কিভাবে চুল ঘন ও লম্বা করা যায়? প্রাকৃতিক উপায়ে চুল ঘন করার উপায়?

লম্বা চুলের স্বপ্ন প্রায় প্রতিটি নারীই দেখে থাকে। লম্বা চুল নারীর সৌন্দর্য এবং আর্কষণ দুটোই বাড়িয়ে দেয়। নারীর লম্বা চুলের প্রেমে পড়েনি এমন পুরুষ খুঁজে পাওয়া ভার। ঘন, কালো ও লম্বা চুল সবারই কমবেশি পছন্দ। তবে আমরা অনেকেই জানিনা চুল লম্বা করার উপায়। কিছু ঘরোয়া টিপস মেনেই কিন্তু চমৎকার ঘন, লম্বা চুল পাওয়া যায়। আজকে আমরা সেই উপায়গুলোই জানবো।

বিজ্ঞানীদের মতে, চুল প্রতিদিন  গড়ে ০.৩ থেকে ০.৫ মি.মি পর্যন্ত লম্বা হয়। মাসের হিসেবে ১ থেকে ১.৫ সে.মি. এবং বছরে ১২ থেকে ১৫ সে.মি পর্যন্ত লম্বা হয়।বংশগত কারণে অনেকের চুল ঘন কালো কিংবা পাতলা হয়। বংশগত কারণ গুলো পুরোপুরি পরিবর্তন করা না গেলেও চুলের যথাযথ যত্ন নিশ্চিত করলে অবশ্যই ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে চুলের যত্ন নেওয়ার আগে চুল বৃদ্ধি না হওয়ার কারণগুলো জেনে নিই।

কিভাবে চুল ঘন ও লম্বা করা যায়? চুল লম্বা করার ঘরোয়া উপায়

কিভাবে চুল ঘন ও লম্বা করা যায়? চুল লম্বা করার ঘরোয়া উপায়

চুলের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা:

অনেক চেষ্টা করেও যদি চুলের বৃদ্ধি যথাযথ না হয় তার জন্য কিছু কারন দায়ী। কারনগুলো হলো:

  • বংশগত
  • প্রতিকূল আবহাওয়া
  • হরমোনাল পরিবর্তন
  • মানসিক চাপ
  • থাইরয়েড সমস্যা
  • অতিরিক্ত ক্যামিক্যাল পণ্যের ব্যবহার
  • বয়স
  • পুষ্টিহীনতা

উপরোক্ত বিষয়গুলোর প্রভাব পুরোপুরি নিঃশেষ করা সম্ভব নয়। তবে কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বনে এর প্রভাব কমিয়ে চুলের বৃদ্ধি অনেকটাই নিশ্চিত করা সম্ভব।

আমলকী

চুলের যত্নে আমলকীর জুড়ি মেলা ভার। ১ চা চামচ ক্যাস্টর ওয়েল এর সাথে ২-৩ চা চামচ আমলকী গুঁড়ো মিশিয়ে চুলে মেখে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। ডিমের সাদা অংশ মিশাতে পারলে আরো ভালো ফল পাওয়া যায়। শুকিয়ে এলে মাথা ভালো করে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে ২-৩ বার এই পদ্ধতি অবলম্বনে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সুফল মিলবে।

নিম

নিমপাতা চুলের বৃদ্ধি কে ত্বরান্বিত করার আরও একটি দারুণ উপায় হতে পারে। নিমপাতা চুলে জমে থাকা দীর্ঘদিনের ময়লা পরিষ্কার করে। নিমপাতা বেটে ভালোভাবে মাথায় লাগাতে হবে  এবং শুকিয়ে এলে ধুয়ে ফেলতে হবে।

লেবু

লেবুর অনেক উপকার সম্পর্কে আমরা জানলেও চুলের যত্নেও যে লেবুর ব্যবহার করা যায় তা কজনে জানি। শ্যাম্পু করার পর চুলের গোড়া অনেকটাই আলগা হয়ে যায়। গোসল শেষে লেবুর রস চুলের গোড়ায় ভালোভাবে মেখে নিলে চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত হয়। তবে লেবুর রস মেখে চুল ভেজানো ঠিক নয়। এরপর দিন শ্যাম্পু করে নিলেই হয়।

কাঠবাদাম তেল

বাড়ীতে প্রস্তুতকৃত কাঠবাদাম তেল সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। বাজারে ও সহজেই পাওয়া যায়। এই তেল সরাসরি চুলে ব্যবহারের পরিবর্তে গরম করে ব্যবহার করতে হবে। কমপক্ষে ২ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। সপ্তাহে ৩ দিন চুলে কাঠবাদাম তেল ব্যবহার করে দেখুন যাদু।

ডিম

ডিম আমাদের দেহে আমিষের অন্যতম উৎস। তবে চুলের যত্নেও এর গুরুত্ব অনেক। ডিমের সাদা অংশ চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করে ২০-২৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুলের বৃদ্ধি অনেক গতিশীল হবে।

 

আশানুরূপ চুলের বৃদ্ধি পেতে হলে আমাদের লাইফস্টাইলে ও বেশকিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। যেমন:

 

নিয়মিত কন্ডিশনার ব্যবহার

আমরা অনেকেই জানিনা আসলে কন্ডিশনার এর কাজ কি। অনেকে মনে করেন চুল সিল্কি করার জন্য, অনেকে মনে করেন শুষ্ক চুলের জন্য। তবে সবধরনের চুলের জন্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করা যায়। শ্যাম্পু করলে চুলের গোড়া আলগা হয়, এজন্য শ্যাম্পু করা শেষে অবশ্যই কন্ডিশনার এর ব্যবহার করতে হবে। তবে চুলে অবশ্যই ৪-৫ মিনিটের বেশি কন্ডিশনার রাখা উচিৎ নয়।

বালিশের কভার পরিবর্তন

রাতে ঘুমানোর সময় বালিশের কভারের সাথে আমাদের চুল লেপ্টে থাকে অনেকটা সময়। চুল লম্বা করতে চাইলে অবশ্যই নিয়মিত বালিশের কভার পরিবর্তন প্রয়োজন। সুতি কাপড়ের সাথে চুলের সংঘর্ষ বেশি হয়। এজন্য সিল্ক বা সাটিন কাপড়ের বালিশের কভার ব্যবহারের চেষ্টা করুন।

নিয়মিত ট্রিম করা

চুল ট্রিম করা মানে চুল ছোট করা। এটা আশ্চর্য হলে ও সত্য যে চুল বড় করার জন্য চুল ছোট করতে হয়। চুলের আগা ফাটা কিংবা ভঙ্গুর চুল বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাই নিয়ম করে চুলের আগা কাটলে  চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে।

নিয়মিত হেয়ার ম্যাসাজ

চুলের বৃদ্ধি আরো বেশি গতিশীল করতে মাথায় রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হবে। আর এজন্য প্রয়োজন নিয়মিত হেয়ার ম্যাসাজ করা। বিভিন্ন রকম উপকারী তেল যেমন: নারিকেল তেল, ক্যাস্টর ওয়েল ইত্যাদি চুলের গোড়ায় কয়েক ফোঁটা দিয়ে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এটি শুধু মাথায় রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করবে না, উষ্কখুষ্ক চুল থেকেও মুক্তি দিবে।

অ্যালোভেরা হেয়ারপ্যাক

চুলের যত্নে অ্যালোভেরা অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। অ্যালোভেরা এবং অলিভওয়েল মিক্স করে হেয়ারপ্যাক তৈরি করুন। এটি সরাসরি চুলের স্ক্যাল্পে ব্যবহার করবেন। আধা ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। অ্যালোভেরা তে  বিদ্যমান প্রোটিওলাইটিক এনজাইম চুলের বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং অলিভওয়েল এ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিউট্রিয়েন্ট রয়েছে।

এই কাজগুলো করার পাশাপাশি কিছু কিছু জিনিস থেকে বিরত থাকতে হবে। যা চুলের বৃদ্ধিতে বাধাগ্রস্ত করে। যেমন:

  • ভেজা চুল টাওয়েল দিয়ে প্যাচানো যাবে না।
  • হার্শ ক্যামিকেল যুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা যাবে না।
  • প্রয়োজন ব্যতীত হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।

চুলের যত্নে ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায় অনুসরণ করার পাশাপাশি আমাদের লাইফস্টাইলেও বেশকিছু পরিবর্তন অত্যাবশ্যক। সেই সাথে কিছু অভ্যাস থেকে নিজেদের বিরত রাখার মাধ্যমেও আমরা দ্রুত বর্ধনশীল চুল পেতে পারি। রোজমেরি অয়েল, মেথি, জবাফুল ব্যবহার করেও আমরা ঘন, কালো লম্বা চুল পেতে পারি। বয়স এবং শারীরিক অবস্থা অবশ্যই চুলের বৃদ্ধি তে বাধা হতে পারে তবে আজকের এই ব্লগে উল্লেখিত উপায়গুলি অনুসরণের মাধ্যমে চুল লম্বা করার ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই সুফল পাবেন।

Related Posts

Shopping cart
Sign in

No account yet?

Start typing to see products you are looking for.
Shop
0 Wishlist
0 items Cart
My account