বর্তমানে ড্রাগন ফল জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে। ড্রাগন ফল সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। এই ফলটি দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, এর স্বাস্থ্যগুণও তেমনি চমকপ্রদ। তবে অনেকেই হয়তো ড্রাগন ফলের উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না। আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেও এটি অসাধারণ ভূমিকা রাখতে পারে। চলুন আজকের ব্লগে ড্রাগন ফলের নানা গুণাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
ড্রাগন ফল মূলত একটি ক্যাকটাস জাতীয় ফল। যা দক্ষিণ এশিয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। এর বাইরের রঙ উজ্জ্বল গোলাপি বা লাল এবং ভেতরের অংশ সাদা বা লাল রঙের। এর পাতাগুলো ড্রাগনের মতো আঁকাবাঁকা, আর এর গায়ে থাকে শিখার মতো স্পাইক, যা ফলটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলে। মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি চমৎকার স্বাস্থ্যগুণে ভরপুর। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস রয়েছে।
ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ
ড্রাগন ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি ফল। এটি কম ক্যালরি এবং উচ্চ আঁশযুক্ত হওয়ায় স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদানগুলো থাকে:
- ক্যালরি: ৫০-৬০ ক্যালরি
- জলীয় অংশ: প্রায় ৯০ গ্রাম
- প্রোটিন: ১.১ গ্রাম
- ফ্যাট: ০.১ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ১১-১৩ গ্রাম
- ভিটামিন সি: ৪ গ্রাম
- আয়রন: ০.০১ গ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম: ৬৫ গ্রাম (প্রায়)
- ফাইবার: ৩ গ্রাম
ড্রাগন ফলের স্বাস্থ্য উপকারিতা
ড্রাগন ফল শুধুমাত্র দেখতে আকর্ষণীয় নয়, এর রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। এটি ভিটামিন, খনিজ পদার্থ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ, যা শরীরের বিভিন্ন কার্যকলাপ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সাহায্য করে। আসুন জেনে নিই ড্রাগন ফলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা:
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন সি শরীরের শ্বেত রক্তকণিকার কার্যকারিতা বাড়িয়ে তুলে এবং বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে আমাদের শরীরকে প্রতিরোধ করে। নিয়মিত ড্রাগন ফল খাওয়ার ফলে শরীর শক্তিশালী থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং সর্দি-কাশি ও সাধারণ অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
২. হজমশক্তি উন্নত করে
ড্রাগন ফলে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার রয়েছে। যা হজম প্রক্রিয়া সহজ করতে এবং পেটের হজম ক্ষমতা উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফাইবার পেটের সমস্যা যেমন- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। কারণ এটি মলকে নরম করে এবং অন্ত্রের চলাচলকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া ফাইবার বা আঁশযুক্ত খাবার পেটের স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে। যা হজম প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করে তুলে।
৩. হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক
ড্রাগন ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও উচ্চমাত্রার ফাইবার হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ফলটি খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে। যা ধমনীতে চর্বি জমা প্রতিরোধ করে এবং রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখে। অন্যদিকে এটি ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৪. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর ড্রাগন ফল ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের কোষগুলোর ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে। বার্ধক্যের ছাপ দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত রাখে। ড্রাগন ফলে থাকা ভিটামিন সি ত্বকের রং উজ্জ্বল করার পাশাপাশি ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, যা ত্বককে সতেজ ও মসৃণ রাখতে সহায়ক। ড্রাগন ফল নিয়মিত খেলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যাও কমে যায়। যেমন- কালো দাগ, মলিনতা এবং শুষ্কতা। এটি প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং ত্বকের টানটান ভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৫. ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে
ড্রাগন ফলে থাকা ফ্ল্যাভোনয়েড ও ফাইটোকেমিক্যাল উপাদান শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এই ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ কোষের মেরামত প্রক্রিয়া বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা শরীরকে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।
৬. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
ড্রাগন ফলের ফাইবার রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই ফলটি শর্করার স্তর ধীর গতিতে বৃদ্ধি করে, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল থাকে। পাশাপাশি এটি ইনসুলিনের সঠিক ব্যবহার বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরের গ্লুকোজ স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৭. হাড় ও দাঁত মজবুত করে
ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। যা হাড় ও দাঁতের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম হাড়ের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং ফসফরাস হাড়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। এই দুটি পুষ্টি উপাদান একসঙ্গে কাজ করে হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে এবং দাঁতও শক্তিশালী রাখে।
বৃদ্ধ বয়সে বা যাদের ক্যালসিয়ামের অভাব থাকে, তাদের জন্য এটি একটি কার্যকরী পুষ্টিকর খাদ্য।
৮. শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে
ড্রাগন ফলে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায়, যা শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পরিবহন প্রক্রিয়া উন্নত করে। হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ানোর মাধ্যমে শরীরের শক্তির স্তর বাড়ে এবং ক্লান্তি দূর হয়। এর ফলে দৈনন্দিন কাজকর্মে বেশি শক্তি পাওয়া যায় এবং শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ড্রাগন ফলে থাকা আয়রন শরীরে শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। এটি দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক শক্তি ও বজায় রাখতে সাহয্য করে। যে কোন ধরণের শারীরিক দুর্বলতার জন্য এই ফল খুব উপকারী।
৯. মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক
ড্রাগন ফলের মধ্যে থাকা ভিটামিন বি এবং ম্যাগনেসিয়াম মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোকে শিথিল করে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহয্য করে। এই পুষ্টি উপাদানগুলো মস্তিষ্কে স্নায়ুবিক সংকেতগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে, যা উদ্বেগ এবং চাপ কমাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ড্রাগন ফল নিয়মিত খাওয়ার ফলে মানসিক স্বাস্থ্য শক্তিশালী হয় এবং মানসিক ক্লান্তি, স্ট্রেস বা চিন্তা কমে। এটি মনোযোগ বৃদ্ধি, ভালো ঘুম এবং অবসাদ দূর করতেও সাহায্য করে।
ড্রাগন ফল খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি
ড্রাগন ফল সাধারণত তাজা খাওয়া হয়। এটিকে স্লাইস করে খেতে পারেন বা স্মুদি, সালাদ কিংবা ডেজার্ট হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। অনেকেই এটি শরবত বা অন্যান্য ড্রিংকে যোগ করে খেতে পছন্দ করেন। তবে অতিরিক্ত না খেয়ে পরিমিত পরিমাণে খেলে এটি সর্বোচ্চ উপকার করবে।
ড্রাগন ফল খাওয়ায় সতর্কতা
- অতিরিক্ত খেলে পেটে সমস্যা হতে পারে।
- যাদের কিডনির সমস্যা আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে পারেন।
সব মিলিয়ে ড্রাগন ফল আমাদের স্বাস্থ্য এবং সৌন্দর্যের জন্য একটি অসাধারণ ফল। এতে থাকা ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে সহায়তা করে এবং হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে।
ড্রাগন ফল নিয়ে আরও জানতে চাইলে বা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত আরও তথ্য পেতে আমাদের ব্লগ ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেন না। আপনাদের যেকোনো প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করতে পারেন। আমরা আপনাদের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।