নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম আমাদের দেশে অতি পরিচিত একটি ঔষধিগুণ সমৃদ্ধ বৃক্ষ। যা দীর্ঘকাল ধরে নানা চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি বহু বর্ষজীবী ও চিরসবুজ গাছ, যার প্রতিটি অংশে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি গুণাগুণ। প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় ৫ হাজার বছর আগে থেকেই নিমকে ঔষধি গাছ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নিম পাতা ও এর অন্যান্য অংশে রয়েছে প্রায় ১৩০ ধরনের ঔষধি গুণাগুণ। যা ত্বক থেকে শুরু করে শরীরের অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। এজন্য আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে নিমকে জাদুকরী পাতা হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

নিম পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

 

চিকিৎসা বিজ্ঞানের আধুনিক গবেষণায় ও নিম পাতার বিভিন্ন গুণাবলীর প্রমাণ মিলেছে। প্রকৃতির এই অসাধারণ উপাদানটি মানুষের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই গাছের গুরুত্ব স্বীকার করে একুশ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঔষধি গাছ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে।  

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় নিম গাছ ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। বিভিন্ন গুণাবলীর জন্য এটি সকল মানুষের কাছে সুপরিচিত।  

 

এই ব্লগে আমরা নিম পাতার নানা উপকারিতা এবং অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো, যাতে এটি ব্যবহারে সঠিক ধারণা পেতে পারেন।

 

নিম পাতার উপকারিতা

 

১. ত্বকের যত্নে নিম পাতা

নিম পাতা ত্বকের স্বাস্থ্যরক্ষায় অসাধারণ ভূমিকা রাখে। এতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য, যা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। যেমন-

  • ব্রণের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে: ব্রণ ত্বকের জন্য একটি সাধারণ সমস্যা, যা সাধারণত ত্বকে ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়। নিমের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলী ব্রণ নির্মূল করতে এবং ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত নিম পাতা পেস্ট বা নিমের রস ব্যবহার করলে মুখের ব্রণ কমে আসে।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে: নিম পাতা ত্বক থেকে মৃত কোষ দূর করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর করে তোলে। এছাড়া এটি ত্বকের দাগ ও পিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে।
  • ফাংগাল ইনফেকশন প্রতিরোধ: নিমের অ্যান্টি-ফাংগাল বৈশিষ্ট্য ত্বকে ফাংগাল ইনফেকশন প্রতিরোধ করে।আপনার স্কিনে যেকোন ফাংগাল ইনফেকশন হলে নিম পাতার পেস্ট ব্যবহার  করতে পারেন।

 

২. চুলের যত্নে নিম পাতা

নিম পা্তা কিন্ত চুলের জন্যও খুবই উপকারী। আপনার চুলের স্বাস্থ্যরক্ষায় নিম পাতা বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করতে পারে। যেমন- চুল পড়া কমানো, উকুন দূর করা এবং চুলের গোড়া মজবুত করা।

  • চুলের উকুন দূর করতে: নিম পাতা চুলের উকুন ধ্বংস করতে সাহায্য করে। কারণ এতে রয়েছে বিশেষ ধরনের উপাদান, যা উকুনকে চুলের গোড়া থেকে দূর করে এবং চুলকে পরিষ্কার রাখে।
  • চুল পড়া কমাতে: নিম পাতার পুষ্টি উপাদান চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের বৃদ্ধিতেও  সাহায্য করে। নিয়মিত নিম পাতা দিয়ে  চুল ধুলে আপনার  চুল পড়ার সমস্যা কমে যাবে।
  • স্ক্যাল্পের সংক্রমণ প্রতিরোধ: অনেক সময় স্ক্যাল্পে ব্যাকটেরিয়া বা ফাংগাল ইনফেকশন হয়। নিমের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-ফাংগাল বৈশিষ্ট্য স্ক্যাল্পকে সুরক্ষিত রাখে ।

 

৩. মুখের স্বাস্থ্য ও ডেন্টাল কেয়ার

নিম পাতা মুখের জীবাণু ধ্বংস করতে ও মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহয্য করে।নিম পাতার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য মাড়ির ব্যাথা কমায় এবং দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখে। পাশাপাশি নিমের কাণ্ড দিয়ে বানানো মেসওয়াক দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতের ময়লা পরিষ্কার হয়। দাঁতের ক্যাভিটি কমে এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করতে সাহয্য করে।

 

৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

নিমের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণাবলী শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি শরীরের বিভিন্ন জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। যা বিভিন্ন রোগ থেকে আপনার শরীরকে  সুরক্ষিত রাখে। এছাড়াও নিম পাতা ঠাণ্ডা-কাশি প্রতিরোধে সাহায্য করে। বিশেষ করে সিজনাল জ্বর বা সর্দি-কাশির সময় নিয়মিত নিম পাতা খেলে এই সকল সংক্রমণ থেকে আপনি সুস্থ্য থাকবেন। শুধু তাই নয় নিম পাতা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে। রক্তকে পরিশুদ্ধ করে এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- ব্রণ, এলার্জি প্রভৃতি কমাতেও সাহায্য করবে।

 

৫. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

নিম পাতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হলো এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এতে এমন কিছু যৌগ রয়েছে যা আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। নিম পাতা রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

 

৬.অ্যালার্জি দূরে রাখে

নিম পাতা অ্যালার্জি সমস্যার জন্য প্রাকৃতিক সমাধান । প্রতিদিন কয়েকটি  নিম পাতা পানিতে  ফুটিয়ে সেই পানিতে গোসল করলে আপনার ত্বকের বিভিন্ন অ্যালার্জি সমস্যা দূর হবে। নিমের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য ত্বকের সংক্রমণ ও অ্যালার্জি দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও আপনি কাঁচা হলুদের সাথে নিম পাতা বেটে একটি পেস্ট তৈরি করে শরীরের আক্রান্ত স্থানে লাগাতে পারেন।

 

৭.চোখের চুলকানি দূর করে

নিম পাতা চোখের চুলকানি ও অস্বস্তি দূর করতেও সাহয্য করে।আপনি কয়েকটি নিম পাতা ফুটিয়ে সেই পানিকে ঠাণ্ডা করে তুলা দিয়ে চোখে লাগাতে পারেন। এটি আপনার চোখের চুলকানি, লালচে ভাব এবং জ্বালাপোড়া কমাতে  সাহয্য করবে।

 

৮.ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকরী

নিম পাতা ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার উপসর্গগুলো কমাতে নিম পাতার রস বা চা ব্যবহার করা হয়। নিয়মিত নিম পাতা সেবনে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। যা ম্যালেরিয়ার জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরকে সুরক্ষা দেয়।

 

নিম পাতার অপকারিতাঃ

নিম পাতা অনেক রোগের প্রাকৃতিক সমাধান হলেও অতিরিক্ত ব্যবহারে বা সঠিক নির্দেশনা না মেনে ব্যবহার করলে এটি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। যেমনঃ

 

১. অতিরিক্ত ব্যবহারে সাইড ইফেক্ট

অতিরিক্ত পরিমাণে নিম পাতা ব্যবহার করলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এতে আপনার বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা বা পাকস্থলীতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক ডোজে নিম পাতা ব্যবহার করা উচিত।

 

২. গর্ভবতী নারীদের জন্য ক্ষতিকর

গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে নিম পাতা ব্যবহার না করাই ভালো। গর্ভাবস্থায় এটি শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এবং গর্ভপাতের কারণ হতে পারে। তাই গর্ভবতী নারীরা নিম পাতা বা নিম তেলের ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন।

 

৩.শিশুদের জন্য উপযুক্ত নয়

নিম পাতা প্রাকৃতিক হলেও এটি শিশুদের জন্য উপযুক্ত নয়। শিশুদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং লিভার পূর্ণ বিকশিত হয়না, ফলে নিম পাতার মধ্যে থাকা শক্তিশালী অ্যালকালয়েড এবং অন্যান্য সক্রিয় যৌগ শিশুদের শরীরে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত নিম সেবনে শিশুদের লিভারে সমস্যা হতে পারে এবং ত্বকে অ্যালার্জি বা র‍্যাশের সমস্যা দেখা দিতে পারে।বিশেষ করে নবজাতক ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে নিম পাতার ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে এড়ানো উচিত।

 

৪. রক্তচাপের উপর প্রভাব

নিম পাতা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তবে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নিম পাতার ব্যবহার রক্তচাপ অত্যধিক কমিয়ে দিতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শে ব্যবহার করা উচিত।

 

৫. লিভারের ক্ষতি করতে পারে

অতিরিক্ত নিম পাতার ব্যবহার লিভারের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এতে লিভারের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে লিভারের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাই দীর্ঘ মেয়াদে বা উচ্চ মাত্রায় নিম পাতা ব্যবহার না করাই ভালো।

 

৬. অ্যালার্জি বা প্রতিক্রিয়া

কিছু মানুষের ক্ষেত্রে নিম পাতা ব্যবহারে ত্বকের অ্যালার্জি হতে পারে, যেমন- চুলকানি বা ফোলাভাব। তাই প্রথমবার ব্যবহার করার আগে ত্বকের একটি ছোট অংশে পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো, যাতে কোনো প্রতিক্রিয়া থাকলে তা আগে থেকেই জানা যায়।

 

নিম পাতা প্রাকৃতিক উপাদান হওয়া সত্ত্বেও কিছু ক্ষেত্রে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এটি ব্যবহারে সতর্কতা প্রয়োজন। তবে সঠিক নিয়মে ও পরিমাণে নিম পাতা ব্যবহারে ত্বক, চুল ও শরীরের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন । নিম পাতা ব্যবহারের আগে যদি কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

 

নিম পাতা প্রকৃতির একটি আশ্চর্য উপহার। যা প্রাচীনকাল থেকে স্বাস্থ্য, ত্বক এবং চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। এর অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণাবলী একে বিভিন্ন সমস্যার প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে। যদিও নিম পাতা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবে অতিরিক্ত বা অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই নির্দিষ্ট সমস্যার জন্য এটি ব্যবহার করতে চাইলে পরিমিত ও সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতএব আপনার সুস্থ জীবনের জন্য সঠিক ও নিরাপদভাবে নিম পাতা ব্যবহার করুন ।

 

আমাদের আজকের ব্লগটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে এটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে শেয়ার করুন। আপনার বন্ধুদেরও জানার সুযোগ করে দিন। এছাড়াও আপনারা পরবর্তীতে কোন বিষয়ে ব্লগ পড়তে চান, তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আপনাদের মতামত আমাদের পরবর্তী কনটেন্ট তৈরি করতে ও লিখতে অনুপ্রেরণা জোগাবে, সুস্থ থাকুন, ধন্যবাদ ।

Related Posts

আলু বোখারা, এই ছোট্ট মিষ্টি-টক ফলটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু করে তোলবে। পুষ্টিতে ভরপুর এই ফলটি শুধু একবার খেলে নয়, এটি দিয়ে তৈরি করা যায় অসংখ্য স্বাস্থ্যকর ও মজাদার রেসিপি। চলুন জেনে নিই আলু বোখারার উপকারিতা, খাওয়ার সঠিক নিয়ম এবং এটি দিয়ে কী কী তৈরি করা যায়। আলু বোখারার পুষ্টিগুণ আলু বোখারা আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে: ভিটামিন সি: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। ভিটামিন কে: রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা রোধ করবে। পটাসিয়াম: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করবে। ফাইবার: হজমশক্তি বাড়াবে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: দেহের কোষগুলোকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে এবং বার্ধক্যে প্রতিরোধ করবে। আলু বোখারার উপকারিতা ১. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে আলু বোখারা প্রাকৃতিক ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করবে এবং অন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়াবে। ২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ আলু বোখারা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। এটি ফ্লু ও সাধারণ সর্দি-কাশি প্রতিরোধ করবে। ৩. হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা আলু বোখারায় থাকা ভিটামিন কে এবং ক্যালসিয়াম হাড়কে শক্তিশালী করবে। এটি অস্টিওপোরোসিসের প্রতিরোধ করবে। ৪. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখবে পটাসিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। ৫. হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখা আলু বোখারা কোলেস্টেরল কমাবে, যা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাবে। ৬. ত্বকের যত্নে উপকারী এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াবে এবং বার্ধক্যের লক্ষণ কমাবে। ৭. ওজন নিয়ন্ত্রণ ফাইবারের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এটি ক্ষুধা কমাবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করবে। আলু বোখারা খাওয়ার নিয়ম আলু বোখারা খাওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে চললে এর পরিপূর্ণ উপকারিতা উপভোগ করা যাবে। এখানে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো: ১. সকালে খালি পেটে খান এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে ৩-৪টি ভিজিয়ে খেয়ে নিন। এটি হজমশক্তি বাড়াবে এবং শরীর ডিটক্সিফাই করবে। ২. স্ন্যাকস হিসেবে খান দিনের মধ্যে হালকা ক্ষুধা লাগলে শুকনো আলু বোখারা খান। এটি দীর্ঘক্ষণ এনার্জি ধরে রাখবে। ৩. মিষ্টি পানীয় তৈরি করে খান আলু বোখারার শরবত বা স্মুদি বানিয়ে পান করুন এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখবে এবং পুষ্টি জোগাবে। ৪. রান্নায় ব্যবহার করুন পোলাও বা বিরিয়ানিতে আলু বোখারা একটি সুস্বাদু উপাদান হিসেবে ব্যবহার করুন। ৫. খাওয়ার পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ অতিরিক্ত না খেয়ে প্রতিদিন ৫-৬টি আলু বোখারা খাওয়া যথেষ্ট। অতিরিক্ত খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হবে। আলু বোখারা দিয়ে তৈরি রেসিপি আলু বোখারা শুধু কাঁচা বা শুকনো খাওয়াই নয়, বরং এটি দিয়ে নানা রকম সুস্বাদু পদ তৈরি করা যাবে। এখানে কিছু জনপ্রিয় রেসিপি দেওয়া হলো: ১. আলু বোখারার শরবত একটি জনপ্রিয় ও স্বাস্থ্যকর পানীয়। এটি তৈরি করতে যা যা লাগবে: ৪-৫টি শুকনো আলু বোখারা ১ চা চামচ চিনি বা মধু ১ গ্লাস ঠান্ডা পানি সামান্য লেবুর রস পদ্ধতি: শুকনো আলু বোখারা কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে এরপর ব্লেন্ড করে ঠান্ডা পানিতে মিশিয়ে নিন। চিনি বা মধু ও লেবুর রস দিয়ে পরিবেশন করুন। ২. আলু বোখারার চাটনি মিষ্টি ও টক স্বাদের জন্য এটি দারুণ উপকার করবে। উপকরণ: ১০টি শুকনো আলু বোখারা চিনি লবণ ভিনেগার সামান্য গোলমরিচ পদ্ধতি: সব উপকরণ একসঙ্গে সেদ্ধ করে ঘন হয়ে এলে ঠান্ডা করুন। চাটনি রুটি, পরোটা বা ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন। ৩. আলু বোখারার কেক বা ডেজার্ট শুকনো আলু বোখারা ছোট টুকরো করে কেকের ব্যাটারে মিশিয়ে বেক করুন। এটি দারুণ একটি স্বাস্থ্যকর ডেজার্ট হবে। ৪. পোলাও বা বিরিয়ানিতে ব্যবহার আলু বোখারা পোলাও বা বিরিয়ানিতে মিষ্টি স্বাদ বৃদ্ধি করবে। এটি শুধু স্বাদই বাড়ায় না, বরং খাবারকে পুষ্টিকরও করে তোলবে। আলু বোখারা কেন আপনার খাদ্যতালিকায় থাকবে? আলু বোখারা একটি প্রাকৃতিক সুপারফুড, যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করবে এবং শরীরকে সুস্থ্য রাখবে। এটি সাশ্রয়ী, সহজলভ্য এবং অসাধারণ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। আপনি যদি স্বাস্থ্য সচেতন হন এবং একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাদ্য সন্ধান করেন, তবে আলু বোখারা আপনার জন্য সেরা পছন্দ হবে। উপসংহার আলু বোখারা একটি ছোট ফল হলেও এর স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং বহুমুখী ব্যবহার অনেক বেশি। এটি আপনার দেহকে ভেতর থেকে পুষ্টি জোগাবে এবং সুস্থ্য রাখবে। এর সহজ রেসিপিগুলো আপনার খাদ্যতালিকায় নতুন স্বাদ যোগ করবে। তাই, আজই আপনার দৈনন্দিন খাবারে আলু বোখারার ব্যবহার করুন এবং এর অসাধারণ গুণাগুণ উপভোগ করুন।

আলু বোখারার উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম: স্বাস্থ্য ও স্বাদের এক চমৎকার উৎস

আলু বোখারা, এই ছোট্ট মিষ্টি-টক ফলটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে স্বাস্থ্যকর ও সুস্বাদু করে তোলবে। পুষ্টিতে ভরপুর এই ফলটি শুধু একবার

Read More »
Shopping cart
Sign in

No account yet?

Start typing to see products you are looking for.
Index
Shop
0 Wishlist
0 items Cart
My account