহায়ক।

 

এছাড়াও তুলসী, হলুদ, এবং রসুন এর সাথে ঘি মিশ্রিত করে খেলে আরো অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়।

 

তবে কিছু মানুষের জন্য ঘি খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। যেমনঃ

 

  • লিভার সিরোসিস, হেপাটোমেগালি, হেপাটাইটিস এর মতো রোগ থাকলে ঘি খাওয়া এড়িয়ে যেতে হবে।
  •  অন্ত:সত্ত্বা অবস্থায় ঘি খেলে ওজন বেড়ে যেতে পারে।
  • পেটের গোলমাল, বদহজম বা আইবিএস সমস্যা আছে এমন মানুষদের ঘি খাওয়া উচিৎ নয়।

 

ঘি প্রকৃতপক্ষে একটি বহুমুখী  এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদান যা মানবদেহকে বিভিন্ন ভাবে উপকার করে। ঘি এর এতো পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানার পরেও কি ঘি আপনার খাদ্যতালিকার বাইরে থাকবে? অবশ্যই না।  তাহলে আজই আপনার খাদ্য তালিকায় যুক্ত করুন খাঁটি গাওয়া ঘি। নিয়ন্ত্রিত উপায়ে খাওয়ার মাধ্যমে গড়ে তুলুন সুখী ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অভ্যাস। 

Related Posts

যবের ছাতুর উপকারিতা

যবের ছাতু বহু প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের খাদ্যতালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত হলেও সময়ের

Read More »
Shopping cart
Sign in

No account yet?

Start typing to see products you are looking for.

Table of Contents

Index
Shop
0 Wishlist
0 items Cart
My account