পাইলস (হেমোরয়েড) হলো মলদ্বারের শিরার একটি রোগ। যা ফুলে যায় এবং কখনো রক্তপাতের কারণ হয়। পাইলসের লক্ষণগুলোর মধ্যে মলদ্বারে ব্যথা, চুলকানি, অস্বস্তি, রক্তপাত এবং ফোলা অনুভূত হওয়া প্রধান। এটি অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দুই প্রকারের হতে পারে। অভ্যন্তরীণ পাইলসে সাধারণত ব্যথা কম থাকে, তবে রক্তপাত হতে পারে। বাহ্যিক পাইলসে ব্যথা বেশি হয়। পাইলস থেকে মুক্তি পেতে উচ্চ-ফাইবারযুক্ত খাবার, প্রচুর পানি পান এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। চিকিৎসার জন্য ঔষধ, ব্যান্ডিং, ইনজেকশন এবং শল্য চিকিৎসা সহ বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করলে পাইলসের জটিলতা কমানো সম্ভব। তাই উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ।
পাইলস কী?
পাইলস বা হেমোরয়েড মূলত মলদ্বারে রক্তনালির ওপর অতিরিক্ত চাপের ফলে সৃষ্ট ফোলাভাব, যা অনেক সময় মাংসপিণ্ডের মতো বের হয়ে আসে। এটি দুই ধরণের হতে পারে:
অভ্যন্তরীণ পাইলস (Internal Hemorrhoids): এটি মলদ্বারের ভেতরে অবস্থান করে এবং মলত্যাগের সময় রক্তপাত হতে পারে।
বাহ্যিক পাইলস (External Hemorrhoids): এটি মলদ্বারের বাইরে থাকে। এর প্রভাবে তীব্র ব্যথা, অস্বস্তি এবং চুলকানি হতে পারে ।
পাইলসের কারণসমূহ:
পাইলসের বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন-
- দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার জন্য
- কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য
- অতিরিক্ত ওজন হলে
- গর্ভাবস্থায়
- অতিরিক্ত ভার উত্তোলন করার জন্য
- অপর্যাপ্ত ফাইবারযুক্ত খাবারের অভাবে
পাইলসের প্রধান লক্ষণ ও সমস্যা
পাইলস হলে মলদ্বারে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিচে এই সমস্যাগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।
১. মলত্যাগের সময় রক্তপাত
পাইলসের একটি প্রধান লক্ষণ হলো মলত্যাগের সময় রক্তপাত হওয়া। এই রক্ত সাধারণত তাজা এবং উজ্জ্বল লাল রঙের , যা মলদ্বারের শিরা ফেটে গেলে হয়। এই রক্তপাত নিয়মিত হতে থাকলে তা শরীরের রক্তের অভাব ঘটাতে পারে এবং শারীরিক দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।
২. মলদ্বারে ব্যথা ও অস্বস্তি
বাহ্যিক পাইলস হলে মলদ্বারে অনেক সময় ব্যথা ও চুলকানি হয়। মলত্যাগের সময় বা পরে এটি বেশি তীব্র হতে পারে। মলদ্বারে অস্বস্তি ও ব্যথা, যা স্থায়ী হতে পারে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
৩. মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি
পাইলসের কারণে মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি হওয়া একটি সাধারণ লক্ষণ। চুলকানি হলে রোগী স্থির হয়ে বসে থাকতে পারে না এবং অনেক অস্বস্তি অনুভব করে।
৪. ফোলা বা মাংসপিণ্ড অনুভব করা
বাহ্যিক পাইলস হলে মলদ্বারের বাইরে ছোট ফোলা বা মাংসপিণ্ড অনুভূত হয়। এতে অনেক সময় তীব্র ব্যথা হয় এবং কখনো কখনো রক্তপাত হতে পারে।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য ও মলত্যাগে সমস্যা
পাইলস রোগীরা প্রায়ই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগে থাকে, যা মলত্যাগে ব্যথা ও অস্বস্তি বাড়ায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের ফলে মলদ্বারের ওপর চাপ পড়ে এবং পাইলসের সমস্যা বাড়ে।
৬. রক্তসল্পতা
দীর্ঘদিন ধরে পাইলসের কারণে নিয়মিত রক্তপাত হলে রক্তসল্পতা হতে পারে, যা শরীরে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে। রক্তসল্পতা হলে রোগী দুর্বল হয়ে যায় এবং শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়।
৭. মলদ্বারে প্রদাহ
পাইলসের কারণে অনেক সময় মলদ্বারে প্রদাহ হতে পারে, যা ব্যথা ও অস্বস্তি বাড়ায়। প্রদাহের ফলে সংক্রমণ হতে পারে এবং তীব্র ব্যথা ও হতে পারে।
৮. সংক্রমণ
বাহ্যিক পাইলসের ফলে সংক্রমণ হতে পারে, যা মলদ্বারে পুঁজ তৈরি করে। এই সংক্রমণ সময়মতো চিকিৎসা না করালে তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
৯. ফিস্টুলা
পাইলসের তীব্র সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হলে মলদ্বারে ফিস্টুলা হতে পারে, যা মলদ্বারের ভেতরে একটি অস্বাভাবিক ছিদ্র তৈরি করে। এটি সার্জারি ছাড়া নিরাময় করা সম্ভব হয় না এবং মারাত্মক ব্যথা সৃষ্টি করে।
১০. মানসিক সমস্যা
পাইলসের ব্যথা, অস্বস্তি ও রক্তপাতের কারণে রোগীরা প্রায়ই মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। রোগী সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হতে পারে এবং হতাশা অনুভব করেন। দীর্ঘস্থায়ী পাইলস হলে রোগীরা বিষণ্নতায় ভুগেন।
পাইলসের চিকিৎসা
পাইলসের চিকিৎসা বিভিন্ন ধরণের হতে পারে। যেমন-
- ঔষধ সেবন : ব্যথা ও প্রদাহ কমানোর জন্য ব্যথানাশক ও প্রদাহরোধী ঔষধ।]
- ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া: মল নরম রাখার জন্য ফাইবারযুক্ত খাবার বেশি খাওয়া উচিত। এরমধ্যে তালবিনা অন্যতম। কারন রাসূল (সঃ) ১৪০০ বছর পূর্বে তালবিনার উপকারীতার কথা বলে গেছেন।
- হাতুড়ি ও অস্ত্রোপচার: তীব্র পাইলস হলে লেজার বা অন্যান্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।
প্রতিরোধ ও সাবধানতা
পাইলস প্রতিরোধে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলা উচিত:
- সুষম ও ফাইবারযুক্ত তালবিনা খাবার গ্রহণ করা।
- দৈনিক পর্যাপ্ত পানি পান করা।
- নিয়মিত ব্যায়াম করা।
- দীর্ঘ সময় ধরে বসে না থেকে হাঁটাচলা করা।
- অতিরিক্ত ভার উত্তোলন এড়িয়ে যাওয়া।
পরিশেষে বলা যায় যে, পাইলস একটি খুবই অস্বস্তিকর এবং কষ্টদায়ক সমস্যা। তবে নিয়মিত চিকিৎসা এবং জীবনধারা পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
আমাদের আজকের ব্লগটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে, তাহলে অনুগ্রহ করে এটি আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে শেয়ার করুন। আপনার বন্ধুদের ও জানার সুযোগ করে দিন। এছাড়াও আপনারা পরবর্তীতে কোন বিষয়ে ব্লগ পড়তে চান, তা কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। আপনাদের মতামত আমাদের পরবর্তী কনটেন্ট তৈরি করতে ও লিখতে অনুপ্রেরণা জোগাবে।