বিড়ালের নখের আঁচড়ে কি কি সমস্যা হয়?

বিড়াল বর্তমানে অতি সুপরিচিত একটি প্রাণী। বর্তমানে বিড়াল পছন্দ করেন না এমন মানুষ পাওয়াই দুষ্কর। ছোট বড় সবার কাছেই পোষা প্রাণী হিসেবে বিড়াল অতি সমাদৃত। ইদানীং শহরের বাসা বাড়িতে বিড়াল পালন ব্যাপকহারে বেড়েছে। ছোট ছোট বাচ্চাদের খেলার সঙ্গী বিড়াল। যেহেতু মানুষের সাথেই প্রায় সময় বিড়ালের বসবাস, তাই যেকোন সময় বিড়ালের নখের আঁচড় লাগতেই পারে। বর্তমানে সবার একটা কমন প্রশ্ন হয়ে গেছে বিড়ালের নখের আঁচড়ে কি কোন সমস্যা হয়?

বিড়ালের নখের আঁচড়ে কি কি সমস্যা হয়?

বিড়ালের নখের আঁচড়ে কি কি সমস্যা হয়?

আজকের এই ব্লগটি পড়ার পর এই ব্যাপারে আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন এবং যত দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে দূর হয়ে যাবে।

 

বিড়ালের নখের আঁচড়ে কি কি সমস্যা হয়?

 

১) ক্যাট স্ক্র্যাচ ডিজিজ (Cat Scratch Disease – CSD)

  • এটি মূলত এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়, যার নাম বার্টোনেলা হেনসেলে ( Bartonella henselae)। বিড়ালের নখের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে প্রবেশ করে।
  • এই রোগে আক্রান্ত হলে সাধারণত আঁচড়ের স্থানে ফুলে যায় এবং লালচে ভাব দেখা দেয়। এরপর ব্যাকটেরিয়া দ্বারা প্রায় ৩-১৪ দিনের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে শুরু করে।
  • এই রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ক্লান্তি অনুভূত হওয়া এবং লিম্ফ নোডে ফোলাভাব। শিশু এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন ব্যক্তিদের জন্য এটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

 

২) ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন বা সংক্রমণ

  • বিড়ালের নখে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে, যেমন স্ট্যাফিলোককাস এবং স্ট্রেপ্টোককাস। আঁচড়ের মাধ্যমে ত্বকে এগুলোর সংক্রমণ হলে ফোলাভাব, লালচে ভাব সহ প্রচন্ড ব্যথা হতে পারে।
  • এক্ষেত্রে সংক্রমণটি বেশি  হলে এটি সেলুলাইটিস বা ত্বকের গভীরে সংক্রমণের কারণ হতে পারে। সঠিক চিকিৎসা না করলে এটি আরো গভীরে গিয়ে হাড় পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে এবং হাড়ের ক্ষতি করতে পারে।

 

৩) টিটেনাস

  • বিড়ালের আঁচড়ে সরাসরি টিটেনাস ছড়ায় না। তবে আঁচড়ের কারণে ক্ষতস্থানে টিটেনাসের ব্যাকটেরিয়া (ক্লস্ট্রিডিয়াম টিটানি) প্রবেশের ঝুঁকি বাড়ে।
  • টিটেনাসে আক্রান্ত হলে ঘাড়ের পেশি সংকুচিত হয়ে শক্ত ভাব এবং শ্বাসকষ্টের মতো গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয়। যা অনেক সময় মরণঘাতী হতে পারে।
  • বিশেষ করে যদি কেউ টিটেনাসের টিকা না নিয়ে থাকেন, তাহলে তাদের জন্য টিটেনাসের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে।

 

৪) ফাঙ্গাল ইনফেকশন

  • বিড়ালের নখে বিভিন্ন ধরনের ফাঙ্গাস থাকতে পারে। আঁচড়ের মাধ্যমে এগুলো ত্বকে সংক্রমণ ঘটায়, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রিংওয়ার্ম বা চর্মরোগ।
  •  সংক্রমণ হলে আঁচড়ের স্থানে চুলকানি, লালচে গোল দাগ এবং ত্বক রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে এটি খুব দ্রুত শরীরের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে এবং অস্বস্তির কারণ হয়।

 

৫) এলার্জি এবং প্রদাহ

  • অনেক সময় বিড়ালের নখে থাকা জীবাণু বা অন্য পদার্থের কারণে এলার্জির সমস্যা হয়। আঁচড়ের পরে ত্বকে লালচে ভাব, চুলকানি,ফোলাভাব কিংবা এলার্জির লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে।
  • যদি আঁচড়ের স্থানে প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন থাকে এবং ফুলে যায়, পরবর্তীতে এটি জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

 

৬) সেপসিস বা রক্ত সংক্রমণ

  • যদি আঁচড়ের মাধ্যমে সংক্রমণ রক্ত পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তাহলে সেপসিস হতে পারে। এটি খুবই  বিপজ্জনক অবস্থা, কেননা রক্তে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করলে পুরো শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।
  • সেপসিসে আক্রান্ত হলে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং তীব্র শারীরিক দুর্বলতা অনুভূত হয়। এছাড়াও শ্বাসকষ্ট হয়,  ব্লাড প্রেসার দ্রুত কমে যেতে পারে। যা প্রাণঘাতী হতে পারে এবং এক্ষেত্রে জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

 

৭) লিম্ফডেনাইটিস

  • লিম্ফ নোডগুলো সংক্রমিত হয়ে ফুলে গেলে তাকে বলা হয় লিম্ফডেনাইটিস। বিড়ালের আঁচড়ে কখনো কখনো এটি হতে পারে।
  •  লিম্ফডেনাইটিস এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে ঘাড়, বাহুর নিচে ও কুঁচকি ফুলে যাওয়া। এছাড়াও এসব জায়গায় ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

 

এই সকল সমস্যা ছাড়াও, বিড়ালের নখের আঁচড়ে আর কি কি সমস্যা হয়? 

 

কিছু সমস্যা মাঝেমাঝে দেখা দিতে পারে। যেমন-

  • ওজন হ্রাস
  • ক্ষুধামন্দা
  • র‍্যাস
  • হাড়ের জোড়ায় ব্যথা
  • হঠাৎ হঠাৎ ঠান্ডা অনুভূত হওয়া
  • শরীরের পশ্চাৎ অংশে ব্যথা
  • পেটে ব্যথা
  • ঠোঁটে সংক্রমণ
  • দীর্ঘমেয়াদী জ্বর

 

বিড়ালের আঁচড় সংক্রমণ পর্যন্ত গেলে তা ক্লিনিক্যালি নির্নয় করা হয়ে থাকে। পলিমারেজ চেইন রিয়্যাকশনের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ শনাক্ত করে নিশ্চিত হওয়া যায়। এটি তেমন মারাত্মক না হলেও কখনো কখনো অনেক জটিলতার জন্ম দেয়।  যেমন ব্যাকটেরিয়া মস্তিষ্কে পৌঁছে এনসেফালোপ্যাথি, চোখের রেটিনা তে পৌঁছে নিউরোরেনাইটিস ও পেরিনুড অকুলোগ্লান্ডুলার সিন্ড্রোম দেখা দিতে পারে

 

বিড়ালের আঁচড় কে কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিৎ না। গবেষণা বলছে, ৪০ শতাংশ বিড়াল কোন না কোনভাবে তাদের শরীরে ব্যাকটেরিয়া বহন করে। আর ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমণ হলে অনেক খারাপ কিছু ও হতে পারে। তাই আঁচড়ের স্থানে সাবান দিয়ে ভালো মতো ধুয়ে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়াটাই শ্রেয়।

 

 

Related Posts

Shopping cart
Sign in

No account yet?

Start typing to see products you are looking for.
Shop
0 Wishlist
0 items Cart
My account