বিভিন্ন অস্বাভাবিক কারণে শরীরের ওজন কমে যেতে পারে। হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া সাধারণত স্বাস্থ্যকর নয়। এটি বেশ কয়েকটি শারীরিক বা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া মানে শরীরের ভেতরে কোন সমস্যার উপস্থিতি যা অতিরিক্ত ক্যালরি খরচের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ওজন কমে যাওয়ার কারণগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দ্রুত ওজন কমে যাওয়া কোন রোগের ইঙ্গিত দেয়। নিচে হঠাৎ ওজন কমে যাওয়ার কিছু কারণ আলোচনা করা হলো:
Table of Contents
Toggleথাইরয়েড হরমোনের সমস্যা (হাইপার থাইরয়েডিজম)
থাইরয়েড গ্রন্থি আমাদের শরীরের বিপাক প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। যখন এই গ্রন্থি অতিরিক্ত হরমোন উৎপন্ন করে, তখন তাকে হাইপার থাইরয়েডিজম বলা হয়। হাইপার থাইরয়েডিজম হলে শরীরের বিপাকীয় হার বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত ক্যালরি পুড়ে যেতে থাকে। ফলে ওজন দ্রুত কমে যেতে পারে। এই অবস্থায় সাধারণত হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, উদ্বেগ বা অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
ডায়াবেটিস (টাইপ ১ ডায়াবেটিস)
ডায়াবেটিস রোগে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপন্ন করতে পারে না বা এটি শরীরের কোষে কাজ করে না। বিশেষ করে টাইপ ১ ডায়াবেটিসে শরীরের কোষ গ্লুকোজ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়, এই কারণে টাইপ ১ ডায়াবেটিসের রোগীদের ওজন দ্রুত কমে যায়।
ক্যান্সার
ক্যান্সার এমন একটি রোগ যেখানে অস্বাভাবিক কোষের বৃদ্ধি ঘটে এবং এই কোষগুলো শরীরের শক্তি দ্রুত খরচ করতে শুরু করে। প্যানক্রিয়াটিক, গ্যাস্ট্রিক, লিভার এবং কলন ক্যান্সার ওজন কমানোর প্রধান কারণ হতে পারে। ক্যান্সার রোগের কারণে শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া বদলে যায় এবং রোগীর ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়। যা দ্রুত ওজন কমার কারণ হতে পারে।
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা
বিভিন্ন গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা যেমন- সেলিয়াক ডিজিজ, ক্রোন্স ডিজিজ, পেপটিক আলসার ইত্যাদি খাবার থেকে সঠিক পুষ্টি গ্রহণে সমস্যা সৃষ্টি করে। এতে শরীর প্রয়োজনীয় ক্যালরি ও পুষ্টি না পাওয়ার কারণে ওজন কমে যায়।
ডিপ্রেশন এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যা
ডিপ্রেশন এবং দুশ্চিন্তা সহ বিভিন্ন মানসিক রোগে ক্ষুধামন্দা দেখা দিতে পারে। যা খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি মানসিক সমস্যার কারণে শরীরের শক্তি ক্ষয় বেশি হতে পারে। বিশেষ করে যখন দীর্ঘমেয়াদী ডিপ্রেশন এবং উদ্বেগের সমস্যা থাকে, তখন এটি শরীরের ওজন কমার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইনফেকশন এবং ভাইরাল রোগ
বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন যেমন- যক্ষ্মা, এইচআইভি বা অন্য কোন দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের কারণে শরীরের ওজন দ্রুত কমে যেতে পারে। এই ধরনের সংক্রমণ শরীরের ভেতরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে এবং শরীরের শক্তি খরচ বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘ সময় ধরে ইনফেকশন থাকার কারণে রোগী ক্রমাগত ওজন হারাতে থাকে।
পুষ্টির অভাব
অন্য একটি সাধারণ কারণ হলো শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব। যেমন- ভিটামিন ডি, বি১২, আয়রন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির ঘাটতি হলে ওজন কমে যেতে পারে। এছাড়া পর্যাপ্ত ক্যালরি গ্রহণ না করলে ও ওজন কমতে থাকে। পুষ্টিহীনতা শরীরের মাংসপেশি ক্ষয় ঘটায় এবং ওজন কমিয়ে আনে।
ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু ঔষধ যেমন- কেমোথেরাপি, স্টিমুল্যান্টস, কিছু অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এবং অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ শরীরে পুষ্টির শোষণ প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে এবং ওজন কমিয়ে দেয়। কিছু ঔষধ ক্ষুধা কমিয়ে দেয় এবং শক্তি খরচ বাড়িয়ে তুলে।
মেটাবলিক ডিজিজ
অ্যাডিসন ডিজিজ, কুশিং সিন্ড্রোম এবং অন্যান্য মেটাবলিক রোগ শরীরের মেটাবলিজম বা বিপাক প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলে। যা ওজন কমানোর কারণ হতে পারে। এই ধরনের রোগে শরীরে সঠিকভাবে পুষ্টি ব্যবহার ও জমাতে সমস্যা হয় এবং প্রায়ই ওজন কমতে থাকে।
ক্রনিক স্ট্রেস
দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং এটি কর্টিসল হরমোন বাড়ায়। যা বিপাক প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলে। ক্রনিক স্ট্রেসে খাবারের চাহিদা কমে যেতে পারে, ফলে ওজন কমে যায়।
খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন যেমন- নির্দিষ্ট কোন খাদ্য গ্রুপ বাদ দেওয়া বা ক্যালরি ঘাটতির ডায়েট অনুসরণ করলে ওজন দ্রুত কমে যেতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের কারণে ওজন কমতে পারে, বিশেষ করে যখন পুষ্টিকর খাবার ঠিকমতো গ্রহণ করা হয় না।
প্যানক্রিয়াটিক এবং লিভার ডিজিজ
লিভার এবং প্যানক্রিয়াসের বিভিন্ন রোগ যেমন- হেপাটাইটিস, সিরোসিস এবং প্যানক্রিয়াটাইটিস শরীরের খাদ্য শোষণ এবং বিপাক প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটায়। এই কারণে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়, ফলে ওজন কমতে থাকে।
বার্ধক্য
বার্ধক্যে শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া কমে যায় এবং মাংসপেশির ক্ষয় বাড়ে। ফলে শরীরের ওজন কমে যেতে পারে।,
অনিদ্রা
অনিদ্রা বা পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ায় এবং হরমোনের ভারসাম্যে প্রভাব ফেলে। ঘুম না হলে শরীরে গ্রেলিন এবং লেপটিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। যা ক্ষুধা এবং বিপাক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। এই কারণে দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের সমস্যায় ওজন কমে যেতে পারে।
খাদ্যে অ্যালার্জি ও অসহনীয়তা
কিছু মানুষের শরীর নির্দিষ্ট খাদ্যদ্রব্যের প্রতি সংবেদনশীল যেমন- ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স বা গ্লুটেন সেনসিটিভিটি। এসব খাদ্য গ্রহণের ফলে হজমে সমস্যা হয় এবং পুষ্টির শোষণ বাধাপ্রাপ্ত হয়, যা ক্রমাগত ওজন কমানোর কারণ হতে পারে।
ওজন দ্রুত কমে যাওয়া শারীরিক ও মানসিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে, যা উপেক্ষা করা উচিত নয়। হঠাৎ ওজন কমতে থাকলে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এর প্রকৃত কারণ নির্ণয় করা সম্ভব। আজকের এই ব্লগটি পড়ে যদি আপনার কাছে ভালো লাগে বা আপনি উপকৃত হন তাহলে বলবো FIT FOR LIFE কে ফলো করুন। আপনার আপনজনের কাছে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ।