ঘন ঘন সর্দি কাশি কিসের লক্ষণ ও ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রতিকারের উপায়

ঘন ঘন সর্দি শীতকালে সকলের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা। বিশেষ করে ঋতু বা আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় বেশিরভাগ মানুষ এই সমস্যায় ভোগেন। সাধারণ সর্দি-কাশির উপসর্গের মধ্যে রয়েছে নাক দিয়ে পানি পড়া, গলা ব্যথা, কাশি, হাঁচি, মাথা ব্যথা, হালকা জ্বর এবং শরীরে ব্যথা ইত্যাদি। যদিও সর্দি সাধারণত এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে আমাদের ইমিউন সিস্টেম এর কারণে সমাধান হয়ে যায়। বেশ কিছু প্রাকৃতিক ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবস্থা রয়েছে যা সর্দি কাশির উপসর্গ প্রশমন করতে এবং পুনরায় সংক্রমণ রোধে আমাদের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

আজকের এই ব্লগে ঘন ঘন সর্দি কিসের লক্ষণ হতে পারে এবং ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে এই সমস্যা থেকে প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে তার বেশকিছু কার্যকরী উপায় নিয়ে আলোচনা করা হবে।

ঘন ঘন সর্দি কাশি কিসের লক্ষণ ও ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রতিকারের উপায়

ঘন ঘন সর্দি কাশি কিসের লক্ষণ ও ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রতিকারের উপায়

ঘন ঘন সর্দি কিসের লক্ষণ হতে পারে?

ঘন ঘন সর্দি মাঝে মাঝে মারাত্মক রোগের লক্ষণ হতে পারে। সবসময় যে আবহাওয়া পরিবর্তন এর কারণে সর্দি লাগে এমনটি নয়। মাসে অন্তত দু-বার কিংবা তার বেশি সর্দি লাগলে সেটা আপনার শরীরে থাকা জীবাণুর কারণে হতে পারে। তাই ঘন ঘন সর্দি হলে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। ঘন ঘন সর্দি যেসব রোগের লক্ষণ বা পূর্বলক্ষণ এমন কিছু রোগ সম্পর্কে জেনে নিন :

 

  • এলার্জি

এলার্জির লক্ষণগুলির মধ্যে ঘন ঘন ঠান্ডা, চোখে ও নাকে পানি আসা অন্যতম। এটি দূষণ, ধূলো, কোনো নির্দিষ্ট ফ্যাব্রিক কিংবা আদ্রতার কারণে হতে পারে। আপনি যদি বারবার এই সমস্যার সম্মুখীন হন, তাহলে আপনার অবশ্যই এলার্জির পরীক্ষা করা উচিত। অন্যথায় এই এলার্জি একটা সময় যেয়ে ব্রঙ্কাইটিস কিংবা হাঁপানিতে পরিনত হতে পারে।

 

  • সাইনুসাইটিস

ঘন ঘন সর্দি সাইনোসাইটিস এর জন্যেও হতে পারে। এই রোগে নাকের আবরণ এবং সাইনাসে ব্যথা হয়। শুরুতে সাধারণ মনে হলেও গুরুতর সংক্রমণ এর কারণে কান পড়া, বধিরতা, কর্কশতা কিংবা ক্রমাগত মাথা ব্যাথার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। সর্দি বা এলার্জির সময় সাইনাসে আটকে থাকা ব্যাকটেরিয়ার কারণে সাইনোসাইটিস সমস্যা হয়ে থাকে।

 

  • সংক্রমণ

যেকোনো ধরনের সংক্রমণ থেকেই বারবার ঠান্ডা লাগার সমস্যা হতে পারে। তবে শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ এর কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তাছাড়া বুকে কফ জমে থাকা, সর্দি ও জ্বরের মতো সমস্যাও প্রকট হতে পারে।

 

  • হাঁপানি

দূষিত পরিবেশ এবং ধুলাবালি থেকে হাঁপানি সমস্যা সৃষ্টি হয়। শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ, বুকে  দীর্ঘ দিন কফ জমে থাকলে অবশ্যই অবহেলা করা উচিৎ না।

 

  • নিউমোনিয়া

ঘন ঘন সর্দির প্রভাবে নিউমোনিয়া হওয়া বিষয়টি অতি পরিচিত তবে সঠিক চিকিৎসা বা ব্যবস্থা না নিলে এই রোগে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে গলায় ইনফেকশন, সর্দি সহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়নিউমোনিয়ায় ফুসফুস সংক্রমনের ঝুঁকির কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়।

 

ঘরোয়া উপায়ে যেসব প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে :

হাইড্রেটেড থাকুন (Stay Hydrated)

প্রচুর পরিমাণে পানি, ভেষজ চা বা পরিষ্কার ফলের জুস পান করলে শরীর অনেক সময় ধরে হাইড্রেটেড থাকে। যা কফ পাতলা করে এবং শরীর থেকে তা সহজেই বের করে দেয়।  সঠিক হাইড্রেশন ইমিউন ফাংশনকেও আরো বেশি কার্যকরী করে। পানি শ্বাসযন্ত্রের নালিকে আর্দ্র রাখে, জ্বালা প্রতিরোধ করে এবং শরীরকে আরও শক্তিশালীভবে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।

 

লবণ পানি দিয়ে গার্গল (Gargle With Salt Water)

গরম লবণ পানি দিয়ে গার্গল গলার জ্বালা কমাতে এবং জীবাণু মেরে ফেলতে সাহায্য করে।  এক গ্লাস গরম পানিতে আধা চা চামচ লবণ মিশিয়ে দিনে কয়েকবার গার্গল করুন। লবণ পানি গলায় ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে এবং অস্বস্তির কারণ হিসেবে আটকে থাকা কফ আলগা করে বের হতে সাহায্য করে।

 

মধু এবং লেবু (Honey and Lemon)

গরম পানিতে মধু এবং লেবু মিশ্রিত করে খেলে কাশি এবং গলা ব্যথা কমে যায়। মধুর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যর কারণে প্রাকৃতিক কাশি নিরাময়ক হিসাবে বিশেষ পরিচিতি আছে। অন্যদিকে লেবুতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

 

বাষ্প নিঃশ্বাস নেওয়া (Steam Inhalation)

প্রথমে একটি পাত্রে গরম পানি ঢালুন। তারপর পরিষ্কার একটি তোয়ালে মাথার উপরে রেখে গরম পানি থেকে বাষ্প নিঃশ্বাস নিন। ভেজা কিন্তু উঞ্চ বাতাস কফ আলগা করতে সাহায্য করে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসকে সহজ করে তোলে।

 

আদা চা (Ginger Tea)

আদার মধ্যে জিঞ্জেরলের মতো যৌগ রয়েছে যা গলার প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। আদা কুচি গরম পানিতে চা এর সাথে খেলে সর্দি কাশির সমস্যা খুব সহজেই দূর হয়।

রসুন (Garlic)

রসুনে বিদ্যমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সর্দি কাশি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া রসুন বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। কেননা এতে রয়েছে এ্যান্টিফাংগাল, এয়ান্টিব্যাক্টেরিয়াল এবং এ্যান্টিভাইরাল। এছাড়া রসুন ঘি দিয়ে ভেজে কুসুম গরম অবস্থায় খেলে সর্দি কাশি অবস্থায় আরাম পাওয়া যায়।

 

তুলসী পাতা ও আদা (Holy Basil and Ginger)

৪-৫ টি তুলসী গাছের পাতা এক কাপ পানিতে নিয়ে গরম পানিতে ফুটাতে হবে। পানি অর্ধেক হয়ে গেলে ফুটানো বন্ধ করতে হবে। এই পানি দিনে দুইবার খেলে সর্দি কাশি উপশম হবে।

 

ইউক্যালিপটাস তেল (Eucalyptus Oil)

ইউক্যালিপটাস তেল একটি প্রাকৃতিক ডিসকজেস্ট্যান্ট হিসাবে কাজ করে। এবং এতে রয়েছে অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য। ডিফিউজার বা বাষ্প নিঃশ্বাসে ইউক্যালিপটাস তেল যুক্ত করলে জমে থাকা কফ দূর হয়ে যায় সহজেই।

 

প্রোবায়োটিক (Probiotics)

আমাদের শরীরে ভালো ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রোবায়োটিক এর ভূমিকা অনেক বেশি। এছাড়াও শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম তৈরীতে গুরুত্বপূর্ণ। দই এবং দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া সহজ হয়ে যায়।

 

ঘন ঘন সর্দি হলেই আমরা যেন শুরুতেই ঐতিহ্যগত ওষুধ খাওয়া শুরু না করি। বরং ঘরোয়া ভাবে এই প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিলে আমরা সহজেই সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পেতে পারি। যা আমাদের সর্দি-কাশি থেকেই কেবল মুক্তি দেয় না বরং প্রাকৃতিক ভাবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তবে উল্লেখিত প্রতিকার ব্যবস্থার পরেও ঠান্ডা কাশি অব্যহত থাকলে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

Related Posts

Shopping cart
Sign in

No account yet?

Start typing to see products you are looking for.
Shop
0 Wishlist
0 items Cart
My account