প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী খাবার পায়েস। পায়েস একটি পুষ্টিকর খাবার। যেকোন বয়সের মানুষই এটি খেতে পারে। সুস্বাদু পায়েস তৈরি করতে হলে প্রয়োজন সঠিক রেসিপি। পায়েস বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত করা হয়। আজকের ব্লগে আমরা মজাদার পায়েস রেসিপি নিয়ে আলোচনা করবো।
Table of Contents
Toggleপায়েস রেসিপি : ঘরেই পায়েস রান্নার সহজ রেসিপি
পায়েস বাংলাদেশের এবং ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় মিষ্টান্ন। এটি বিভিন্ন উৎসব, পূজা এবং সামাজিক অনুষ্ঠানে বিশেষ স্থান দখল করে রেখেছে। পায়েস বানানোর প্রক্রিয়া খুবই সহজ, তবে এটি অত্যন্ত ধৈর্য এবং যত্নের সঙ্গে করতে হয়। চলুন ধাপে ধাপে পায়েস বানানোর প্রক্রিয়া এবং এর বিভিন্ন ধরণ সম্পর্কে জানি।
পায়েস তৈরির উপকরণ
পায়েস বানানোর জন্য সাধারণত নিম্নলিখিত উপকরণগুলো প্রয়োজন:
১. চাল: পায়েসে গন্ধভোগ বা বাসমতী চাল ব্যবহার করা হয়। তবে ঐতিহ্যবাহী পায়েসের জন্য ছোট দানার আতপ চাল ব্যবহার করা হয়।
পরিমাণ: আধা কাপ।
২. দুধ: পুরো দুধ (ফুল-ক্রিম দুধ) পায়েসের জন্য আদর্শ।
পরিমাণ: ১ লিটার।
৩. চিনি বা গুড়: স্বাদ অনুযায়ী। চিনি ব্যবহার করলে সাদা পায়েস হয়, আর খেজুর গুড় ব্যবহার করলে এটি বিশেষ ঘ্রাণ ও রঙ পায়।
৪. ঘি: সঠিক পরিমাণে খাঁটি গাওয়া ঘি এর ব্যবহার , চাল ভাজার জন্য।
৫. এলাচ: ২-৩টি, সুগন্ধের জন্য।
৬. ড্রাই ফ্রুটস ও বাদাম: কাজু, কিসমিস, পেস্তা বা নারকেল কুচি ।
৭. লবণ/পিংক সল্ট: এক চিমটি সাধারন লবন কিংবা স্বাস্থ্যকর হিমালয়ান পিংক সল্ট , স্বাদের ভারসাম্য আনতে।
পায়েস প্রস্তুত প্রক্রিয়া
ধাপ ১: চাল প্রস্তুত করা
- আতপ চাল ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
- চাল ১৫-২০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
- চালের পানি ঝরিয়ে নিন এবং শুকিয়ে নিন।
ধাপ ২: দুধ জ্বাল দেওয়া
- একটি পুরু তলার হাঁড়ি নিন।
- তাতে পুরো দুধ ঢেলে মাঝারি আঁচে জ্বাল দিন।
- দুধ ফুটে উঠলে অল্প আঁচে রাখুন এবং মাঝে মাঝে নেড়ে দিন যাতে নিচে লেগে না যায়।
ধাপ ৩: চাল ভাজা
- অন্য একটি পাত্রে ১ টেবিল চামচ ঘি গরম করুন।
- তাতে চাল দিয়ে হালকা ভেজে নিন। এটি চালের গন্ধ বাড়ায় এবং পায়েসে আলাদা স্বাদ যোগ করে।
ধাপ ৪: চাল ও দুধ মেশানো
- ভাজা চাল ফুটন্ত দুধে ঢেলে দিন।
- চুলার আঁচ কমিয়ে ধীরে ধীরে নেড়ে চাল দুধে মিশিয়ে দিন।
- চাল নরম ও সেদ্ধ হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
ধাপ ৫: মিষ্টি দেওয়া
- চাল ভালোভাবে সেদ্ধ হলে তাতে চিনি বা গুড় যোগ করুন।
- গুড় ব্যবহার করলে এটি আলাদা একটি পাত্রে গলিয়ে নিতে হবে যাতে পায়েস ফেটে না যায়।
- মিষ্টি দিয়ে আরও ১০-১৫ মিনিট জ্বাল দিন।
ধাপ ৬: সুগন্ধ যোগ করা
- শেষে এলাচ গুঁড়ো, কাজু, কিসমিস এবং নারকেল কুচি যোগ করুন।
- আরও ৫ মিনিট নেড়ে চুলা বন্ধ করে দিন।
বিভিন্ন ধরনের পায়েস
বিভিন্ন পদ্ধতিতে পায়েস রান্না করা যায়। পায়েস অনেক রকমের আছে। কিছু জনপ্রিয় ধরনের পায়েস হলো:
১. গুড়ের পায়েস:
এটি সাধারণ পায়েসের মতোই, তবে চিনির বদলে খেজুরের গুড় ব্যবহার করা হয়। শীতকালে এটি বিশেষভাবে জনপ্রিয়।
২. সেমাইয়ের পায়েস:
সেমাইয়ের পায়েস সেমাই দিয়ে তৈরি সহজ প্রস্তুত রেসিপি। এটি সেমাই ভেজে তৈরি করা হয়।
৩. সাবুদানার পায়েস:
সাবুদানা দিয়ে ও পায়েস বানানো যায়। এটি বিশেষ করে উপবাসের দিনগুলোতে খাওয়া হয়।
৪. চিঁড়ার পায়েস:
চিঁড়া দিয়ে পায়েস তৈরি করা যায়, যা সহজ এবং পুষ্টিকর।
৫. নারকেলের পায়েস:
দুধের সঙ্গে নারকেলের কোরানো অংশ মিশিয়ে একটি সুস্বাদু মিশ্রণ তৈরি করা হয়।
পায়েস তৈরির টিপস
- দুধ ঘন করতে ধৈর্য ধরে জ্বাল দিন। এটি পায়েসকে আরও মাখনসদৃশ করবে।
- গুড় ব্যবহার করলে দুধ ঠান্ডা করে তারপর মেশান। গরম দুধে গুড় দিলে দুধ ফেটে যেতে পারে।
- পায়েস ঠান্ডা হলে তা ঘন হয়ে যায়, তাই রান্নার সময় এটি কিছুটা পাতলা রাখুন।
- এলাচ, দারুচিনি বা জাফরান যোগ করলে বিশেষ সুগন্ধ পাবেন।
- পরিবেশনের আগে বাদাম ভেজে দিন, এটি পায়েসে একটি ক্রাঞ্চি টেক্সচার যোগ করবে।
পায়েস পরিবেশন করা
পায়েস গরম বা ঠান্ডা পরিবেশন করা যায়। এটি পাত্রে ঢেলে উপর থেকে পেস্তা কুচি বা জাফরান ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।
পরিশেষে বলা যায় যে, এইভাবে আপনি পায়েস তৈরি করতে পারেন। আমাদের রেসিপি ব্যবহার করে পায়েস রান্না করে দেখুন আপনার অতিথি আপনাকে বাহবা দিবে।
আমাদের আজকের ব্লগটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে এটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে শেয়ার করুন। আপনার বন্ধুদেরও জানার সুযোগ করে দিন। এছাড়াও, আপনারা পরবর্তীতে কোন বিষয়ে ব্লগ পড়তে চান, তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আপনাদের মতামত আমাদের পরবর্তী কনটেন্ট তৈরি করতে ও লিখতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।