এমপক্স কি? এটা কিভাবে ছড়ায়? এর লক্ষন সমুহ কি কি?

এমপক্স (Mpox) এক ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ, যা আগে মাংকিপক্স (Monkeypox) নামে পরিচিত ছিল। এটি পক্সভাইরাস পরিবারভুক্ত এবং অর্থোপক্সভাইরাস (Orthopoxvirus) প্রজাতির অন্তর্গত। এই ভাইরাস মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম। মূলত পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার বনাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে এটি বেশি দেখা যায়। তবে ২০২২ সালে এটি বিভিন্ন মহাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এটিকে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে ঘোষণা করে।

আশাকরি সম্পূর্ণ ব্লগটি কম্প্লিট করলে আপনি এমপক্স এর বিস্তারিত বিষয় গুলো বুঝতে পারবেন। 

এমপক্স কি? এটা কিভাবে ছড়ায়? এর লক্ষন সমুহ কি কি?
এমপক্স কি? এটা কিভাবে ছড়ায়? এর লক্ষন সমুহ কি কি?

সংক্রমণের উৎস ও ইতিহাস :

এমপক্স ভাইরাস প্রথম ১৯৫৮ সালে গবেষণাগারে বন্দী কিছু বানরের মধ্যে সনাক্ত হয়, যার কারণে এর নাম দেওয়া হয়েছিল মাংকিপক্স। তবে, এটি প্রথম মানুষের মধ্যে সনাক্ত হয় ১৯৭০ সালে কঙ্গোতে (বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো)। তারপর থেকে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এর প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। মূলত বন্য প্রাণী, বিশেষ করে ইঁদুর ও অন্যান্য ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে এটি ছড়ায়। এমপক্সের সংক্রমণ মূলত পশু থেকে মানুষের মধ্যে আসে, তবে মানুষ থেকে মানুষেও ছড়াতে পারে।

ভাইরাসের ধরণ :

এমপক্স একটি ডিএনএ (DNA) ভাইরাস, এবং এটি তুলনামূলকভাবে বড় আকারের ভাইরাসগুলির একটি। এর দুটি প্রধান প্রকারভেদ (clade) রয়েছে: পশ্চিম আফ্রিকান ক্লেড এবং কঙ্গো বেসিন ক্লেড। পশ্চিম আফ্রিকান ক্লেড তুলনামূলকভাবে কম মারাত্মক এবং এর মৃত্যুহার কম। কঙ্গো বেসিন ক্লেডের সংক্রমণ তুলনামূলকভাবে বেশি বিপজ্জনক এবং এর মৃত্যুহারও বেশি।

সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাব :

২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী এমপক্সের উল্লেখযোগ্য প্রাদুর্ভাব ঘটে, যা আগে আফ্রিকার বাইরে খুব কম দেখা গিয়েছিল। পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, এবং এশিয়াসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এমপক্সের এই প্রাদুর্ভাব মূলত মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের মাধ্যমে হয়েছে। গবেষকরা ধারণা করছেন, মানুষের চলাচল ও সংস্পর্শ বৃদ্ধির কারণে এই প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অন্যান্য সংস্থার ভূমিকা :

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা এমপক্সের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি, সংক্রমণের উৎস চিহ্নিত করা, আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসা সেবা প্রদান, এবং টিকাদান কার্যক্রমকে উৎসাহিত করা হয়েছে। WHO এমপক্সকে একটি Public Health Emergency of International Concern (PHEIC) ঘোষণা করে, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকটের প্রেক্ষিতে একটি বিশেষ সতর্কবার্তা।

এমপক্স যেভাবে ছড়ায় :

এমপক্স (Mpox) একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা মাঙ্কিপক্স ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। এটি সাধারণত পশু থেকে মানুষ এবং মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। এমপক্স ছড়ানোর বিভিন্ন পদ্ধতি নিচে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো:

মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ:

ঘনিষ্ঠ শারীরিক সংস্পর্শ: সংক্রমিত ব্যক্তির ত্বক, ঘাম বা রক্তের সাথে সরাসরি সংস্পর্শের মাধ্যমে এমপক্স ছড়াতে পারে। এর মধ্যে সংক্রমিত ব্যক্তির ফুসকুড়ি বা ঘা স্পর্শ করাও অন্তর্ভুক্ত।

শ্বাসনালী থেকে ছড়ানো: 

দীর্ঘ সময় ধরে সংক্রমিত ব্যক্তির কাছাকাছি থাকলে, তার শ্বাসের মাধ্যমে নির্গত ফোঁটাগুলি (respiratory droplets) দ্বারা ভাইরাসটি ছড়াতে পারে। তবে এ ধরণের সংক্রমণ সাধারণত ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শের সময় বেশি হয়।

সংক্রমিত বস্তু স্পর্শ করা: 

সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত পোশাক, বিছানাপত্র, তোয়ালে, বা অন্য কোনো বস্তু স্পর্শ করলেও সংক্রমণ হতে পারে, যদি সেই জিনিসগুলো ফুসকুড়ি বা ক্ষত দ্বারা দূষিত হয়।

সংক্রমিত প্রাণীর কামড় বা আঁচড়: ভাইরাসটি প্রধানত কিছু বন্য প্রাণী, বিশেষত বাঁদর, ইঁদুর, এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মাধ্যমে ছড়ায়। যদি সংক্রমিত কোনো প্রাণী কামড়ায় বা আঁচড়ায়, তবে এমপক্স ছড়াতে পারে।

প্রাণীর দেহের অংশ বা তরল: 

সংক্রমিত প্রাণীর রক্ত, শরীরের তরল বা সংক্রমিত মাংসের সাথে সংস্পর্শে আসলেও এমপক্স হতে পারে।

প্রাণীর দূষিত বস্তু স্পর্শ করা: সংক্রমিত প্রাণীর ব্যবহৃত বিছানাপত্র বা অন্য কোনো জিনিস স্পর্শ করলেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।

অন্যান্য আরও কিছু অবস্থা ও পদ্ধতি রয়েছে যার মাধ্যমে এমপক্স ভাইরাস ছড়াতে পারে :

গর্ভাবস্থায়: 

যদি গর্ভবতী মহিলা সংক্রমিত হয়, তবে তার গর্ভস্থ শিশুও সংক্রমিত হতে পারে। এটি জন্মের আগে (intrauterine) ছড়ানোর একটি পদ্ধতি।

যৌন সম্পর্ক:

এমপক্স যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়াতে পারে, বিশেষ করে ত্বকের সাথে সংস্পর্শের কারণে। এর ফলে যৌন মিলনের মাধ্যমে এমপক্স ভাইরাসের বিস্তার হতে পারে।

এমপক্স এর লক্ষনসমূহ:

এমপক্স (Mpox) লক্ষণগুলি সাধারণত শারীরিক অসুস্থতা থেকে শুরু করে ত্বকের উপর দানা, ফুসকুড়ি এবং অন্যান্য জটিল উপসর্গ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। সাধারণত, সংক্রমণের প্রথম লক্ষণগুলি অসুস্থ হওয়ার ৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে দেখা যায়। এই সময়টি ইনকিউবেশন পিরিয়ড হিসেবে পরিচিত, যা সংক্রমণের পর ভাইরাস শরীরে ছড়াতে সময় নেয়। এবার এমপক্সের লক্ষণগুলো বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

জ্বর (Fever):

এমপক্সের প্রধান ও প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হলো জ্বর। সংক্রমণের প্রাথমিক ধাপে, রোগী সাধারণত হঠাৎ করে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বরে ভোগেন। এই জ্বরের তাপমাত্রা সাধারণত ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার বেশি হতে পারে। জ্বর ১ থেকে ৩ দিনের জন্য স্থায়ী হতে পারে। এটি শরীরে ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউন প্রতিক্রিয়া দেখায়।

শরীরে ব্যথা ও ক্লান্তি (Body Aches and Fatigue):

জ্বরের সাথে সাথে শরীরে ব্যথা ও ক্লান্তিও সংক্রমণের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ। সংক্রমণের ফলে রোগীর শরীরে পেশি ব্যথা (myalgia), মাথা ব্যথা (headache), এবং অস্থি ও গাঁটে ব্যথা দেখা যায়। অনেক সময়, রোগী সাধারণ শরীরের দুর্বলতা ও অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করে, যা তাকে দৈনন্দিন কার্যক্রম থেকে দূরে রাখে।

লসিকা গ্রন্থি ফোলা (Swollen Lymph Nodes) :

এমপক্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হল লসিকা গ্রন্থি ফোলা বা লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি (Lymphadenopathy)। সংক্রমণের ফলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে গলা, গলার নিচে, বগল, এবং কুঁচকির অংশে লসিকা গ্রন্থি ফুলে যায়। এটি অনেকটাই গলা বা মুখের সংক্রমণের কারণে হওয়া ফোলার মত হলেও, এমপক্সে ফোলা লসিকা গ্রন্থি সংক্রমণের ধরণকে নির্দেশ করে।

ত্বকে ফুসকুড়ি বা দানা (Skin Rash and Lesions) :

এমপক্সের সবচেয়ে পরিচিত এবং সুস্পষ্ট লক্ষণ হলো ত্বকের উপর ফুসকুড়ি বা দানা (rash)। জ্বরের ১ থেকে ৪ দিন পর এই ফুসকুড়ি দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে, ফুসকুড়িগুলো ছোট, লাল দানা হিসেবে দেখা যায় যা পর্যায়ক্রমে বড় আকার ধারণ করে। এই ফুসকুড়িগুলো শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়াতে পারে, যেমন মুখ, হাত, পা, তলপেট, ও যোনি বা যৌনাঙ্গের এলাকা। ফুসকুড়ি প্রথমে চর্মের নিচে পুঁজপূর্ণ ফোস্কা (pustules) রূপে দেখা যায় এবং পরে ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। ধীরে ধীরে, ফুসকুড়ির পুঁজ শুকিয়ে ত্বক খসে পড়ে, এবং দাগ রেখে যায়। এই ফুসকুড়িগুলো দেহের সব জায়গায় থাকতে পারে এবং এর গঠন ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়।

ঠাণ্ডা লাগা (Chills) :

জ্বরের সাথে ঠাণ্ডা লাগা এমপক্সের একটি সাধারণ উপসর্গ। রোগীরা শীতের অনুভূতি, ঠাণ্ডা এবং কাঁপুনি অনুভব করতে পারেন, যা জ্বরের সাথে আসে এবং যায়। এটি ভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ঘটে।

মাথা ব্যথা (Headache) :

মাথা ব্যথা বা মাইগ্রেন এমপক্সের আরেকটি প্রধান উপসর্গ। জ্বরের সাথে বা তার আগে মাথা ব্যথা দেখা দিতে পারে। এটি সাধারণত গুরুতর হয় এবং রোগীকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলে। মাথা ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং বিশ্রাম বা সাধারণ ওষুধেও সম্পূর্ণ উপশম নাও হতে পারে।

শ্বাসকষ্ট এবং কাশি (Respiratory Symptoms) :

কিছু রোগীর ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা, বা কাশি দেখা যেতে পারে, যদিও এটি সাধারণত গুরুতর নয়। বিশেষ করে যাদের ফুসকুড়ি বা ফোস্কা মুখ বা গলার কাছাকাছি থাকে, তারা শ্বাসকষ্টের সমস্যায় পড়তে পারেন। তবে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাগুলি অন্যান্য লক্ষণের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম সাধারণ।

ক্ষুধামন্দা (Loss of Appetite):

অনেক রোগী এমপক্সে সংক্রমিত হলে ক্ষুধামন্দা অনুভব করে। সংক্রমণের প্রথম দিকেই ক্ষুধা কমে যেতে পারে, যা অন্যান্য উপসর্গের সাথে সম্পর্কিত। জ্বর, ব্যথা এবং ক্লান্তির কারণে খাবারের প্রতি আগ্রহ হারাতে পারে।

চোখের সমস্যা (Eye Involvement) :

কিছু রোগীর ক্ষেত্রে চোখে সমস্যার লক্ষণও দেখা যায়, যেমন চোখের প্রদাহ, চোখে ব্যথা, বা চোখের সাদা অংশের লালচে হওয়া (conjunctivitis)। এসব সমস্যা সাধারণত ভাইরাসের সংক্রমণ দ্বারা ত্বকের পাশাপাশি চোখের মিউকাস ঝিল্লিতে প্রভাব ফেলে।

পেটের সমস্যা (Gastrointestinal Symptoms) :

কিছু রোগীর ক্ষেত্রে পেটের সমস্যা যেমন বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, এবং পেট ব্যথা দেখা দিতে পারে। এই লক্ষণগুলি সাধারণত তীব্র নয় তবে সংক্রমণের কারণে রোগীর শরীরে সাধারণ শারীরিক অস্বস্তি সৃষ্টি করে। এগুলো অন্যান্য উপসর্গের সঙ্গে দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে যেসব রোগীর ইমিউন সিস্টেম দুর্বল।

সংক্রমণ কিভাবে ছড়ায় (How Mpox Spreads) :

এমপক্স সাধারণত সংক্রমিত প্রাণী বা মানুষের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ছড়ায়। এটি সংক্রামক তরল, শ্বাসযন্ত্রের ড্রপলেট, এবং সংক্রামিত ফুসকুড়ি থেকে সরাসরি ছড়াতে পারে। এটি যৌন সম্পর্কের সময়ও সংক্রামিত হতে পারে, বিশেষ করে যখন শরীরে ফুসকুড়ি বা দানা উপস্থিত থাকে। সংক্রামিত ব্যক্তির ব্যবহৃত পোশাক, বিছানা, বা অন্য কোনো বস্তু ব্যবহার করলেও ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।

জটিলতা (Complications) :

এমপক্সের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণত ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে নিরাময় হতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে যারা ইমিউনোকম্প্রোমাইজড, যেমন শিশু, গর্ভবতী নারী, বা যারা অন্যান্য গুরুতর রোগে আক্রান্ত। এই জটিলতাগুলির মধ্যে সেকেন্ডারি সংক্রমণ, ব্রঙ্কাইটিস, সেপসিস (রক্তের সংক্রমণ), এবং চোখের সংক্রমণ হতে পারে, যা স্থায়ী অন্ধত্বের কারণ হতে পারে।

উপসর্গের ভিন্নতা (Variation in Symptoms) :

এমপক্সের উপসর্গ এবং এর তীব্রতা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে উপসর্গ খুব মৃদু হতে পারে এবং ফুসকুড়ির মাত্রা কম হতে পারে, অন্যদিকে কিছু রোগীর ক্ষেত্রে উপসর্গ মারাত্মক হতে পারে। বিশেষ করে যারা আগে পক্সভাইরাসের সংস্পর্শে আসেনি বা যাদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল, তারা গুরুতর উপসর্গের সম্মুখীন হতে পারেন।

চিকিৎসা এবং প্রতিরোধ :

এমপক্সের জন্য এখনও কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। রোগ নিরাময়ে উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়, যেমন জ্বর কমানোর জন্য ওষুধ সেবন, পানিশূন্যতা দূর করার জন্য তরল গ্রহণ ইত্যাদি। তবে এমপক্স প্রতিরোধের জন্য কিছু কার্যকর উপায় রয়েছে:

টিকাদান : 

মাংকিপক্স প্রতিরোধে ব্যবহৃত স্মলপক্স (গুটি বসন্ত) টিকা কিছুটা কার্যকর হতে পারে, কারণ এই দুই ভাইরাসের মধ্যে জেনেটিক সম্পর্ক রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য সংস্থা এই টিকা ব্যবহারের পরামর্শ দেয়, বিশেষত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর জন্য।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা :

আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা, সংক্রমিত প্রাণীদের থেকে দূরে থাকা, এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।

সংক্রমিত সামগ্রীর পরিহার : 

সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহৃত পোশাক, বিছানাপত্র, এবং অন্যান্য সামগ্রী পরিষ্কার করা বা সরিয়ে ফেলা প্রয়োজন।

জটিলতা :

এমপক্স সাধারণত স্বল্পমেয়াদী এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিরাময়যোগ্য রোগ হলেও কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী, এবং ইমিউনোসাপ্রেসড (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম) রোগীদের ক্ষেত্রে জটিলতা বেশি হতে পারে। জটিলতার মধ্যে রয়েছে:

  • ত্বকে স্থায়ী ক্ষত
  • সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ
  • নিউমোনিয়া
  • চোখের সংক্রমণ (যা দৃষ্টিশক্তির ক্ষতি করতে পারে)
  • মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনসেফালাইটিস)
  • ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

এমপক্সের ভবিষ্যৎ প্রতিরোধের জন্য টিকা ও চিকিৎসা পদ্ধতির আরও উন্নয়ন প্রয়োজন। বিশেষ করে, যেসব অঞ্চলে এর প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে, সেখানে নিয়মিত নজরদারি, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে পরিবেশগত ও সামাজিক পরিবর্তনের কারণে নতুন রোগের আবির্ভাবের ঝুঁকিও বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

পরিশেষে বলা যায়, এমপক্স একটি প্রাচীন ভাইরাস হলেও সাম্প্রতিক প্রাদুর্ভাবের কারণে এটি বৈশ্বিক পর্যায়ে আলোচিত হয়েছে। তাই এমপক্সের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য জনসচেতনতা, টিকা, এবং যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার গুরুত্ব অপরিসীম।

Related Posts

Shopping cart
Sign in

No account yet?

Start typing to see products you are looking for.
Shop
0 Wishlist
0 items Cart
My account