ওজন বাড়ানোর চ্যালেঞ্জ অনেকের জন্য সহজ নয়। অনেকেই শারীরিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে বা শরীরকে স্বাস্থ্যকর রাখতে ওজন বাড়ানোর প্রয়োজন অনুভব করেন। তবে বেশিরভাগ মানুষই সঠিক পদ্ধতি না জানার কারণে এই প্রক্রিয়ায় সফল হতে পারেন না।
অনেকেই যেমন ওজন কমানোর চেষ্টা করেন, ঠিক তেমনি কিছু মানুষ আছেন যাদের ওজন বাড়ানোই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তাদের বিপাক প্রক্রিয়া এতটাই দ্রুত যে সহজে ওজন বাড়ে না। শরীরের একটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং শরীরের শক্তি ও সুস্থতার জন্য ও দরকার।
আবার অনেকেই মনে করেন যে ওজন বাড়ানোর মানেই জাঙ্ক ফুড খাওয়া এবং অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস। কিন্তু এটি স্বাস্থ্যকে ক্ষতির মুখে ফেলে দিতে পারে। বরং সঠিক পরিকল্পনা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে আপনি একটি শক্তিশালী ও সুস্থ শরীর পেতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে সঠিক পদ্ধতিতে ওজন বাড়ানো সম্ভব।
Table of Contents
Toggleপর্যাপ্ত ক্যালরি গ্রহণ করা
ওজন বাড়ানোর জন্য প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো প্রতিদিনের ক্যালরি ইনটেক বৃদ্ধি করা। ওজন বাড়ানোর জন্য আপনার প্রতিদিন যে পরিমাণ ক্যালরি প্রয়োজন, তার চেয়ে কিছু বেশি ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে। এটি সম্ভব না হলে শরীর তার বর্তমান ওজনেই স্থির থাকবে বা প্রয়োজনীয় ক্যালরি পূরণ না হলে ওজন কমতে পারে। যারা ওজন বাড়াতে চান তাদের প্রতিদিন অতিরিক্ত ৩০০-৫০০ ক্যালরি গ্রহণের পরিকল্পনা করা দরকার। অর্থাৎ যদি প্রতিদিন আপনার ২,০০০ ক্যালোরির প্রয়োজন হয় তবে আপনি প্রতিদিন ২,৩৫০-২,৫০০ ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে। এভাবে ধীরে ধীরে ওজন বাড়তে শুরু করবে।
কীভাবে ক্যালরি বাড়াবেন?
১. দিনে একাধিকবার খাবার খান
বেশিরভাগ মানুষ সাধারণত দিনে তিন বেলা থাবার খেয়ে থাকেন। তবে যারা ওজন বাড়াতে চান তাদের জন্য দিনে ৫-৬ বেলা খাবার খাওয়া অধিক কার্যকরী। এতে শরীরে নিয়মিতভাবে ক্যালরি প্রবেশ করবে এবং বিপাকের জন্য যথেষ্ট পুষ্টি পাওয়া সম্ভব হবে। খাবারগুলো যেন ভারী ও পুষ্টিকর হয় সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।
২. খাবারের মধ্যে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস যোগ করুন
প্রতিদিনের প্রধান খাবারের মাঝে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস গ্রহণ করুন। স্ন্যাকস হিসেবে জাফরান বাদাম মিল্কসেক, ফল, দই, মিষ্টি আলু, চিজ এবং গ্রানোলা বার খুবই ভালো। এই ধরনের স্ন্যাকসগুলোতে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট থাকে যা দ্রুত ক্যালরি বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরকে পর্যাপ্ত পুষ্টি প্রদান করে। খাবারের সময়ের ফাঁকে ফাঁকে এই ধরনের স্ন্যাকস খাওয়া আপনার ক্যালরি গ্রহণ বাড়াতে সহায়ক হবে।
৩. স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন
ওজন বাড়ানোর জন্য চর্বিযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো, নারকেল তেল এবং বীজ জাতীয় খাবারগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যকর চর্বি পাওয়া যায়। স্বাস্থ্যকর চর্বির ভালো উৎস নারকেল তেল। এই চর্বিগুলো ক্যালরি বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরের জন্য উপকারী।
৪. উচ্চ-ক্যালরির খাবার খান
উচ্চ-ক্যালরিযুক্ত খাবার দ্রুত ক্যালরি গ্রহণ বাড়াতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের শস্য, ভাত, মিষ্টি আলু, পাস্তা এবং চিজ। এসব খাবার খেলে দ্রুত ক্যালরি বাড়ানো সম্ভব এবং এগুলো শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি মেটায়।
প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ
ওজন বাড়ানোর জন্য প্রোটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি পেশি গঠনে সহায়ক এবং শরীরকে শক্তি জোগায়। প্রোটিন শরীরের পেশি গঠন, মাংসপেশী মেরামত এবং শক্তি বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তাই ওজন বাড়ানোর জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন যুক্ত করা দরকার।
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার
১. প্রাণিজ প্রোটিন
- মুরগির মাংস ও ডিমপ্রোটিনের সহজলভ্য ও কার্যকর উৎস।
- মাছ: প্রোটিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎকৃষ্ট উৎস, যা পেশির গঠনে সাহায্য করে।
- দুধ ও দই: প্রোটিনের পাশাপাশি ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি সরবরাহ করে।
- পনির: উচ্চ-ক্যালরি ও উচ্চ-প্রোটিন খাদ্য হিসেবে কার্যকর।
২. উদ্ভিজ্জ প্রোটিন
- সয়াবিন: উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের অন্যতম সেরা উৎস।
- ছোলা ও মসুর ডাল: প্রোটিনের পাশাপাশি ফাইবারও সমৃদ্ধ।
- বীজ: কাজু বাদাম, চিনা বাদাম, চিয়া বীজ এবং সূর্যমুখীর বীজ প্রোটিনের ভালো উৎস এবং সহজে হজমযোগ্য। পাশাপাশি চিয়া বীজ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎকৃষ্ট উৎস।
পর্যাপ্ত ঘুম
স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুম শরীরের মেরামত, পুনরুজ্জীবন এবং পেশি বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সঠিক পরিমাণ ঘুমের অভাবে শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া ও পেশি গঠনের হার কমে যায়, যা ওজন বাড়ানোকে বাধাগ্রস্ত করে।
কেন পর্যাপ্ত ঘুম গুরুত্বপূর্ণ?
ঘুমের সময় শরীর নিজেকে পুনরুদ্ধার করে, যা শরীরের কোষ ও পেশিকে মেরামত করতে সাহায্য করে।
- পেশির বৃদ্ধি: ঘুমের সময় শরীর থেকে গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত হয়, যা পেশির বৃদ্ধি ও শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- হরমোনের ভারসাম্য: পর্যাপ্ত ঘুম শরীরে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা ওজন বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য কিছু টিপস
- প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়ার অভ্যাস করুন।
- শোবার আগে মনকে শান্ত করতে মেডিটেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন।
- ঘুমের আগে ভারী খাবার বা ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলুন।
- প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর অভ্যাস করলে শরীর ভালোভাবে বিশ্রাম পাবে এবং এটি আপনার ওজন বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে সাহায্য করবে।
নিয়মিত ব্যায়াম করা
শুধু খাদ্য গ্রহণ করেই ওজন বাড়ানো সম্ভব নয়। এর সঙ্গে ব্যায়ামের ও প্রয়োজন আছে। নিয়মিত ব্যায়াম এবং ভার উত্তোলনের মাধ্যমে আপনার মাংসপেশী বৃদ্ধি পাবে। যা শুধু ওজন বাড়াতেই সাহায্য করবে না বরং আপনাকে আরও শক্তিশালী ও আকর্ষণীয় করে তুলবে। ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার শরীরে ক্যালরি খরচ, মাংসপেশী গঠন এবং শক্তি বৃদ্ধির প্রক্রিয়া আরও কার্যকরী হয়। কিছু প্রাথমিক ব্যায়াম যা আপনার জন্য উপকারী হতে পারে যেমন- স্কোয়াট, ডেডলিফট,বেঞ্চ প্রেস ইত্যাদি।
ওজন বাড়ানো সহজ প্রক্রিয়া নয়। এর জন্য ধৈর্য ও নিয়মানুবর্তিতা প্রয়োজন। আপনি যদি প্রতিদিন নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ব্যায়াম এবং বিশ্রাম মেনে চলেন, তবে ধীরে ধীরে আপনি স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বাড়াতে পারবেন। ওজন বৃদ্ধি শুধুমাত্র চেহারার উন্নতি নয়। বরং এটি শরীরকে শক্তিশালী করে তোলে এবং আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।
আপনারা যারা স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন, তারা এই গাইডলাইনগুলো অনুসরণ করতে পারেন । আপনাদের যদি ওজন বৃদ্ধির অভিজ্ঞতা বা অন্য কোনো পরামর্শ থাকে, তা আমাদের কমেন্টে করে জানাতে ভুলবেন না। আরও স্বাস্থ্য বিষয়ক ব্লগ পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন ।