জিংক ট্যাবলেট খাওয়ার উপকারিতা

জিংক (Zinc) মানব শরীরের কার্যক্রমগুলো সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য একটি প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ। এটি শরীরে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম তৈরি করে। এছাড়া এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, কোষ বিভাজন, ক্ষত নিরাময় এবং ডিএনএ তৈরির প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জিংক ট্যাবলেট খাওয়ার উপকারিতা

জিংক ট্যাবলেট খাওয়ার উপকারিতা

 

জিংক কী এবং  মানব দেহে এর ভূমিকা

জিংক একটি ট্রেস মিনারেল (trace mineral)। এটি শরীরে প্রায় ৩০০টিরও বেশি এনজাইম তৈরি করে।

মানবদেহে জিংকের উপস্থিতি প্রায় ২-৩ গ্রাম। এর অধিকাংশই  পেশি এবং লিভারে মজুদ থাকে। জিংক বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ :

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • ক্ষত নিরাময়ে সহায়তা করে।
  • প্রজনন স্বাস্থ্য বজায় রাখে।
  • ত্বক, চুল এবং নখ ভালো রাখে।
  • অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে।
  • শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে।

 

জিংক ট্যাবলেট খাওয়ার উপকারিতা

জিংক ট্যাবলেট শরীরের বিভিন্ন ঘাটতি পূরণ করে। এর কয়েকটি প্রধান উপকারিতা নিচে আলোচনা করা হলো:

১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

জিংক শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে। এটি শ্বেত রক্তকণিকার কার্যকারিতা বাড়ায়, যা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য প্যাথোজেনকে প্রতিরোধ করে। সাধারণ ঠান্ডা বা ফ্লু হলে জিংক ট্যাবলেট দ্রুত আরোগ্যে সাহায্য করে।

২. ক্ষত নিরাময়ে সহায়ক

শরীরে কোনো কাটা-ছেঁড়া বা ক্ষত হলে তা দ্রুত শুকানোর জন্য জিংক প্রয়োজন। এটি নতুন কোষ তৈরি এবং ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু মেরামত করে।

৩. ত্বকের যত্নে

জিংক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান হিসেবে কাজ করে এবং ব্রণ কমাতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং চর্মরোগ প্রতিরোধে কার্যকর।

৪. চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা

জিংক চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি চুলের ফলিকল (follicle) শক্তিশালী করে এবং চুল পড়া রোধ করে।

৫. হরমোন নিয়ন্ত্রণ

জিংক প্রজনন হরমোনগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি পুরুষদের টেস্টোস্টেরন উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং মহিলাদের ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতা উন্নত করে।

৬. মানসিক চাপ

জিংকের অভাবে মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং হতাশা বাড়তে পারে। জিংক ট্যাবলেট খেলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং মানসিক চাপ কমে।।

৭. হাড় ও দাঁতের যত্নে

জিংক হাড় মজবুত করতে সহায়তা করে। এটি ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে।

৯. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক

জিংক ইনসুলিনের নিঃসরণ ও কার্যকারিতা বাড়ায়। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

১০. জিংকের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রভাব

জিংক শরীরের কোষগুলোকে ফ্রি র‍্যাডিক্যালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এটি বার্ধক্য রোধে কার্যকর।

১১. হজমে সহায়তা 

জিংক এনজাইমের কার্যক্রমকে সক্রিয় করে, যা খাদ্য হজমে সহায়তা করে এবং পুষ্টি শোষণ নিশ্চিত করে।

 

জিংক ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

জিংক ট্যাবলেট খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি ও পরিমাণ একজন ব্যক্তির বয়স, লিঙ্গ এবং শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে। তবে সাধারণ নির্দেশনা নিচে দেওয়া হলো:

প্রয়োজনীয় ডোজ

  • শিশুদের জন্য: প্রতিদিন ৫-১০ মিলিগ্রাম
  • প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য: প্রতিদিন ৮-১১ মিলিগ্রাম
  • গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য: প্রতিদিন ১১-১৩ মিলিগ্রাম
  • বয়স্কদের জন্য: প্রতিদিন ১০-১২ মিলিগ্রাম

কীভাবে খাবেন

  • খাবারের আগে বা পরে জিংক ট্যাবলেট খেতে পারেন।
  • খালি পেটে খেলে হয়তো কারো ক্ষেত্রে পেট ব্যথা হতে পারে। তাই প্রয়োজন হলে খাবারের পরে খাওয়া ভালো।
  • ক্যালসিয়াম বা আয়রন সাপ্লিমেন্টের সাথে একত্রে জিংক খাবেন না, কারণ এগুলো জিংকের শোষণ কমিয়ে দিতে পারে।

জিংক ট্যাবলেট সেবনে সতর্কতা

  • অতিরিক্ত জিংক গ্রহণ এড়িয়ে চলুন। দৈনিক ৪০ মিলিগ্রামের বেশি খেলে বমি, মাথাব্যথা এবং ডায়রিয়া হতে পারে।
  • দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত জিংক গ্রহণ করলে শরীরে তামা (Copper) শোষণের ঘাটতি দেখা দেয়।

 

জিংকের অভাবের লক্ষণ

শরীরে জিংকের অভাব হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে:

 

প্রাকৃতিক জিংক সমৃদ্ধ খাবারসমূহ 

জিংকের অভাব পূরণে সাপ্লিমেন্টের পাশাপাশি খাবারের মাধ্যমে এটি গ্রহণ করা ভালো। যেসব খাবারে জিংক আছে তা নিচে দেওয়া হলো:

প্রাণিজ উৎসঃ

  • গরুর মাংস
  • খাসির মাংস
  • মুরগির মাংস
  • ঝিনুক (oysters): জিংকের সর্বোত্তম উৎস।
  • চিংড়ি মাছ
  • সার্ডিন এবং স্যামন
  • ডিমের কুসুম

দুগ্ধজাত খাবার:

  • দুধ
  • পনির
  • দই

উদ্ভিজ্জ উৎসঃ

শাকসবজি:

  • পালংশাক
  • ব্রকলি
  • মাশরুম
  • অ্যাভোকাডো
  • ব্ল্যাকবেরি
  • ডুমুর

 

জিংকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

যদিও জিংক সাধারণত নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত গ্রহণ বা ভুলভাবে সেবন করলে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন:

 

জিংক একটি অপরিহার্য খনিজ যা শরীরের সঠিক কার্যকারিতার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। জিংক ট্যাবলেট সঠিক ডোজে এবং নিয়ম মেনে খেলে এটি সুস্থ রাখতে এবং নানা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তবে সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ অতিরিক্ত খেলে ক্ষতি হবে। Balanced diet এর মাধ্যমে জিংকের চাহিদা পূরণ করাই সর্বোত্তম পন্থা।

 

আমাদের আজকের ব্লগটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে এটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে শেয়ার করুন। আপনার বন্ধুদেরও জানার সুযোগ করে দিন। এছাড়াও, আপনারা পরবর্তীতে কোন বিষয়ে ব্লগ পড়তে চান, তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আপনাদের মতামত আমাদের পরবর্তী কনটেন্ট তৈরি করতে ও লিখতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।

Related Posts

Shopping cart
Sign in

No account yet?

Start typing to see products you are looking for.
Shop
0 Wishlist
0 items Cart
My account