বিটরুটের উপকারিতা ও বিটরুট কেন খাবেন

SHARE

বিটরুট গাঢ় গোলাপি বা লালচে রঙের এই সবজিটি, এখনও আমাদের দেশে তেমন জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি। অনেকেই বাজারে এটি দেখলেও কেনার প্রতি আগ্রহ দেখান না। শীতকালে এর উৎপাদন বেশি হলেও এখন সারা বছরই এটি সহজলভ্য ভাবেই পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণ ও ঔষধিগুণে ভরপুর বিটরুটকে আধুনিক পুষ্টিবিদরা সুপারফুডের মর্যাদা দিয়েছেন, যা স্বাস্থ্যের জন্য অপরিসীম উপকারী।

বিটরুটের উপকারিতা

আজকের ব্লগে আমরা বিটরুটের উপকারিতা ও কেন আপনার বিটরুট খাওয়া প্রয়োজন সেই বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো

বিটরুট কী এবং এর পুষ্টিগুণ

বিটরুট এক ধরনের মূল জাতীয় সবজি, যা Beta Vulgaris প্রজাতির অন্তর্গত। এটি কাঁচা, রান্না করা, বা বিটরুট গুড়া করে জুস আকারে খাওয়া যায়।

পুষ্টিগুণ:

  • ক্যালরি: প্রতি ১০০ গ্রামে ৪৩ ক্যালরি
  • কার্বোহাইড্রেট: ৯.৬ গ্রাম
  • প্রোটিন: ১.৬ গ্রাম
  • ফাইবার: ২.৮ গ্রাম
  • ভিটামিন ও মিনারেলস: ফোলেট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং ভিটামিন সি
  • অ্যান্টি-অক্সিডেন্টস: বিটালাইনস (Beetroot’s natural pigments)

বিটরুটের উপকারিতা

বিটরুটের উপকারিতা অসংখ্য এবং এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী । নিচে এর কিছু প্রধান উপকারিতা উল্লেখ করা হলো:

১. হৃদরোগ প্রতিরোধে কাজ করে

হার্ট বা হৃদপিণ্ড আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, এবং এটি সুস্থ রাখতে বিটরুটের ভূমিকা অনন্য। বিটরুটে থাকা নাইট্রেট রক্তনালীগুলোকে প্রসারিত করে, যা রক্তচাপ কমায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও বিটরুটে থাকা পটাশিয়াম হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া, এটি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বিটরুট খেলে স্ট্রোক এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে।

২. শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে

বিটরুটের উচ্চ নাইট্রেট উপাদান শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়িয়ে দেয়, যা শরীরের ক্লান্তি কমায় এবং সহনশীলতা বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে অ্যাথলেটদের জন্য এটি অত্যন্ত উপকারী, কারণ এটি শরীরের কর্মক্ষমতা এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

৩. লিভার ডিটক্সিফিকেশন

লিভার আমাদের শরীরের অন্যতম প্রধান অঙ্গ, যা শরীরকে টক্সিনমুক্ত রাখতে এবং বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থকে প্রস্রাব বা পিত্তের মাধ্যমে বের করে দিতে কাজ করে। বিটরুটে থাকা বেটাইন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিটালেইন লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। এই উপাদানগুলো লিভার কোষের সুরক্ষা নিশ্চিত করে এবং টক্সিন অপসারণ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। লিভারে অতিরিক্ত ফ্যাট জমা হলে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিটরুট খেলে লিভারে ফ্যাট জমার পরিমাণ কমে এবং ফ্যাটকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে। নিয়মিত বিটরুট খাওয়ার মাধ্যমে লিভার সুস্থ এবং কর্মক্ষম থাকে।

৪. রক্তস্বল্পতা দূর করে

রক্তস্বল্পতা, বিশেষত নারীদের মধ্যে, একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। বিটরুট আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় এবং লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে। এতে থাকা ফোলেট (ভিটামিন বি৯) গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী, কারণ এটি গর্ভস্থ শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করে।
বিশেষত, যারা ক্লান্তি বা দুর্বলতায় ভোগেন, তাদের জন্য বিটরুট একটি প্রাকৃতিক সমাধান। এটি রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে শরীরকে সুস্থ্য রাখে ও রক্তস্বল্পতা দূর করে।

৫. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে থাকে। তবে বিটরুট খেলে মস্তিষ্কে রক্ত এবং অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ে, যা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
বিটরুটে থাকা নাইট্রেট মস্তিষ্কের নিউরনের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমার রোগ প্রতিরোধ করে। তাই এটি বয়স্কদের জন্য একটি আদর্শ খাবার।

৬. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে

বিটরুটে রয়েছে ফাইবার, যা হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে কাজ করে। এটি পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। যারা পেটের সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত বিটরুট খাওয়ার অভ্যাস করুন।

৭. ওজন নিয়ন্ত্রণ করে

বিটরুটে ক্যালোরি কম, কিন্তু এতে ফাইবার এবং পানি রয়েছে প্রচুর। এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ করা কমায়, যা ওজন কমাতে কাজ করে। যারা ওজন কমানোর জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার খুঁজছেন, তাদের জন্য বিটরুট একটি আদর্শ খাদ্য। এর ফাইবার উচ্চমাত্রার এবং ক্যালোরি কম, যা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
বিটরুট রস বা সালাদ হিসেবে গ্রহণ করলে এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমায়।

৮. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি

বিটরুটে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের কোষগুলোকে পুনর্জীবিত করে। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ব্রণ ও কালো দাগ দূর করতে কাজ করে।

৯. ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে

বিটরুটে থাকা বিটালাইনস অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, বিটরুটের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইটো-কেমিক্যাল উপাদান ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে ধীর করতে কাজ করে। বিশেষ করে এটি কোলন এবং স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কার্যকর।

বিটরুট কোথায় পাওয়া যায়?

বিটরুট বর্তমানে বেশ সহজলভ্য একটি সবজি, যা বছরের সব সময়ই পাওয়া যায়। বিশেষত শীতকালে বিটরুটের উৎপাদন বেশি হলেও আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির কারণে এটি এখন সারা বছর বাজারে পাওয়া যায়। তবে বাজার থেকে বিটরুট কেনার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি, কারণ ভেজালের ভিড়ে নিরাপদ খাবার পাওয়া দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে।

যারা নিরাপদ ও ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতে চান, তাদের জন্য Fit for Life একটি নির্ভরযোগ্য সমাধান। আমরা গত ৫ বছর ধরে সরাসরি রুট লেভেল থেকে বিটরুট সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাত করে ১০০% বিশুদ্ধ এবং স্বাস্থ্যকর বিটরুট পাউডার সরবরাহ করে আসছি। আমাদের পণ্যগুলো গুণগত মান ও নিরাপত্তা বজায় রেখে প্রস্তুত করা হয়, যাতে আপনি এবং আপনার পরিবার নিশ্চিন্তে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারেন।

কীভাবে বিটরুট খাবেন?

বিটরুট একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর উপাদান যা নানা ধরনের স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান করে। এটি খাওয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, যা আপনার পছন্দ ও প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন হতে পারে। আসুন জানি, বিটরুট কীভাবে খাওয়া যেতে পারে:

১. বিটরুটের জুস/রস

বিটরুট জুস বা রস পান করার মাধ্যমে আপনি এর পুষ্টিগুণ দ্রুত এবং সহজে পেতে পারেন।

  • একটি ছোট বিটরুট ধুয়ে, ছিঁড়ে ছোট টুকরো করে ব্লেন্ডারে বা জুসারে দিয়ে রস বের করুন। আপনি যদি এই ঝামেলা তে না জড়াতে চান তাহলে ফিট ফর লাইফের বিটরুট পাউডার সংগ্রহ করতে পারেন।
  • ১ গ্লাস পানিতে ১ চা-চামচ বিটরুট পাউডার মিশিয়ে জুস বানিয়ে পান করুন।
  • সকালে খালি পেটে বিটরুটের জুস বা রস পান করুন।

২. সেদ্ধ বা বেকড বিটরুট

সেদ্ধ বা বেকড বিটরুটে থাকা ফাইবার এবং পুষ্টি অত্যন্ত উপকারী।

  • কিভাবে প্রস্তুত করবেন: বিটরুট ভালোভাবে ধুয়ে তার খোসা ছাড়িয়ে সেদ্ধ বা বেক করুন।
  • সেদ্ধ বিটরুট ছোট টুকরো করে সালাদে ব্যবহার করুন বা মিষ্টি তৈরি করতে ব্যবহার করুন।
  • ওভেনে বেক করে তেল, নুন, এবং মধু দিয়ে একটু মাখিয়ে খান।

৩. বিটরুট স্মুদি

বিটরুটের পুষ্টি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী, আর যদি এটি স্মুদির মধ্যে মিশিয়ে নেওয়া হয় তবে তা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু হয়।

  • কিভাবে বানাবেন: বিটরুট, কলা, দই, মধু, এবং কিছু বরফের টুকরো মিশিয়ে স্মুদি তৈরি করুন।
  • খাওয়ার সময়: এটি একটি শক্তি বাড়ানোর এবং পুষ্টিকর খাবার হিসেবে দুপুরের খাবার বা স্ন্যাকস হিসেবে খেতে পারেন।

৪. বিটরুট সালাদ

বিটরুট সালাদ অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর খাবার।

  • কিভাবে বানাবেন: সেদ্ধ বিটরুট ছোট টুকরো করে সালাদ তৈরি করুন। এতে আপনি টমেটো, শসা, গাজর, পেঁয়াজ, লেবুর রস এবং নারকেল তেল মিশিয়ে নিতে পারেন। অবশ্যই কোল্ড প্রেস নারকেল তেল হতে হবে। কারণ কোল্ড প্রেস নারকেল তেল আপনি সরাসরি কাঁচাও খেতে পারবেন,রান্নায় ব্যবহারের পাশাপাশি চুলে ও ত্বকেও ব্যবহার করতে পারবেন।
  • এটি খেতে পারেন দুপুর বা রাতের খাবারের সঙ্গে, এবং এটি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর।

৫. বিটরুট স্যুপ

শীতকালে বিটরুট স্যুপ অত্যন্ত জনপ্রিয়।

  • কিভাবে তৈরি করবেন: বিটরুট, গাজর, টমেটো, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, এবং মশলা দিয়ে স্যুপ তৈরি করুন। এটি খেতে খুবই সুস্বাদু এবং শরীরের জন্য উপকারী।

কিভাবে ব্যবহার করবেন: এক চামচ বিটরুট পাউডার গরম পানিতে মিশিয়ে পান করুন, অথবা এটি দই, স্মুদি, মিষ্টি, স্যুপ বা সালাদে ব্যবহার করতে পারেন।

উপসংহার

বিটরুট এর পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা আমাদের জীবনকে সুস্থ এবং সুন্দর করে তুলতে সাহায্য করে। এটি সঠিকভাবে খাদ্যতালিকায় যুক্ত করলে অনেক দীর্ঘমেয়াদি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এটি নিয়মিত খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। সুতরাং, সুস্থ জীবনযাপনের জন্য বিটরুট খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

এমন উপকারি স্বাস্থ্য টিপস পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ব্লগটি ভালো লাগলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ!

Subscribe Our Newsletter

Related Products

Related Posts

SHARE

Latest Product

Latest Post