শরীরের রক্ত কমে গেলে কি কি সমস্যা হয়?

SHARE

শরীরে রক্ত কমে গেলে, তাকে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া বলে। এটি বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মূলত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে রক্তের ঘাটতি দেখা দেয়। হিমোগ্লোবিন হল রক্তের এক ধরনের প্রোটিন যা অক্সিজেন বহন করে। শরীরে পর্যাপ্ত রক্ত না থাকলে অন্যান্য অঙ্গগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। আজকের ব্লগে রক্তস্বল্পতার কারণ লক্ষণ এবং এর ফলে সৃষ্ট সমস্যাগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:

শরীরের রক্ত কমে গেলে কি কি সমস্যা হয়?
শরীরের রক্ত কমে গেলে কি কি সমস্যা হয়?

 

রক্ত কম হওয়ার সাধারণ কারণ:

১. পুষ্টির অভাব: শরীরে আয়রন, ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি।

২. রক্তক্ষরণ: দুর্ঘটনা, অস্ত্রোপচার, পিরিয়ডে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ।

৩. রোগ: ক্যান্সার, কিডনি রোগ বা অটোইমিউন ডিসঅর্ডার।

৪. হাড়ের মজ্জার অসুস্থতা: রক্ত উৎপাদন কমে যাওয়া।

৫. জিনগত কারণ: থ্যালাসেমিয়া বা সিকেল সেল অ্যানিমিয়া।

 

রক্ত কম হলে শরীরে যেসব সমস্যা হতে পারে:

১. শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি

  • শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি হলো রক্তস্বল্পতার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ।
  • শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পৌঁছালে শক্তি উৎপাদন কমে যায়।
  • সামান্য কাজেও অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভূত হয়।

২. মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাব

  • ব্রেন পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পেলে মাথা ঘোরা অনুভূত হয়।
  • রক্তচাপ কমে গেলে বমি বমি ভাব দেখা দেয়।

৩. শ্বাসকষ্ট

  • শারীরিক পরিশ্রমের সময় শ্বাসকষ্ট বা অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়া।
  • রক্তে অক্সিজেনের অভাব ফুসফুসের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।

৪. হৃদযন্ত্রের সমস্যা

  • হৃদযন্ত্র বেশি অক্সিজেন সরবরাহের জন্য দ্রুত কাজ করতে থাকে।
  • দীর্ঘস্থায়ী রক্তস্বল্পতা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।

৫. ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া

৬. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস

  • একাগ্রতা কমে যায় এবং মনে রাখা বা চিন্তা করার ক্ষমতা দুর্বল হয়।
  • দীর্ঘমেয়াদে এটি ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

৭. ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হওয়া

৮. হাড় দুর্বল হওয়া

  • আয়রন ও ভিটামিনের অভাবে হাড়ের মজুদ শক্তি কমে যায়।
  • দীর্ঘমেয়াদে অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ভাঙার ঝুঁকি বাড়ে।

৯. হাত-পা ঠান্ডা ও ঝিনঝিন করা

  • রক্ত কমে গেলে সঠিক সঞ্চালন হয় না, ফলে হাত-পা ঠান্ডা অনুভূত হয়।
  • স্নায়ুর কার্যক্ষমতা কমে গেলে ঝিনঝিন ভাব বা অসাড়তা দেখা দেয়।

১০. পেশি দুর্বল হওয়া

  • পেশিতে যথেষ্ট অক্সিজেন পৌঁছায় না, ফলে ব্যথা বা শক্তি কমে যায়।
  • ভারী জিনিস তোলার সময় অসুবিধা হয়।

১১. গর্ভাবস্থায় জটিলতা

  • রক্ত কম থাকলে গর্ভাবস্থায় শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে।
  • গর্ভপাত, প্রিম্যাচিউর ডেলিভারি বা প্রসবকালীন অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ে।

১২. মাসিকের সমস্যা

  • মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিক অনিয়মিত বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ দেখা দেয়।
  • এটি আবার রক্তস্বল্পতা বাড়িয়ে দেয়।

১৩. মানসিক সমস্যা

  • হতাশা, উদ্বেগ বা মুডের ওঠা-নামা দেখা দেয়।
  • দীর্ঘমেয়াদে এটি আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়।

১৪. শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশ ব্যাহত হওয়া

  • শিশুদের ক্ষেত্রে রক্তের অভাবে শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
  • মনোযোগের ঘাটতি বা শেখার ক্ষমতা হ্রাস পায়।

 

রক্ত কম হলে করণীয়

১. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ

  • আয়রনসমৃদ্ধ খাবার: পালংশাক, লালশাক, ডাল।
  • ভিটামিন বি১২ ও ফলিক অ্যাসিড: ডিম, দুধ, দই, কলা।
  • ভিটামিন সি: কমলা, লেবু, আমলকি (আয়রন শোষণে সহায়ক)।

২. পর্যাপ্ত পানি পান

  • রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখতে প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।

৩. ডাক্তারি পরামর্শ ও ঔষধ

  • আয়রন সাপ্লিমেন্ট বা ভিটামিন ট্যাবলেট গ্রহণ।
  • প্রয়োজনে রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা।

৪. সুস্থ জীবনযাপন

  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
  • পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন।

 

পরিশেষে বলা যায় যে, রক্ত কমে গেলে শরীরের কার্যক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই পর্যাপ্ত পুষ্টি, সময়মতো চিকিৎসা এবং সুস্থ জীবনধারা অনুসরণ করে এই সমস্যা প্রতিরোধ ও নিরাময় সম্ভব।

Subscribe Our Newsletter

Related Products

Related Posts

SHARE

Latest Product

Latest Post