মেয়েদের চুলের যত্নে সহজ ১২ টি ঘরোয়া উপায়

মেয়েদের সৌন্দর্যে বাড়তি আকর্ষণ জুড়ে দেয় ঘন কালো লম্বা চুল। আপনি একজন মেয়ে, অথচ চুলের যত্নে আপনার আলাদা প্রচেষ্টা থাকবে না, এমন টা হতেই পারে না। বাসায় বসে অনেকেই অনেকভাবে চুলের যত্ন নিয়ে থাকলেও সঠিক উপায়গুলো অনেকেরই   অজানা। অথচ ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করে সহজ কিছু উপায়ে চুলের যত্ন নেওয়া যায়। যা আপনার চুলকে আরো বেশি স্বাস্থ্যকর, মসৃণ এবং ঘন করতে সাহায্য করবে।

মেয়েদের চুলের যত্নে সহজ ১২ টি ঘরোয়া উপায়

মেয়েদের চুলের যত্নে সহজ ১২ টি ঘরোয়া উপায়

আজকের এই ব্লগে আমরা এমন ১২ টি সহজ উপায় নিয়ে আলোচনা করবো, যার মাধ্যমে খুব সহজেই বাসায় বসে আপনি আপনার চুলের সর্বোচ্চ যত্ন নিতে পারবেন।

 

মেয়েদের চুলের যত্নে সহজ ১২ টি ঘরোয়া উপায়: 

 

১) নারিকেল তেল

চুলের যত্নে নারিকেল তেল এর রয়েছে বহুমাত্রিক ব্যবহার। প্রথমত, নারিকেল তেল এবং মধুর মিশ্রণ। চুলের আদ্রতা ধরে রাখার জন্য এবং চুলের জেল্লা বাড়াতে মধু ভীষণ উপকারী। ১ চামচ উঞ্চ নারিকেল তেল এবং ১ চামচ মধু মিশ্রিত করে স্ক্যাল্প ও সমস্ত চুলে ভালো করে মাখিয়ে নিন। আধা ঘণ্টা রেখে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। চুল নরম ও মসৃণ করতে দারুণ কার্যকরী।

দ্বিতীয়ত, নারিকেল তেল এবং লেবুর রস মিশ্রণ। স্ক্যাল্প এর তৈলাক্ত অবস্থা এবং খুসকি দূর করতে এই মিশ্রণটি পারফেক্ট। এটিও নারিকেল তেল ও মধুর মিশ্রণের মতো করে ব্যবহার করুন।

তৃতীয়ত, নারিকেল তেল ও কলার মিশ্রণ। এটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার এর ভূমিকা পালন করে। ১ টি পূর্নাঙ্গ পাকা কলা ১ টেবিল চামচ নারিকেল তেলের সাথে ভালোভাবে চটকে পেস্ট বানিয়ে নিন। তারপর চুলে ব্যবহার করুন। ২০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। চুলের আগা ফাটার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

 

২) ডিমের প্রোটিন মাস্ক

ডিম এমন একটি ঘরোয়া উপাদান, চুলের যত্নে যার কোন জুড়ি নেই। ডিমে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, মিনারেল এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, যা চুলের গোড়া মজবুত করে। ডিম ভেঙে সরাসরি চুলে ব্যবহার করা যায়। আবার আধা কাপ দই, ১ চা চামচ অলিভ/আমন্ড ওয়েল এর সাথে মিশ্রিত করে চুলে ব্যবহার করা যায়। চুলকে উজ্জ্বল, সুন্দর এবং চুলের ভঙ্গুরতা কমাতে ডিমের ব্যবহার ভীষণ উপকারী।

 

৩) অ্যালোভেরা জেল

অ্যালোভেরা জেলে রয়েছে অনেক ঔষধী গুণ, যা  ত্বকের যত্নেও দারুন কার্যকর। চুলের রুক্ষতা দূর, খুসকি দূর এবং চুল পড়া কমানোর জন্য অ্যালোভেরা জেল দারুণ সমাধান। তাজা অ্যালোভেরা জেল সরাসরি চুলে ব্যবহার করা যায়। আবার শ্যাম্পুর সাথে মিশিয়ে অথবা নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে ও এটি ব্যবহার করা যায়। সপ্তাহে ২-৩ দিন ব্যবহারেই ফল পাওয়া যায়।

 

৪) পেঁয়াজের রস

পেঁয়াজের রসে রয়েছে সালফার, যা চুলের বৃদ্ধি এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। পেঁয়াজের রস চুলের নিজস্ব প্রোটিন অর্থাৎ কেরাটিন উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও পেঁয়াজের রসে থাকা অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান মাথার ত্বকে যেকোনো ধরনের সংক্রমণ প্রতিহত করে। পেঁয়াজে আরো রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের ফ্রী র‍্যাডিকেলের সমতা বজায় রেখে চুলের ফলিকলগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে।  পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে চুলের গোড়ায় আধা ঘণ্টা লাগিয়ে রাখুন। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্রক্রিয়ায় চুলের ঘনত্বও বাড়ে।

 

৫) দই এবং মেথী বীজের প্যাক

টক দইয়ে থাকে ফাঙ্গাসরোধী উপাদান, যা চুলের মাতৃকোষ রক্ষা করে এবং খুসকি দূর করে। আর মেথি বীজ চুল পড়া কমায় এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। মেথি বীজ গুঁড়া করে দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে ৩০ মিনিট চুলে লাগিয়ে রাখুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করবে এবং চুলকে করবে আরো বেশি মজবুত।

 

৬) অলিভ অয়েল ম্যাসাজ

অলিভ অয়েল ম্যাসাজ মাথার ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে। এর অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি গুণ মাথার স্ক্যাল্পে সংক্রমণ রোধ করে ফলে খুসকি দূর হয়। চুলের গোড়ায় হালকা গরম অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করুন এবং ১ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলের শুষ্কতা দূর করে, প্রাকৃতিকভাবে ময়েশ্চারাইজ করে এবং চুলকে স্বাস্থ্যবান করে তুলে।

 

৭) মেথি এবং নারিকেল তেল

নারিকেল তেলের মধ্যে মেথি বীজ কমপক্ষে ২ দিন ভিজিয়ে রাখুন। এবার এই তেল ফুটিয়ে ঠান্ডা করুন, কুসুম গরম অবস্থায় চলে আসলে চুলের গোড়ায় লাগান। এতে চুল পড়া কমবে এবং চুল ঘন হবে। এছাড়াও চুলের হারানো রঙ ফিরে আসবে দ্রুত। ভালো ফল পেতে সপ্তাহে ২-৩ বার এই মিশ্রণ ব্যবহার করুন।

 

৮) চা পাতা এবং লেবুর রস

চা পাতা চুলের চকচকে ভাব বাড়ায় এবং লেবুর রস স্ক্যাল্পের খুসকি দূর করে। এক কাপ পানিতে চা পাতা সেদ্ধ করে ঠান্ডা করুন। এরপর তাতে লেবুর রস মিশিয়ে চুলে লাগান। চা পাতায় রয়েছে ভিটামিন-সি, ই এবং প্যানথেল। যা চুল পাকা রোধ করে। এছাড়া চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।

 

৯) অ্যাভোক্যাডো মাস্ক

অ্যাভোক্যাডো তে রয়েছে লেসিথিন যা চুলের নারিশমেন্ট প্রদান করে। প্রথমে একটি অ্যাভোক্যাডোর পেস্ট তৈরি করে তাতে অ্যাভোক্যাডোর তেল মিশিয়ে নিন ভালোমতো। তারপর এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসাবে চুলকে আরো মসৃণ করবে পাশাপাশি স্ক্যাল্পের সংক্রমণ রোধ করবে।

 

১০) মধু ও দুধের মিশ্রণ

মধু এবং দুধ দুটোই চুলকে মসৃণ রাখতে সহায়তা করে। ১/৪ কাপ দুধের সাথে ১ টেবিল চামচ মধু ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।তারপর চুলে লাগিয়ে ঘন্টাখানেক পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুলকে আরো বেশি নির্মল ও উজ্জ্বল করবে।

 

১১) ক্যাস্টর ওয়েল

ক্যাস্টর ওয়েল নিয়মিত মাথার ত্বকের স্ক্যাল্পে মালিশ করলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং স্বাভাবিক ভাবেই রক্তের মাধ্যমে টক্সিন বেরিয়ে যায়। এছাড়া ক্যাস্টর ওয়েলে রয়েছে ওমেগা-৬ এবং ভিটামিন – ই, যা চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়। চুলের গোড়ায় ক্যাস্টর অয়েল ম্যাসাজ করে রাখলে চুলের ভঙ্গুরতা কমে  এবং চুলের ঘনত্ব বাড়ে। ক্যাস্টর অয়েল সরাসরি লাগানো যায় অথবা নারিকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

 

১২) রসুনের তেল

রসুনে বিদ্যমান সালফার কোলাজেন উৎপাদনে সহায়তা করে। রসুনের তেলে থাকা সেলেনিয়াম চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। রসুনের তেলের রয়েছে আরো নানাবিধ উপকারী দিক। রসুন ব্লেন্ড করে চুলের গোড়ায় লাগানো যায় অথবা নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে হালকা আঁচে কুসুম গরম করে মাথায় ম্যাসাজ করা যায়। দুইভাবেই চুলের যত্নে অত্যন্ত কার্যকরী রসুনের তেল।

 

আজকের ব্লগে দেখানো সবগুলো উপায় ই যে আপনাকে চেষ্টা করতে হবে এমনটি নয়। যদিও উল্লেখিত উপায়গুলোর সবকিছুই সহজলভ্য, তারপরেও সহজপ্রাপ্যতার ভিত্তিতে যখন যেটা পাওয়া যাবে হাতের কাছে সেইটা নিয়ম মেনে ব্যবহার করে যেতে হবে৷ উল্লেখিত সব উপাদানগুলোই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত। কাজেই নিশ্চিন্তে বাসায় বসে সহজ এই উপায়গুলো ট্রাই করুন এবং ফলাফল শেয়ার করুন অন্যজনের সাথে।

Related Posts

মাশরুম পাউডার স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য একটি আদর্শ এবং খুবই উপকারী খাদ্য সাপ্লিমেন্ট

মাশরুম পাউডার স্বাস্থ্য সচেতনদের জন্য একটি আদর্শ এবং খুবই উপকারী খাদ্য সাপ্লিমেন্ট

মাশরুম পাউডার একটি প্রাকৃতিক সুপারফুড। আমরা সকলেই এমন কিছু খুঁজি যা আমাদের দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে এবং আমাদের শরীরকে

Read More »
স্বাস্থ্য সচেতন সকলের জন্য খাঁটি মধু কেন প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করবেন?

স্বাস্থ্য সচেতন সকলের জন্য খাঁটি মধু কেন প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করবেন?

মধু বাংলাদেশে উৎপাদিত একটি বিশেষ প্রাকৃতিক খাদ্য উপাদান। যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।বিভিন্ন ফুলের নির্যাস থেকে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে

Read More »
গাওয়া ঘি খাওয়ার উপকারিতা

গাওয়া ঘি খাওয়ার উপকারিতা

ঘি এমন একটি উপাদান যা আমাদের অনেকের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় একটি বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে। গাওয়া ঘি আমাদের উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী

Read More »
Shopping cart
Sign in

No account yet?

Start typing to see products you are looking for.
Index
Shop
0 Wishlist
0 items Cart
My account