Blog

কিডনির সমস্যা হলে কী খাওয়া উচিত: সুস্থ জীবনের জন্য সঠিক দিশা

কিডনি মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত তরল দূর করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীরের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করে। কিডনির সমস্যার কারণে অনেক সময় আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হয় । কিডনির সঠিক যত্ন নেওয়া এবং পুষ্টিকর খাবার নির্বাচন করাই এই সকল সমস্যার সহজ সমাধান।  

এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব কিডনির সমস্যা হলে কী খাওয়া উচিত এবং কীভাবে সঠিক ডায়েটের মাধ্যমে কিডনি সুস্থ রাখা যায়।

কিডনির সমস্যা হলে কী খাওয়া উচিত: সুস্থ জীবনের জন্য সঠিক দিশা

কিডনির সমস্যা হলে কী খাওয়া উচিত: সুস্থ জীবনের জন্য সঠিক দিশা

কিডনির সমস্যার ক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস কেন গুরুত্বপূর্ণ?

কিডনি যখন সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে টক্সিন এবং অতিরিক্ত ফ্লুইড জমা হতে থাকে। সঠিক ডায়েট কিডনির ওপর চাপ কমাতে, শরীরের পুষ্টি বজায় রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। 

  • রক্তে টক্সিনের মাত্রা কমায়
  • ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখে।
  • প্রোটিনের সঠিক পরিমাণ নিশ্চিত করে।
  • অতিরিক্ত সোডিয়াম, পটাসিয়াম এবং ফসফরাস নিয়ন্ত্রণে রাখে।

 

কিডনির সমস্যায় কী খাওয়া উচিত?

কিডনির সমস্যায় খাদ্য নির্বাচন অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করতে হয়। নীচে এমন কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো, যা কিডনির জন্য উপকারী।

১. লো-সোডিয়াম খাবার

কিডনির সমস্যা থাকলে সোডিয়ামযুক্ত খাবার কমাতে হবে, কারণ অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরে ফ্লুইড ধরে রাখে এবং রক্তচাপ বাড়ায়।

  • উপকারী খাবার:
    • তাজা ফল ও সবজি
    • লবণহীন বাদাম
    • লবণমুক্ত ভেষজ মশলা

২. লো-পটাসিয়াম খাবার

পটাসিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়

  • উপকারী খাবার:
    • আপেল, বেরি, আঙ্গুর
    • ফুলকপি, শসা
    • সাদা চাল, পাস্তা 

৩. প্রোটিনের সঠিক পরিমাণ

কিডনির সমস্যা থাকলে প্রোটিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি, কারণ অতিরিক্ত প্রোটিন কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে।

  • উপকারী খাবার:
    • ডিমের সাদা অংশ
    • কম চর্বিযুক্ত মাংস
    • মাছ (পরিমাণমতো)

৪. লো-ফসফরাস খাবার

ফসফরাসের অতিরিক্ত মাত্রা হাড় দুর্বল করতে পারে এবং কিডনির সমস্যা বাড়ায়

  • উপকারী খাবার:
    • ফুলকপি, ব্রকলি
    • সাদা রুটি
    • কম ফসফরাসযুক্ত দুধ বা দই

৫. তরল নিয়ন্ত্রণ

কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে অতিরিক্ত তরল জমা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই পানির পরিমাণ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারণ করুন।

  • উপকারী তরল:
    • পরিষ্কার পানি
    • ফ্লুইড সমৃদ্ধ ফল যেমন বেরি ও আঙ্গুর

৬. অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার

অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কিডনি কোষ রক্ষা করতে এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

  • উপকারী খাবার:
    • ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি
    • লাল মরিচ
    • রসুন

 

কোন খাবার এড়িয়ে চলা উচিত?

কিডনির সমস্যা বাড়াতে পারে এমন খাবার বা উপাদান এড়িয়ে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে সে সকল খাবারের তালিকা দেয়া হলোঃ 

১. উচ্চ সোডিয়ামযুক্ত খাবার

  • প্রক্রিয়াজাত খাবার
  • চিপস, প্যাকেটজাত স্ন্যাকস
  • টেবিল সল্ট

২. উচ্চ পটাসিয়ামযুক্ত খাবার

  • কলা, কমলা
  • আলু, টমেটো
  • শুকনো ফল

৩. উচ্চ ফসফরাসযুক্ত খাবার

  • চকোলেট
  • প্রসেসড চিজ
  • কাজু, পেস্তা

৪. অতিরিক্ত প্রোটিনযুক্ত খাবার

  • বেশি মাংস বা মুরগি
  • চর্বিযুক্ত মাছ
  • ডাল বা ছোলার বেশি পরিমাণ গ্রহণ

৫. ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল

  • কফি এবং এনার্জি ড্রিঙ্ক
  • মদ্যপ পানীয়

 

কিডনির সমস্যা অনুযায়ী ডায়েট পরিকল্পনা

ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD)

  • প্রোটিন কম খাওয়া জরুরি।
  • লো-পটাসিয়াম এবং লো-সোডিয়াম খাবার গ্রহণ করুন।

ডায়ালাইসিসে থাকা রোগী

  • প্রোটিনের পরিমাণ বাড়াতে হবে।
  • নিয়মিত ফসফরাস বাইন্ডার ব্যবহার করুন।

কিডনি স্টোনের সমস্যা

  • বেশি করে পানি পান করুন।
  • লবণ এবং অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার (যেমন পালং শাক) এড়িয়ে চলুন।

 

কিডনি ভালো রাখতে প্রয়োজনীয় টিপস

১. তরল নিয়ন্ত্রণ: প্রয়োজনের বেশি পানি পান করবেন না।
২. ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন: বিশেষ ডায়েট পরিকল্পনার জন্য বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন।
৩. রক্তচাপ এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন: অতিরিক্ত ওজন কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
৫. প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।

 

কিডনির সমস্যায় সঠিক ডায়েট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং ক্ষতিকর খাবার এড়িয়ে চলার মাধ্যমে আপনি আপনার কিডনির  সুস্থ রাখতে পারবেন।   

সুস্থ জীবনধারার জন্য, খাদ্যতালিকা তৈরির সময় কিডনির অবস্থার গুরুত্ব বিবেচনা করে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। আপনার খাদ্য তালিকায় উপকারী খাবার যুক্ত করুন এবং ক্ষতিকর খাবার এড়িয়ে চলুন। 

Related Posts

ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ ও রিভার্স করার বিজ্ঞানসম্মত উপায়

Fatty Liver রিভার্স করার সায়েন্টিফিক ব্যাখ্যা:ফ্যাটি লিভার হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে, যা দীর্ঘমেয়াদে সিরোসিস বা

Read More »

অগ্ন্যাশয়ের সমস্যার ৭টি লক্ষণ

আমাদের শরীরে অগ্ন্যাশয় (প্যানক্রিয়াস) একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।মূলত আমাদের শরীরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে। হজম প্রক্রিয়ার জন্য এনজাইম নিঃস্বরণ এবং

Read More »
Shopping cart
Sign in

No account yet?

Start typing to see products you are looking for.
Index
Shop
0 Wishlist
0 items Cart
My account