টাইফয়েড পরবর্তী সমস্যা, জেনে নিন প্রতিরোধের উপায়

টাইফয়েড একটি গুরুতর ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ, যা স্যালমোনেলা টাইফি (Salmonella Typhi) ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। টাইফয়েডের চিকিৎসা সঠিকভাবে না হলে এটি শরীরে দীর্ঘমেয়াদি নানা জটিলতা সৃষ্টি করর। টাইফয়েড পরবর্তী সমস্যাগুলো বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। 

Table of Contents

টাইফয়েড পরবর্তী সমস্যা

নিচে টাইফয়েড পরবর্তী সাধারণ এবং জটিল সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

 টাইফয়েড পরবর্তী সমস্যা, জেনে নিন প্রতিরোধের উপায়

টাইফয়েড পরবর্তী সমস্যা, জেনে নিন প্রতিরোধের উপায়

১. পরিপাকতন্ত্রের জটিলতা

টাইফয়েড সাধারণত পরিপাকতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। সংক্রমণ সেরে যাওয়ার পরও এর কিছু দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থাকতে পারে:

‌ক. অন্ত্রের প্রদাহ বা ক্ষত

টাইফয়েডের কারণে অন্ত্রের ভেতরের স্তরে ক্ষত সৃষ্টি হয়ে যায়। এটি সঠিকভাবে না শুকালে অন্ত্রের প্রদাহ (Enteritis) বা ফোঁড়া (Abscess) তৈরি করতে পারে।

‌খ. অন্ত্র ছিদ্র (Intestinal Perforation)

টাইফয়েড চিকিৎসার অভাবে বা অল্প চিকিৎসায় অন্ত্রের প্রাচীর ছিদ্র হয়ে যায়। এটি পেরিটোনাইটিস (Peritonitis) নামক জীবনঘাতী সংক্রমণের কারণ।

‌গ. দীর্ঘমেয়াদি অন্ত্রের কার্যকারিতা হ্রাস

কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এর ফলে পুষ্টিহীনতা, বদহজম, এবং ডায়রিয়া দেখা দেয়।

 

২. লিভারের জটিলতা

টাইফয়েড পরবর্তী লিভারের ওপর বেশ কিছু নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যেমন:

‌ক. হেপাটাইটিস

টাইফয়েড সংক্রমণ লিভারে প্রদাহ তৈরি করতে করে, যা হেপাটাইটিস নামে পরিচিত।

‌খ. পিত্তথলির সমস্যা

টাইফয়েড দীর্ঘস্থায়ী হলে পিত্তথলির সংক্রমণ (Cholecystitis) হতে পারে। এটি পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

 

৩. মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা

টাইফয়েড রোগ সেরে যাওয়ার পরেও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রভাব থাকতে পারে:

‌ক. এনসেফালোপ্যাথি

টাইফয়েডের ফলে কিছু রোগীর মস্তিষ্কে প্রদাহ হতে পারে। যা দীর্ঘমেয়াদি মাথাব্যথা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং মনোযোগের ঘাটতি সৃষ্টি করে।

‌খ. মেন্টাল ফ্যাটিগ (মানসিক ক্লান্তি)

টাইফয়েড পরবর্তী রোগীরা অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদি মানসিক ক্লান্তি এবং অবসাদ অনুভব করেন।

 

৪. হাড় ও জয়েন্টের সমস্যা

টাইফয়েড হাড় এবং জয়েন্টেও সমস্যা সৃষ্টি করে।যেমন:

‌ক. অস্টিওমাইলাইটিস

টাইফয়েড পরবর্তী স্যালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া হাড়ে সংক্রমণ ঘটায়, যা অস্টিওমাইলাইটিস নামে পরিচিত।

‌খ. আর্থ্রাইটিস

টাইফয়েড সংক্রমণ আর্থ্রাইটিস বা জয়েন্টে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা চলাচলে সমস্যা করে।

 

৫. রক্তের সমস্যা

টাইফয়েড পরবর্তী রক্তে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে দেয়। যেমন:

‌ক. রক্তাল্পতা (অ্যানিমিয়া)

টাইফয়েড পরবর্তী অবস্থায় রক্তাল্পতা দেখা দেয়, কারণ সংক্রমণ শরীরের রক্তকণিকা ধ্বংস করে।

‌খ. থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া

রক্তে প্লেটলেটের মাত্রা কমে গেলে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

 

৬. দীর্ঘমেয়াদি ক্লান্তি

টাইফয়েড সেরে যাওয়ার পর অনেক রোগী দীর্ঘ সময় ধরে ক্লান্তি অনুভব করেন। এটি রোগীর দৈনন্দিন জীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।

 

৭. ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়া

টাইফয়েড সেরে যাওয়ার পর ইমিউন সিস্টেম সাময়িকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে রোগীর অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

 

৮. মানসিক সমস্যা

টাইফয়েড পরবর্তী মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যেমন:

‌ক. ডিপ্রেশন

টাইফয়েডের দীর্ঘমেয়াদি ক্লান্তি এবং শারীরিক দুর্বলতার কারণে অনেক রোগী ডিপ্রেশনে ভুগতে পারেন।

‌খ. উদ্বেগ

টাইফয়েড পরবর্তী সুস্থতার অনিশ্চয়তা রোগীর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

 

৯. কিডনি ও মূত্রতন্ত্রের সমস্যা

টাইফয়েড কিডনি এবং মূত্রতন্ত্রেরও ক্ষতি করে। যেমন:

‌ক. কিডনির কার্যকারিতা হ্রাস

টাইফয়েডের ফলে কিছু রোগীর কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে

‌খ. মূত্র সংক্রমণ

টাইফয়েড পরবর্তী স্যালমোনেলা মূত্রতন্ত্রেও সংক্রমণ সৃষ্টি করে।

 

১০. দীর্ঘস্থায়ী টাইফয়েড বাহক হওয়া

কিছু রোগী টাইফয়েডের পরে এর দীর্ঘস্থায়ী বাহক হয়ে ওঠেন। এর মানে তাদের দেহে স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়া সক্রিয় থাকে এবং তারা এটি অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারে। যদিও নিজেরা অসুস্থ না।

 

১১. পুনঃসংক্রমণের ঝুঁকি

টাইফয়েড একবার হওয়ার পর পুনরায় সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। এটি সাধারণত তখনই ঘটে যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে বা পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা হয় না।

পরিশেষে বলা যায় যে, টাইফয়েড পরবর্তী এই সমস্যাগুলো প্রতিরোধের জন্য চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলা এবং সম্পূর্ণ আরোগ্য নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা জরুরি। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চললে টাইফয়েড পরবর্তী জটিলতা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।

 

আমাদের আজকের ব্লগটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে এটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে শেয়ার করুন। আপনার বন্ধুদেরও জানার সুযোগ করে দিন। এছাড়াও আপনারা পরবর্তীতে কোন বিষয়ে ব্লগ পড়তে চান, তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আপনাদের মতামত আমাদের পরবর্তী কনটেন্ট তৈরি করতে ও লিখতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।

Related Posts

মাশরুম পাউডার স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য একটি আদর্শ এবং খুবই উপকারী খাদ্য সাপ্লিমেন্ট

মাশরুম পাউডার স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য একটি আদর্শ এবং খুবই উপকারী খাদ্য সাপ্লিমেন্ট

মাশরুম পাউডার একটি প্রাকৃতিক সুপারফুড। আমরা সকলেই এমন কিছু খুঁজি যা আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে এবং আমাদের শরীরকে

Read More »
স্বাস্থ্য সচেতন সকলের জন্য খাঁটি মধু কেন প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করবেন?

স্বাস্থ্য সচেতন সকলের জন্য খাঁটি মধু কেন প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করবেন?

মধু বাংলাদেশে উৎপাদিত একটি বিশেষ প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান। যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।বিভিন্ন ফুলের নির্যাস থেকে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে

Read More »
গাওয়া ঘি খাওয়ার উপকারিতা

গাওয়া ঘি খাওয়ার উপকারিতা

ঘি এমন একটি উপাদান যা আমাদের অনেকের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় একটি বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে। গাওয়া ঘি আমাদের উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী

Read More »
Shopping cart
Sign in

No account yet?

Start typing to see products you are looking for.

Table of Contents

Index
Shop
0 Wishlist
0 items Cart
My account