আমরা জীবনধারনের জন্য প্রতিদিন কত কিছুই না খেয়ে থাকি। আমাদের শরীরের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইমিউনিটি বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। আর এটা পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকলে আমরা সুস্থ্য থাকি। আর কমে গেলে অসুস্থ হয়ে পড়ি বা অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।এই ইমিউনিটি সিস্টেম ঠিক রাখার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে খাবার। যেসব খাবার খেলে ইমিউনিটি তৈরি হয় সেই খাবারগুলো আমাদের অবশ্যই খাওয়া প্রয়োজন। সুস্থ্য থাকার জন্য খাবার গুলো খাওয়া।
ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আমাদের দেহের প্রাকৃতিক সুরক্ষা ব্যবস্থা যা আমাদের বিভিন্ন রোগজীবাণু ও ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। বর্তমানে ব্যাপক হারে আমাদের চারপাশে রোগ জীবাণু ছড়িয়ে রয়েছে। তাই আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ব্যাপারে আরো বেশি সজাগ থাকা দরকার। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কিছু প্রাকৃতিক ও পুষ্টিকর খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ করলে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং আমরা সুস্থ থাকতে পারি।
আজকের ব্লগে আমরা ইমিউনিটি বাড়াতে সহায়ক বিভিন্ন খাবার, তাদের পুষ্টিগুণ এবং গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।যেমন:-
১. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল
ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান উপাদান হিসেবে কাজ করে । এটি শরীরে শ্বেত রক্তকণিকা (white blood cells) বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে। যা শরীরে জীবাণু ধ্বংসে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
কমলা, লেবু, জাম্বুরা
এই সকল সাইট্রাস ফল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ থাকে। ভিটামিন সি শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়ায়, যা দেহের কোষগুলোকে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখে।
আমলকি
আমলকী শরীরের ইমিউনিটি বা রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে দারুণ সাহায্য করে। কারণ আমলকীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, আমলকীতে রয়েছে পেয়ারার থেকে তিন গুণ ও কাগজিলেবুর থেকে দশ গুণ বেশি ভিটামিন সি । আমলকীতে রয়েছে কমলালেবুর থেকে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের থেকে ১২০ গুণ বেশি, আমের থেকে ২৪ গুণ এবং কলার থেকে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন সি।
পেয়ারা
পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং ঠান্ডা-সর্দির মতো সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
কাঁচা মরিচ
কাঁচা মরিচ ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ করে। ভিটামিন সি যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে তাই আমাদের কাঁচা মরিচ খাওয়া উচিত। এটি সংগ্রহ করা সহজলভ্য হওয়ায় প্রতিদিনের খাবারে ব্যবহার করা যায়।
২. দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য
দুগ্ধজাত খাবারে প্রচুর প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি থাকে। যা হাড় ও দাঁত মজবুত করার পাশাপাশি ইমিউন সিস্টেমকে বৃদ্ধি করে।
দুধ
দুধে থাকা প্রোটিন শরীরের কোষ গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে । এতে থাকা ভিটামিন ডি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শ্বেত রক্তকণিকাকে বৃদ্ধি করে।
ঘি
ঘিয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট যা আমাদের শরীরে উপকারী কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। ফলে ইমিউনিটি বৃদ্ধি পায়।
দই
দইয়ে প্রচুর পরিমানে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া থাকে যা অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকলে দেহের ইমিউন সিস্টেমও শক্তিশালী থাকে। ফলে রোগ মুক্ত থাকা যায়।
প্রাকৃতিক মধু
মধুতে প্রচুর পরিমানে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে রোগমুক্ত থাকা সহজ হয়।
প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: মধু অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস, যা দেহের ফ্রি র্যাডিকাল দূর করে। এটি দেহের কোষগুলোকে সুরক্ষিত রাখে এবং শ্বাসনালীকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়। ফলে সুস্থ্য থাকা যায়।
গলার ইনফেকশন কমায় : মধু ঠান্ডা, সর্দি ও গলার সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। ফলে নিয়মিত মধু সেবনে গলা সবসময় পরিস্কার থাকে।
হলুদ
হলুদে রয়েছে কারকিউমিন নামে একটি শক্তিশালী উপাদান যা দেহে প্রদাহ কমায় এবং ইমিউন সিস্টেমকে বৃদ্ধি করে।
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি : হলুদে থাকা কারকিউমিন শরীরের প্রদাহ কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী, যা দেহের কোষগুলোকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস : হলুদে থাকা উপাদানগুলো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া গুলোকে ধংস করে এবং বিভিন্ন সংক্রমণ প্রতিরোধে ও নিরাময়ে সাহায্য করে।
আদা
আদায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট , যা সর্দি-কাশি, শ্বাসনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধে ও নিরাময়ে সহায়ক।
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি: আদা গলায় ও শ্বাসনালীর সংক্রমণ কমাতে ও নিরাময়ে সাহায্য করে। সর্দি-কাশি হলে এটি শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে।
হজমশক্তি বৃদ্ধি: আদা পেটের হজমে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ।
বাদাম ও বীজ
বিভিন্ন প্রকার বাদাম ও বীজে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন, ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম রয়েছে, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
কাজুবাদাম, পেস্তা বাদাম, চিনাবাদাম, আখরোট ও কাঠবাদামে প্রচুর পরিমানে প্রোটিন, ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ইমিউন সিস্টেমকে বৃদ্ধি করে।
সূর্যমুখী বীজ : সূর্যমুখী বীজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই রয়েছে, যা কোষের সুরক্ষার পাশাপাশি ইমিউন সিস্টেমকেও বৃদ্ধি করে।
সবুজ শাকসবজি
সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, ই এবং ফাইবার রয়েছে , যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করতে সহায়ক।
পালংশাক
পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং বিটা-ক্যারোটিন থাকে, যা ইমিউন সিস্টেমকে বৃদ্ধি এবং শক্তিশালী করে।
বাঁধাকপি ও ব্রকলি
বাঁধাকপি ও ব্রকলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ খাবার, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ।
সামুদ্রিক মাছ
সামুদ্রিক মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সামুদ্রিক মাছ ও সামুদ্রিক খাবারও প্রাকৃতিক ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব পূরণ করে।
স্যামন ও টুনা মাছ: স্যামন ও টুনা মাছে প্রচুর পরিমানে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। যা দেহের প্রদাহ হ্রাসে সাহায্য করে এবং ইমিউন সিস্টেমকে বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করে।
রসুন
রসুনে অ্যালিসিন নামে একটি উপাদান থাকে, যা বিভিন্ন রোগজীবাণু ধ্বংসে সহায়তা করে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক: রসুনের অ্যালিসিন জীবাণু দূর করতে সাহায্য করে।
হার্টের স্বাস্থ্য: রসুন হার্টের সুরক্ষায় এবং রক্ত চলাচলে সহায়তা করে।
গ্রীন টি
গ্রীন টি-তে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা ফ্রি র্যাডিকাল এর ক্ষতি থেকে বাচায় এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ক্যাটেচিন : গ্রীন টিতে ক্যাটেচিন থাকে, যা শরীরকে জীবাণু ও ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত রাখে।
গুড়
রক্তস্বল্পতায় গুড় খুবই কার্যকরী উপাদান। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন। শীতের সময়ে শরীরে আয়রনের মাত্রা পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা জরুরি। গুড় দিয়ে শরবত খেলে তা আমাদের ফুসফুস পরিষ্কারেও কাজ করে।
নিমপাতা
খালি পেটে নিমপাতা-বাটা খেলে শরীরের রক্ত পরিষ্কার হয়। তাছাড়া নিমপাতায় রয়েছে শরীরে থাকা ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া রোধের উপাদান। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে থাকে ।
আমাদের শরীর সুস্থ্য রাখতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো খুবই প্রয়োজন। কারণ কারো শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকলে সে সহজে নানা রোগে আক্রান্ত হবে। তাই রোগ জীবাণু ও জীবাণুর সংক্রমণ থেকে বাঁচতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করা খুবই প্রয়োজন। সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং প্রাকৃতিক উপাদানে সমৃদ্ধ খাদ্য শরীর সুস্থ্য রাখে।এছাড়াও শরীরের ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাই অবশ্যই ইমিউনিটি বৃদ্ধি ও শক্তিশালী করতে খাবারে ভিটামিন, মিনারেল, এবং প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর সাথে প্রতিদিন নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
আজকের এই ব্লগটি পড়ে যদি আপনার কোন উপকার হয় বা ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই বলবো আমাদের কে ফলো করে কমেন্ট করুন এবং FIT FOR LIFE এর সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ।