মেথি (Fenugreek) আমাদের অতি পরিচিত একটি রান্নার মসলা ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন গাছ। আয়ুর্বেদিক এবং কবিরাজি চিকিৎসা শ্রাস্ত্রে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাচীনকাল থেকেই মেথির ব্যবহার লক্ষ করা যায়। মেথি তে রয়েছে অসংখ্য পুষ্টি উপাদান। আমরা অনেকেই মেথির পুষ্টি গুণাগুণ সম্পর্কে তেমন জানিনা। বিশেষ করে পুরুষদের জন্য রয়েছে মেথির আলাদা উপকারিতা। টেস্টোস্টেরন উৎপাদন কমে যাওয়ায় অনেক পুরুষই বিবাহিত জীবনে সুখী নন। এমন পুরুষদের জন্য মেথি একটি মহৌষধ হিসেবে বিবেচিত। এর বাইরেও রয়েছে মেথির আরো অনেক উপকারিতা।
আজকের এই ব্লগে পুরুষদের এমন কয়েকটি প্রয়োজন ও মেথির উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। সেই সাথে জানবো সঠিক উপায়ে মেথি খাওয়ার নিয়ম। তাই আজকের ব্লগটি পুরুষদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
Table of Contents
Toggleপুরুষদের জন্য মেথির কিছু উপকারিতা
১) যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি
- মেথি পুরুষদের সেক্স হরমোন টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে পুরুষদের যৌন স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়।
- স্বপ্নদোষ সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে নিয়মিত মেথি সেবনে।
- এছাড়াও টেস্টোস্টেরন এর স্তরের উন্নতি হয়। যা শারীরিক কর্মক্ষমতা এবং মনের উদ্দীপনা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
- আপনার যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আপনি চাইলে মেথির পাশাপাশি FIT FOR LIFE এর গাঁজানো রসুন মধু ও আলুবোখারার ও রসুনের আচার খেতে পারেন।
২) শক্তি ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি
- মেথি আমাদের শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে এবং কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আমাদের ক্লান্তি এবং দুর্বলতা দূর করতে এটি বেশ কার্যকর।
- যারা নিয়মিত জিম বা ব্যায়াম অনুশীলন করেন, তাদের জন্য মেথি অতিরিক্ত শক্তি প্রদান করে এবং শরীরের সহনশীলতা বাড়ায়।
- শক্তি ও কর্মক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আপনি মেথির পাশাপাশি কালোজিরা ফুলের মধু নিয়মিত ব্যবহার করলে ভালো একটি ফলাফল পাবেন, ইন শা আল্লাহ্।
৩) হজমশক্তি বৃদ্ধি
- মেথি হজমশক্তি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক এবং বদহজম দূর করতে সহায়ক।
- যেহেতু মেথি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, তাই এটি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্যান্য হজমজনিত সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
- হজমশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গাঁজানো রসুন মধু ও হলুদের থাকা কারকুমিন হজমশক্তি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা রাখে। তাই হজমশক্তি বৃদ্ধির জন্য মেথির পাশাপাশি নিয়মিত গাঁজানো রসুন মধু ও ১০০% প্রাকৃতিক হলুদ নিয়মিত খাওয়া উচিৎ।
৪) কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
- মেথি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমাতে সাহায্য করে এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) এর মাত্রা বাড়ায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়।
- পুরুষদের মধ্যে যাদের উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি একটি প্রাকৃতিক সমাধান হিসেবে কাজ করে।
- যেসকল পুরুষরা উচ্চ কোলেস্টরলের সমস্যায় ভুগছেন তারা মেথির পাশাপাশি চিয়া সিড ও স্পেশাল সিডমিক্স নিয়মিত খাওয়া উচিৎ।
৫) রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে মেথি দারুণ প্রাকৃতিক উপাদান এবং এটি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক।
- মেথি তে বিদ্যমান ফাইবার রক্তে শর্করা শোষণ প্রক্রিয়া ধীর করে এবং ইনসুলিনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।
৬) চুল ও ত্বকের যত্ন
- মেথি চুল পড়া প্রতিরোধে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় উপকারী। মেথির অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণের কারণে চুলের স্বাস্থ্য ও ত্বক ভালো থাকে।
- চুলে মেথির ব্যবহার চুলের বৃদ্ধি এবং খুশকি সমস্যা সমাধানে কার্যকর।
৭) ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক
মেথির মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ফাইটোস্টেরল শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যালের প্রভাব কমায়, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, মেথি কোলন ক্যানসার এবং প্রোস্টেট ক্যান্সার প্রতিরোধে দারুণ কার্যকরী।
৮) ওজন নিয়ন্ত্রণে
মেথি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে এবং বিপাকক্রিয়া বাড়িয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। মেথি ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় পেট ভরাট রাখে এবং অতিরিক্ত খাবারের ইচ্ছা কমায়। যা ওজন কমাতে সহায়ক।
৯) মস্তিষ্কের বিকাশে
মস্তিষ্কের বিকাশে মেথির কার্যকারিতা উল্লেখযোগ্য। নিয়মিত মেথি সেবন করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, সহজেই কোনো কিছু আয়ত্তে চলে আসে এবং দীর্ঘসময় মস্তিষ্কে গেঁথে থাকে।
এর বাইরেও মেথির আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে শুরু করে শারীরিক স্বাস্থ্য উন্নত করার ক্ষেত্রে মেথির রয়েছে প্রাকৃতিক ঔষধি গুণ। মস্তিস্কের বিকাশের জন্য তালবিনাও খুবই ভালো কাজ করে। তালবিনার বিশেষ উপকারিতা হচ্ছে মেজাজ নিয়ন্ত্রনে রেখে মস্তিস্কের বিকাশ এবং যাদের ঘুমের সমস্যা রয়েছে তাদেরও নিয়মিত তালবিনা খাওয়া উচিৎ।
তালবিনা খাওয়া উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন
মেথি খাওয়ার নিয়ম
রান্নাবান্নায় মেথি মশলা হিসেবে সুঘ্রাণ ছড়ায়। তবে মেথি রান্না ছাড়াও খাওয়া যায়। আর এক্ষেত্রেই রয়েছে মেথির যত ঔষধি গুণ। তবে মেথি খাওয়ার কিছু নিয়ম আছে। একেক প্রয়োজনে একেকভাবে মেথি খেতে হয়।
১) মেথি ভিজিয়ে খাওয়া
- রাতে এক চামচ মেথি এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে সেই মেথি চিবিয়ে খান এবং মেথি মিশ্রিত পানি পান করুন।
- এইভাবে মেথি খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ, হজমশক্তি বৃদ্ধি এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
২) মেথি চিবিয়ে খাওয়ার নিয়ম
- প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক চা চামচ মেথির বীজ চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও মেথির বীজ গুঁড়ো করে দুধের সাথে মিশিয়ে অথবা পানিতে মিশিয়ে খাওয়া যায়। মেথির পাতা শাক হিসেবে রান্না করেও খাওয়া যায়। মেথির গাছ, ফল, পাতা সবকিছুতেই ঔষধি গুণ রয়েছে।
- মেথি চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে, হজমশক্তি বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
৩) ওজন কমাতে মেথি খাওয়ার নিয়ম
ওজন কমাতে মেথি বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যেতে পারে।
মেথি চা : দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে মেথি চা দারুণ উপাদেয়। গরম পানিতে মেথি গুঁড়ো, মশলার মধ্যে দারুচিনি, আদা মিশ্রিত করে ৫-১০ মিনিট ফুটিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করুন।
মেথি ও মধু চা : মেথি চায়ের সাথে শুধু মশলার জায়গায় মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। চাইলে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস যোগ করতে পারেন। নিয়মিত মেথি ও মধুর চা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারলে দ্রুত ওজন কমবে।
মেথির গুঁড়ো খাওয়া : সরাসরি মেথির গুঁড়ো খাওয়ার জন্য প্রথমে মেথি কড়াইয়ে হালকা করে ভেজে নিতে হবে। তারপর গুঁড়ো করতে হবে। এই মেথি গুঁড়ো সরাসরি খাওয়া যেতে পারে আবার পানির সাথে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে। আমাদের শরীরে কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে এটি কাজ করে।
ওজন কমাতে আপনি মেথির পাশাপাশি তালবিনাও নিয়মিত খেতে পারেন।
৪) মেথির পেস্ট বানিয়ে খাওয়া
মেথি ভিজিয়ে তা পেস্ট করে মধু বা দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেলে এটি যৌন স্বাস্থ্য ও শক্তি বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
মেথি তে রয়েছে অসংখ্য পুষ্টি উপাদান এবং মেথির এতো বেশি উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। আমরা সামান্য সমস্যাতেই ডাক্তারের কাছে দৌড়াই। অথচ যার সমাধান আমাদের আশেপাশেই প্রাকৃতিকভাবে রয়েছে। মেথি এমনই একটি প্রকৃতির আশীর্বাদ। তবে অবশ্যই নিয়ম মেনে মেথি সেবন করতে হবে। এক্ষেত্রে চিকিৎসক এর সাথে পরামর্শও করা যেতে পারে।